×

জাতীয়

মিরসরাইয়ে বিলুপ্তির পথে নানা প্রজাতির বৃক্ষ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০১৮, ০২:০৯ পিএম

মিরসরাইয়ে বিলুপ্তির পথে নানা প্রজাতির বৃক্ষ
উত্তর চট্টগ্রামের পাহাড়, সমুদ্র, লোকালয়, অভয়ারণ্য, সীমান্ত এলাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ কৃষি প্রধান জনপদ মিরসরাই উপজেলা। দুই দশক আগেও এখানকার বেশির ভাগ পাহাড়ি এলাকাসহ জনপদে দেখা মিলত নানা প্রজাতির বড় বড় উদ্ভিদ ও বৃক্ষ। কিন্তু এখন অধিকাংশ পাহাড় ও সড়কের পাশের বৃক্ষ কেটে ফেলা হয়েছে। বড় পাছপালা তো দূরের কথা লতাগুল্মও টিকে আছে কোনোমতে। সাম্প্রতিক এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এরই মধ্যে মিরসরাই উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ অন্তত ২০ প্রজাতির গাছ বিলুপ্তির পথে। মিরসরাই উপজেলার করেরহাট ও ফটিকছড়ি-নারায়ণহাট রোড, অলিনগর সীমান্ত সড়ক কাঠ পাচারকারীদের জন্য নিরাপদ জোন হিসেবে পরিচিত। এই রুটগুলো দিয়ে নির্বিচারে বনজ কাঠ পাচার করা হয়ে থাকে। এতে এ অঞ্চলের ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক ভারসাম্যের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন প্রজাতির উপকারী গাছ বিলুপ্ত প্রায়। এসব প্রজাতির মধ্যে হিজলা, গোদা, চুটচুইট্টা, বেল, তেঁতুল, তাল, খেজুর, বকুল, হরীতকী, বারগোটা, সাজনা, সোনালু, কলা, মাদার, ভাদি, নাগেশ^র, চাইলদা, মিঝিরী, নিম, পোপন, চেইট পাতার গাছ, জারশুল, বট, অশ^ত্থ, কদম, ডইরগুলা, চম্পা, পাইন্যা মাদার, তেলী মাদার, কাটা মাদারসহ আরো বিভিন্ন প্রজাতি গাছ বিলুপ্তির পথে। নতুন কিছু হাইব্রিড গাছের কারণেও পরিবেশবান্ধব দেশি প্রজাতির অনেক গাছ বিলুপ্তির হচ্ছে। মিরসরাই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মধ্যে ওসমানপুর, ধুম, মঘাদিয়া, করেরহাট, হিঙ্গুলী, দুর্গাপুর, খৈয়াছড়া, ওয়াহেদপুর সাহেরখালী, এলাকার অনেক গ্রামের বাড়ির আশপাশের মূল্যবান গাছপালা কেটে পতিত জমি সৃষ্টি হচ্ছে। খৈয়াছড়া গ্রামের বনজ উদ্যোক্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, আগে কঠীন অসুখ, চর্ম ও যৌনসহ অনেক রোগের জন্য অর্জুন গাছের ছাল ছেঁচে তার রস খাইয়ে সুস্থ করে ফেলতাম। এখন কয়েক গ্রাম খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না অর্জুন গাছ। জানা গেছে, প্রতিদিন পাহাড়ি অঞ্চল থেকে বারইয়াহাট ও মিরসরাই দিয়ে সারা দেশে প্রায় ১৫ হাজার ঘনফুট কাঠ পাচার হয়। দেশের কাঠের চাহিদার প্রায় ৪৫ শতাংশই এ অঞ্চলের গাছ দিয়ে পূরণ করা হয়। এ চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে পাহাড়ে প্রতি বছর গড়ে প্রতি হেক্টরে ১ দশমিক ৫ থেকে ২ দশমিক ৫ ঘনমিটার গাছ কমে যাচ্ছে। ২০ বছর আগে এ হার ছিল প্রায় ৭ ঘনমিটার। কাঠ পাচারের সিংহভাগই হচ্ছে মিরসরাই এলাকা দিয়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বৃক্ষনিধনের প্রবণতা রোধের জন্য নজরদারি বাড়ানোর প্রয়োজন। এক্ষেত্রে পাহাড়ি এলাকাসহ গ্রামীণ জনপদে ও বিলুপ্ত প্রায় চম্পা, চাপালিশ, গর্জন, ঢাকি জাম, আমলকী, হরীতকী ও বহেড়ার গাছ লাগানো যেতে পারে। একইভাবে মধ্যম স্তরে আম, লিচু, জলপাই, শরিফা, আতা, বেল ও কদবেলের মতো বিভিন্ন ফলের গাছ এবং নিচের স্তরে লেবু, কমলালেবু ও পেঁপে, অনারস রোপণ করা যেতে পারে। পাহাড়ে যেসব জায়গায় ছড়া রয়েছে, তার পাশে রোপণ করা যেতে পারে মুলি ও বাইজা বাঁশ। বহুস্তর বিশিষ্ট বনায়নের মাধ্যমে বিলুপ্তপ্রায় গাছগুলোকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। একই সঙ্গে প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও জীবনমানের উন্নয়নও সম্ভব। মিরসরাইয়ের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ বলেন, আমরা আগামী বনজ ও ফলদ কৃষিমেলাকে কেন্দ্র করে উপজেলার সকল পতিত জমিসহ সর্বত্র বৃক্ষরোপণে উদ্বুদ্ধকরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যকর উদ্যোগ নেব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App