×

জাতীয়

বদলে যাচ্ছে উপকূলীয় রাখাইনদের জীবনচিত্র

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০১৮, ০৩:৪৪ পিএম

বদলে যাচ্ছে উপকূলীয় রাখাইনদের জীবনচিত্র
প্রায় ৩শ বছর আগে মিয়ানমার ও আরাকানের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে পটুয়াখালীর উপকূলীয় রাঙ্গাবালী, কলাপাড়া ও তালতলী উপজেলার বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল কেটে বসতি গড়ে তোলে এখানকার আদিবাসী রাখাইন সম্প্রদায়। পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার সমুদ্র উপকূলীয় হিংস্র জীবজন্তু এবং অরণ্য ভূমিকে বাসযোগ্য, চাষাবাদের উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলে তারা। রাখাইনদের আগমনের সময়কাল থেকে এখন পর্যন্ত হিংস্র জীবজন্তু ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে জীবনযুদ্ধে টিকে আছে। একসময় একক আধিপত্য ছিল রাখাইনদের। এখন আর সেই আধিপত্য নেই। একসময়ের সম্পদ ও প্রভাবশালী রাখাইনরা তাদের আবাদভূমি ছেড়ে মিয়ানমার চলে যাওয়া, বন্যায় প্রাণহানি এবং সমুদ্রের করাল গ্রাসে কমতে থাকে রাখাইন আদিবাসীদের জনসংখ্যা। তবে সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে গেছে উপকূলীয় রাখাইনদের জীবনচিত্র। ভাষা, শিক্ষা, পোশাক, চলাফেরা ও সামাজিকতায়ও এসেছে পরিবর্তন। পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার আদিবাসীদের টিকিয়ে রাখতে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ, আবাসন সমস্যার সমাধানসহ জীবনমান উন্নয়নে বর্তমান সরকার কাজ করছে। আদিবাসী রাখাইনদের কৃষ্টি-কালচার, সংস্কৃতি, প্যাগোটাসহ আদি ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করছে বিভিন্ন সংস্থা। আশির দশকে রাখাইনদের বসবাস ছিল চোখে পড়ার মতো। সেই সংখ্যা এখন হতাশাজনক। রাখাইনদের নামানুসারে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার পাড়াগুলোর নামকরণ করা হলেও রাখাইন বসবাস না থাকায় বেশির ভাগ পাড়ার নামই এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। হুইচানপাড়া (বর্তমান হোসেনপাড়া) দিয়ার আমখোলাপাড়া (বর্তমান তাহেরপুর) কালাচানপাড়া (বর্তমান আলীপুর) উল্লেখযোগ্য। ১৭৯৪ খ্রিস্টাব্দে আরাকানের স্বাধীনতার যুদ্ধে পরাজিত হয়ে নানা সংকট ও জানমাল নিরাপত্তার জন্য আরাকান থেকে সমুদ্রপথে রাখাইনদের প্রথম আগমন ঘটে পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলায়। কৃষিজমি আবাদ, সাগরে মাছ ধরা এবং কুঁচিয়া, কাঁকড়াসহ বন্য পশুপাখি শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করাই ছিল আদিবাসী রাখাইনদের মূল পেশা। স্বদেশ ত্যাগ করলেও তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য ধরে রাখতে তারা সচেষ্ট ছিল। কলাপাড়া, রাঙ্গাবালী, তালতলী ও কুয়াকাটা পৌরসভাসহ পটুয়াখালী জেলায় প্রায় তিন হাজার রাখাইন পরিবার বসবাস করছে। আদিবাসীদের যারা আছেন তাদের মধ্যে বেশির ভাগই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। খাদ্য সংকটের পাশাপাশি নিজস্ব ঐতিহ্য ধরে রাখতে তারা ব্যর্থ হচ্ছেন। নিজস্ব সংস্কৃতি ও মাতৃভাষা প্রসারে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। পাশাপাশি রয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের জবরদখল। গত দুই দশকে মিথ্যা মামলা এবং জবরদখলে অন্তত দুই শতাধিক রাখাইন পরিবার ভিটে ছাড়তে বাধ্য হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। ভিটেমাটি রক্ষা করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের উদাসীনতার অভাব রয়েছে বলে আদিবাসী নেতারা অভিযোগ করছেন। নানা প্রতিক‚লতায় টিকে থাকতে না পেরে কেউ কেউ পাড়ি দিয়েছেন আপন দেশ আরাকানে। যারা আছেন তাদেরও থাকতে হচ্ছে শঙ্কায়। কলাপাড়া উপজেলার কেরানীপাড়ার উচাচিং মাতুব্বর, লুমা মগনী, মংথায়েসহ রাখাইন নেতাদের সঙ্গে কথা বললে এ তথ্য দেন তারা । পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক ড. মাছুমুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, রাখাইনদের ভাষা শিক্ষা ও চর্চার জন্য কুয়াকাটায় একটি কালচারাল একাডেমি রয়েছে। আরো একটি কালচারাল সেন্টার তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে এ বিষয়ে আলোচনা চলছে। রাখাইনদের জীবনমান উন্নয়নে তাঁতসামগ্রীসহ ব্যবসা-বাণিজ্যে সুযোগ তৈরিতে রাখাইন মার্কেট গড়ে তোলা এবং আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে ইতোপূর্বে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App