×

জাতীয়

নকলের ভিড়ে আসল হিজড়া চেনা দায়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০১৮, ০২:০৮ পিএম

নকলের ভিড়ে আসল হিজড়া চেনা দায়
তৃতীয় লিঙ্গ বা থার্ড জেন্ডার হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত হিজড়ারা একসময় সমাজে অসহায় হিসেবে মানুষের কাছে হাত পেতে সাহায্য নিত। কিন্তু এখন আর সে দৃশ্য দেখা যায় না। এখন যেন পেশাদার চাঁদাবাজের ভ‚মিকায় রাজধানী চষে বেড়াচ্ছে হিজড়া বাহিনী। ভিকটিমরা কেউ আত্মসম্মানের ভয়ে তাদের কিছু বলে না। এমনকি পুলিশও তাদের বিরুদ্ধে নিশ্চুপ ভ‚মিকা পালন করে আসছে। এই সুযোগে কিছু মানুষ হিজড়া সেজে আরো বেপরোয়াভাবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পুরো রাজধানীসহ সারাদেশে। এরা চাঁদা না পেলে যেকোনো ধরনের অপরাধ করতে পিছপা হচ্ছে না। শুধু রাজধানীতেই ৪০ জন গুরু মোটা অঙ্কের টাকার লোভ দেখিয়ে হিজড়া তৈরি করছে বলে জানা গেছে। ফলে দিন দিন যেমন হিজড়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে তেমনি নকলের ভিড়ে আসল হিজড়াদের চেনা দায় হয়ে গেছে। এদিকে, রাজধানীতে বাসে চাঁদা তোলা নকল হিজড়াদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য গত ১০ আগস্ট, শুক্রবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে আসল হিজড়াদের একটি প্রতিনিধি দল। এসময় শিখা হিজড়া জানায়, আসল হিজড়ারা বাসে বাসে, সিগন্যালে এবং কোনো পরিবহনে টাকা তোলে না। কিন্তু মাথায় নকল চুল লাগিয়ে, মেকআপ করে একটা শ্রেণির লোক ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় গাড়িতে উঠে মানুষের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে। তারা আসলে হিজড়া না। তারা হিজড়া সেজে এসব করে। এর দুর্নাম আসল হিজরাদের সইতে হয়। ফলে পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় আসল হিজরাদেরই হয়রানি করে। নকল হিজড়াদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, নকল হিজড়াদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ব্যবস্থা নেবে। আসল হিজড়াদের জন্য পরিকল্পনা অনুযায়ী সরকার কাজ করছে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, হিজড়াদের জন্য একটি রূপরেখা করা হয়েছে। তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চাইলে সবধরনের সহযোগিতা করা হবে। ওইদিনই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে যাওয়ার পর রাজধানীর বিজয়সরণি এলাকার সিগন্যালে বাসে চাঁদা তোলার সময় ৩ নকল হিজড়াকে ধাওয়া করে ধরে ফেলে আসল হিজড়ারা। এসময় ওই ৩ হিজড়া ক্ষমা চেয়ে তাদের কাছ থেকে ছাড়া পায়। আগামীতে আর কখনো গাড়ি ও সিগন্যালে দাঁড়িয়ে এভাবে চাঁদা তুলবে না বলেও জানান তারা। এরপর ওই তিন হিজড়াকে ছেড়ে দেয়া হয়। গত জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের শরিফুল ইসলাম (২০) ও একই উপজেলার ঘোপপাড়া গ্রামের কাজল (২২) নামে দুই যুবককে অজ্ঞান করে হিজড়া বানানোর অভিযোগ পাওয়া যায়। সূত্র জানায়, সরকারি চাকরির প্রলোভন আর হিজড়া সরদারদের আয় বাড়ানোর প্রচেষ্টাÑ এ দুইয়ের মারপ্যাচে দেশে বাড়ছে হিজড়াদের সংখ্যা। রাজধানী এবং এর আশপাশে বিভিন্ন ক্লিনিকে পুরুষের যৌনাঙ্গ কেটে বানানো হচ্ছে হিজড়া। এর মাধ্যমে হিজড়া সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। পুরুষ থেকে হিজড়ায় রূপান্তরিত একাধিক হিজড়া জানিয়েছেন, এতে খরচ বাবদ ক্লিনিক প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার ও দালালরা ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা নেয়। ওই সেন্ডিকেটের গুরুরা নকল হিজরাদের চাঁদাবাজিতে নামিয়ে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধুমাত্র রাজধানীতে হিজড়াদের ৬৫ জন গুরু রয়েছে। যাদের রয়েছে আলাদা আলাদা হিজড়া সদস্য। এলাকাভিত্তিক এই হিজড়ারা চাঁদাবাজি করে থাকে। চাঁদাবাজি করে অনেক গুরু কোটিপতি হয়ে গেছে। এরবাইরে রয়েছে এদের মধ্যে আরো ৪০ জন গুরু। যারা স্বাভাবিক মানুষকে হিজড়া তৈরি করে রাস্তায় নামায়। দেখতে হুবহু আসল হিজড়া। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তাদের হিজড়া তৈরি করা হয়েছে। তবে তৈরি করা এসব হিজড়াদের রেটও বেশি। তারা মানুষের সঙ্গে খারাপ আচরণও বেশি করে। এরা শুধু চাঁদাবাজিই করছে না, কেউ কেউ অস্ত্র, মাদক ও পতিতাবৃত্তির সঙ্গেও জড়িত। জানা গেছে, বেপরোয়া ও নকল হিজড়া তৈরির পেছনে কাজ করছেন, দয়াগঞ্জের মুচকি আনরি ও কেচকি আনরি। উত্তরার সারিকা, কচি, পিংকি, রাহেলা, নাজমা অঞ্জনা, কাকলি, আল্?হাদি, সোনিয়া। মগবাজারে স্বপ্না, সজিব। মানিকনগরে আবুল, বাসাবোর অরুণা। শাখারিবাজারে কাল্লু, মেজবাহ, মায়া। লালবাগের কালা, হাকিম, রিয়া। রায়েরবাজারে সুমী, পিকুলি, মিরপুরে মাস্টার রনি, আনরি, শাহজাদি, রাখি। মোহাম্মদপুরে হামিদ। ফকিরাপুলে সুইটি। শাহজানপুরে জয়নাল। উত্তর বাড্ডার পলি। মেরুল বাড্ডার শামীমা। কুড়িলের পিংকি, রামপুরার রনি হাজি অন্যতম। এদের গ্রæপের অনেকেই দিনে হিজড়া, রাতে পতিতা ও ছিনতাই করে বেড়ায়। তাদের বেপরোয়া কাজে অনেক সময় আসল হিজড়ারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। হিজড়াদের স্বাস্থ্য অধিকার নিয়ে কাজ করা বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির পরিচালক ফসিউল আহসান জানান, এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি দ্রæত লাভবান হওয়ার জন্য স্বাভাবিক মানুষকে হিজড়া সাজিয়ে রাস্তায় নামিয়ে দেয়। কারণ তাদের ধারণা হিজড়াদের প্রতি মানুষের অন্যরকম এক মানসিকতা কাজ করে। টাকা চাইতে এলে টাকা দিয়ে যত তাড়াতাড়ি বিদায় করা যায় সেটাই ভাবে। এ ছাড়া হিজড়াদের ক্ষেত্রে আইনের অনেক ফাঁকফোকড় রয়েছে। তাই তারা অপরাধ করতে ভয় পায় না। এক প্রশ্নের উত্তরে ফসিউল বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাই নকল হিজড়াদের রুখতে হবে এটা এনজিও সংস্থার কাজ নয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপ-কমিশনার মো. মাসুদুর রহমান বলেন, কেউ-ই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। কেউ হয়রানির শিকার হয়ে অভিযোগ করলে আমরা ব্যবস্থা নেব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App