×

জাতীয়

পুঁজি সংকটের মধ্যেও চামড়া কেনার প্রস্তুতি ব্যবসায়ীদের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০১৮, ০৪:০৫ পিএম

পুঁজি সংকটের মধ্যেও চামড়া কেনার প্রস্তুতি ব্যবসায়ীদের
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পাচারের শঙ্কা আর নানা উৎকণ্ঠা নিয়ে চামড়া কেনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নাটোরের চামড়া বাজারের ব্যবসায়ীরা। গত কয়েক বছর ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে ৬০-৭০ কোটি টাকা পাওনা না পাওয়ায় পুঁজি সংকটে পড়েছেন নাটোরের চামড়া বাজারের ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া ট্যানারি মালিকদের বেঁধে দেয়া দামের অতিরিক্ত দাম দিয়ে চামড়া কেনার পর আন্তর্জাতিক বাজার মন্দা হওয়ায় অবিক্রীত চামড়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা। এভাবে চলতে থাকলে প্রতিবেশী দেশে চামড়া পাচারের আশঙ্কাও করছেন তারা। নাটোর শহরের চকবৈদ্যনাথ এলাকায় নাটোর-রাজশাহী মহাসড়কের দুই পাশে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়ার বাজার অবস্থিত। সরেজমিন এই চামড়া বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে এখানকার চামড়ার আড়তগুলোতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। চামড়া ভালোভাবে প্রক্রিয়াজাত করে রাখতে আড়তগুলো মেরামত, রং ও ধোয়া-মোছা করা হচ্ছে বেশ জোরেশোরেই। প্রতি বছর শুধুমাত্র কোরবানির ঈদের সময়েই দেশের মোট চামড়ার ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ চামড়া এই বাজার থেকে ঢাকার ট্যানারিগুলোতে সরবরাহ করা হয়। দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা এবং খুলনা, যশোরসহ বিভিন্ন স্থান থেকে গরু ও ছাগলের চামড়া নাটোরের চামড়া বাজারে আমদানি করা হয়। পরে এসব চামড়া ঢাকার ট্যানারিগুলোতে সরবরাহ করা হয়। এবার রাজধানীর বাইরে ট্যানার্স এসোসিয়েশন গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ৩৫-৪০ এবং খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৩-১৫ টাকা নির্ধারণ করেছে। প্রতি বছর ট্যানারি মালিকদের বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত দামে চামড়া কেনায় বিপাকে পড়েন মূল ব্যবসায়ীরা। এতে আশঙ্কা থাকে চামড়া পাচারের। সেই সঙ্গে ঈদের আগে চামড়ার প্রধান কাঁচামাল লবণের দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা লোকসানের সম্মুখীন হন। এ ছাড়া ট্যানারি মালিকদের কাছে কোটি কোটি টাকা বকেয়া পড়ে আছে। এতে চরম পুঁজি সংকটে রয়েছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। আসন্ন কোরবানির ঈদে প্রায় একই রকম কাঁচা চামড়া আমদানি হবে বলে আশা প্রকাশ করলেও অর্থ সংকটের কথা বললেন নাটোরের ব্যবসায়ীরা। তারা তাদের পাওনা টাকা দ্রæত পরিশোধের জন্য তাগিদ দিলেন ট্যানারি মালিকদের। চামড়া ব্যবসায়ী সায়দার খান বলেন, লবণের দাম স্থিতিশীল এবং পাচার রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে চামড়া শিল্প লাভের মুখ দেখবে। চামড়া ব্যবসায়ী গ্রæপের সভাপতি শরিফুল ইসলাম, উপদেষ্টা মঞ্জুরুল ইসলাম হিরুসহ বেশ কয়েকজন জানান, চামড়া শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে ও আরো ভালোভাবে ব্যবসা চালাতে ব্যবসায়ীরা সরকারের কাছে সহজ শর্তে ঋণ ও ট্যানারি শিল্পের দিকে দৃষ্টি দেয়ার দাবি করেছেন। ব্যবসায়ীরা আরো জানান, প্রতি বছর ট্যানারি মালিকদের বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে অতিরিক্ত দামে চামড়া কেনাবেচা হওয়ায় মাথাচাড়া দেয় সিন্ডিকেট আর আশঙ্কা থাকে চামড়া পাচারের। এ ছাড়া উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদের আগেই তাদের পাওনা টাকা পরিশোধ না করা হলে এ বছর তারা চামড়া কেনাবেচা করতে পারবেন না। তাদের চামড়া পচে নষ্ট হয়ে যাবে। প্রতিবেশী দেশ ভারতে চামড়া পাচারের আশঙ্কার কথা স্বীকার করে জেলা চামড়া ব্যবসায়ী মালিক গ্রæপের সভাপতি শরিফুল ইসলাম বলেন, চামড়া দেশের অন্যতম প্রধান শিল্প। এই শিল্পকে বাঁচাতে এবং এর সুদিন ফিরিয়ে আনতে পাচার রোধে সরকারের সঠিক পদক্ষেপ আশা করছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। দেশের অন্যতম এই চামড়া শিল্প রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে এমনটাই প্রত্যাশা ব্যবসায়ীদের। নইলে অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাবে এ শিল্প।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App