×

আন্তর্জাতিক

ভারতের নির্বাচনে ইভিএম চায় না বিরোধীরা

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০১৮, ০৯:১৯ পিএম

ভারতের নির্বাচনে ইভিএম চায় না বিরোধীরা
বাংলাদেশে আগামী নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে কি না, সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশন যখন খুব শিগগিরি সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে, তখন পাশের দেশ ভারতে কিন্তু ইভিএমের বিরোধিতা ক্রমেই আরও তীব্র হচ্ছে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, কংগ্রেসসহ অনেকগুলো বিরোধী দল ভারতের নির্বাচন কমিশনের কাছে জানিয়ে এসেছে, তারা চায় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ইভিএম বাতিল করে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে নির্বাচনের পুরনো পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়া হোক। বিজেপি অবশ্য ইভিএম বজায় রাখারই পক্ষপাতী। আর ভারতের নির্বাচন কমিশন সব দলেরই মতামত খতিয়ে দেখবে বলে কথা দিয়েছে। গত দু-চার বছরে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ইভিএম নিয়ে কারসাজির অজস্র অভিযোগ তুলেছে একাধিক বিরোধী দল। এমনকী যন্ত্র খারাপ হলেও ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে সব ভোটই গিয়ে পড়েছে বিজেপির ঝুলিতে, কংগ্রেস বা আম আদমি পার্টি বহুবার এমন অভিযোগও করেছে। এবারে নির্বাচন কমিশনের ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকে গিয়ে কংগ্রেসসহ একাধিক বিরোধী দল দাবি জানিয়েছে ইভিএম পদ্ধতিটাই বাতিল করে দেয়া হোক। কংগ্রেসের মুখপাত্র অভিষেক মনু সিংভি বলছেন, ‘শুধু আমরাই নই - দেশের অন্তত ৭০ শতাংশ রাজনৈতিক দলই মনে করে যত দ্রুত সম্ভব কাগজের ব্যালট আবার ফিরিয়ে আনা উচিত। এই দাবিতে আমরা অনড় থাকব - কারণ ইভিএমের ওপর আমাদের বিশ্বাস টলে গেছে।’ ‘সম্প্রতি কৈরানা আসনের উপনির্বাচনেও দেখা গেছে প্রায় ১৩ শতাংশ মেশিন খারাপ বেরিয়েছে। আমরা জানতে চাই, কারা এগুলো সারায়, কীভাবেই বা সারায়?’- প্রশ্ন তুলছেন তিনি। কংগ্রেস ছাড়াও ইভিএম বাতিলের দাবি জানাচ্ছে সমাজবাদী পার্টি, বসপা বা তৃণমূল কংগ্রেসের মতো আরও অনেক দল। তৃণমূলের সিনিয়র এমপি কাকলি ঘোষদস্তিদার বিবিসিকে বলছিলেন ইভিএম নিয়ে ঠিক কোথায় তাদের আপত্তি। তার কথায়, ‘আমাদের এমন একটা সন্দেহ তৈরি হয়েছে যে যখন ইভিএমে ভোট রেকর্ড করা হচ্ছে তখন ভোটারের মতামত বোধহয় সঠিকভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে না। আর সে কারণেই আমরা ব্যালট পেপার ফিরিয়ে আনার কথা বলেছি।’ ‘আর তাছাড়া পশ্চিমা দুনিয়ার কোনও আধুনিক ও উন্নত দেশেই তো ইভিএম ব্যবহার করা হয় না। হয় না, কারণ সেখানে ম্যানিপুলেশন বা কারসাজির অবকাশ থাকে। তারা যদি ব্যালট পেপারে ভোট করাতে পারে, তাহলে আমাদেরও ব্যালটে ফিরে যেতে অসুবিধা কোথায়?’- বলছিলেন কাকলি ঘোষদস্তিদার। কিন্তু ভারতে গত প্রায় কুড়ি বছর ধরে ভোটে ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে - নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ করে তোলার পেছনেও অনেকেই এতদিন ইভিএমকে কৃতিত্ব দিয়ে এসেছেন। হঠাৎ সেই ইভিএমকে ঘিরে এই যে সন্দেহের ছায়া তৈরি হয়েছে, তার কতটা ভিত্তি আছে? সাবেক আমলা ও পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন প্রধান নির্বাচনী কর্মকর্তা মীরা পান্ডে বলছিলেন, ‘যতই হোক, ইভিএম একটা যন্ত্র এবং আমি টেকনিক্যাল বিশেষজ্ঞ নই যে বলতে পারব ওটাতে কোনও গন্ডগোল হচ্ছে কি হচ্ছে না!’ ‘তবে এটুকু নিশ্চয় বলতে পারি ইভিএমের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে অনেক সহজ বা স্বচ্ছভাবে পরিচালনা করা যায়। আগে যে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোট করানো হত তাতে কিন্তু গন্ডগোল করানোর অনেক বেশি সুযোগ থাকত।’ ‘ইভিএমে সেটা করা মুশকিল - কারণ এখানে বুথ দখল করেও যদি কেউ মেশিনে একাধারে বোতাম টিপে যেতে থাকে তাহলে পরে মেশিনের মেমোরি চিপ থেকে কিন্তু ধরে ফেলা সম্ভব কখন, কতগুলো ভোট পড়েছে। আর সেই জায়গায় সব ব্যালট পেপারই দেখতে এ রকম, কাজেই বাক্সে কোনটা সঠিক ভোট আর কোনটা ফলস ভোট, তা ধরা খুব মুশকিল’-বলছিলেন পান্ডে। ফলে ব্যালট পেপার ফিরিয়ে আনলে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বুথ দখল, ছাপ্পা ভোট ও রিগিং-ও আবার প্রবলভাবে ফিরে আসবে, এই আশঙ্কাও আছে অনেকের। তবে ভারতের নির্বাচন কমিশন এ ব্যাপারে এখনই কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ওপি রাওয়াত বলছেন, ‘কয়েকটা দল ইভিএম নিয়ে তাদের আপত্তির কথা তুলেছে ঠিকই - এখন কমিশন তাদের মতামত বিবেচনায় নিয়ে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছবে।’ ভারতে শেষ পর্যন্ত কী হবে তা এখনও স্পষ্ট নয় ঠিকই, কিন্তু এই বিতর্কের ফলে প্রতিবেশী বাংলাদেশে ইভিএম চালু করার যে কোনও উদ্যোগও যে অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ হবে- তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App