×

জাতীয়

সড়কে সুখবর নেই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০১৮, ১১:৩২ এএম

সড়কে সুখবর নেই
নিরাপদ সড়ক দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন জোরালো নাড়া দিয়ে গেছে। সেই আন্দোলনের রেশ না কাটতেই সারা দেশে পালিত হয়েছে বিশেষ ট্রাফিক সপ্তাহ। কিন্তু পরিস্থিতির কোনো উন্নতিই হয়নি। রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়ক-মহাসড়কে কোথাও শৃঙ্খলা ফেরেনি। পুলিশের নাকের ডগায় চলছে ফিটনেসবিহীন মোটরযান। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়াই রাস্তায় নেমেছে অনেক গণপরিবহন চালক। রাস্তার যেখানে-সেখানে গাড়ি থামিয়ে যাত্রীদের ওঠানো ও নামানো হয়। সড়কের লাইন ও লেন মেনে চলার কোনো গরজ নেই কারোরই। যাত্রীবাহী বাসগুলোকে আগের মতোই প্রতিযোগিতা করে চলাচল করতে দেখা যায়। খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর গাড়িটিও রক্ষা পায়নি বেপরোয়া বাসচালকের কবল থেকে। পথচারী ও যানবাহনের চালকদের আইন মেনে সড়কে চলাচলে সচেতনতা বাড়াতে স্কাউট ও গার্লস গাইডের সদস্যরা গলদঘর্ম হচ্ছে। কিন্তু তাদের আহবানে কান দিচ্ছে না কেউই। এ অবস্থায় রাজধানীর সড়কের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সুফল না আসায় ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক সপ্তাহ আরো তিনদিন বাড়ানো হয়েছে। সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে আন্দোলন চলাচলকালে রাজধানীর সড়কের নিয়ন্ত্রণ হাতে তুলে নেয় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি সড়ক ব্যবস্থাপনায় তৎপর হয়। এতে সড়কের পরিস্থিতি বদলে যায়। রোড পারমিট বিহীন যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। লাইসেন্স বিহীন চালকরাও গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামেনি। সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে শিক্ষার্থীরা ঘরে ফিরে গেলে শুরু হয় বিশেষ ট্রাফিক সপ্তাহ। কিন্তু এরপর এক সপ্তাহ না যেতেই রাজধানীর সড়কে দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা। রাজধানীর সড়কে আবারো ফিটনেস বিহীন যানবাহন চলাচল শুরু হয়। ভয় কেটে যাওয়ায় ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই এমন চালকরাও গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। এর ফলে গত কয়েকদিনে রাজধানীর রাস্তাগুলোতে তীব্র যানজট দেখা যায়। গতকাল শনিবার সাইন্সল্যাবরেটরি থেকে পল্টন পর্যন্ত এলাকার রাস্তায় বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির বাস চালকদের রাস্তার বিভিন্ন স্থানে ইচ্ছেমতো থামিয়ে যাত্রীদের ওঠানামা করাতে দেখা যায়। ফার্মগেট থেকে পল্টন মোড় পর্যন্ত ব্যস্ততম এই সড়কের কোথাও চালকদের লাইন এবং লেন মেনে গাড়ি চালাতে দেখা যায়নি। চালকরা আগের মতোই বেপরোয়া। নিজেদের ইচ্ছেমতো রাস্তার এক লাইন থেকে অন্য লাইনে গিয়ে গাড়ি চালাতে দেখা যায় তাদের। এসব রাস্তায় দায়িত্বরত পুলিশ সার্জেন্টরা সব দেখেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। যাত্রীরা চালকদের গতি কমাতে বললেও তারা শোনেনি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাস চালকদের বেপরোয়া গতির প্রমাণ মেলে খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর গাড়িকে বাসের ধাক্কা দেয়ার ঘটনায়। ট্রাফিক সপ্তাহের মধ্যেই এই ঘটনা ঘটেছে। ট্রাফিক সপ্তাহ চললেও মোহাম্মদপুর থেকে শাহবাগ পর্যন্ত পুলিশের ট্রাফিক সপ্তাহের কোনো ধরনের কর্মকান্ড দেখা যায়নি। এই সড়কেও যানবাহন চালক ও পথচারীদের মধ্যে সচেতনতার অভাব দেখা যায়। সড়কের বিভিন্ন স্থানে প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, বাস, কাভার্ডভ্যান ইচ্ছেমতো পার্কিং করে রাখা হয়। পান্থপথ, গ্রিনরোড, হাতিরপুল, কাঁটাবন, কাকরাইল, মালিবাগ ও মৌচাক এলাকায় উল্টেপথেও রিকশা, মোটরসাইকেল চলতে দেখা যায়। ট্রাফিক সপ্তাহ উপলক্ষে ট্রাফিক আইনসংক্রান্ত সচেতনতা বাড়াতে কোথাও মাইকিংয়ের মাধ্যমে প্রচারণার দৃশ্য নজরে পড়েনি। পথচারীদের ফুটওভারব্রিজে না উঠে পুলিশের সামনে দিয়েই রাস্তা পার হতে দেখা যায়। অবৈধ রিকশায় সয়লাভ রাজধানীর রাজপথ। রিকশার কারণে ঈদের আগে নগরীর যানজট বেড়ে যায়। কিন্তু ট্রাফিক সপ্তাহের মধ্যেও কোথাও একটি অবৈধ রিকশা পুলিশকে আটক করতে দেখা যায়নি। জনসচেতনতা বাড়াতে বাংলাদেশ স্কাউট গার্লস গাইড সদস্যরা নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কাজ করছে। কিন্তু শাহবাগ মোড়ে পথচারীদের সুশৃঙ্খল চলাচল নিশ্চিত করতে পারেননি। তারা জানান, রাস্তা পারাপারে স্কাউট ও গার্লস গাইডের নির্দেশনা বেশিরভাগ পথচারী মানেন না। তাচ্ছিল করে চলে যান। পুলিশও কোনো কিছু বলে না। এসব কারণে শৃঙ্খলা ফিরছে না বলেও তারা অভিযোগ করেন। ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া গতকাল শনিবার সাংবাদিকদের বলেন, রাজধানীতে চলাচলরত ৯০ শতাংশ যানবাহন ট্রাফিক আইন মেনে রাস্তায় চলাচল করে না। ফলে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। ঢাকার কোনো রাস্তায় পার্কিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট স্থান নেই। তাই ইচ্ছেমতো পার্কিং করে। এতে যানজটের সৃষ্টি হয়। তারপরও গত এক সপ্তাহে বিপুল সংখ্যক অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ফিটনেস বিহীন যানবাহন ও ড্রাইভিং লাইসেন্স বিহীন চালকদের রাস্তায় নামতে দেয়া হবে না। পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া এন্ড পিআর) সোহেল রানা জানিয়েছেন, ট্রাফিক সপ্তাহের শুরু থেকেই পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। সড়কে ট্রাফিক আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ লাগাতারভাবে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। এসময় সারা দেশে ৪৬ হাজার ৭২৩ জন চালকের বিরুদ্ধে এবং ১ লাখ ২৯ হাজার ৮৭১টি বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এসময় ৪ কোটি ৪৯ লাখ ৯ হাজার ২২৩ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এ ছাড়াও ৩ হাজার ৭৭৭টি যানবাহন আটক করা হয়েছে। র‌্যাব জাবালে নূর পরিবহনের ৬টি বাস আটক করেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App