×

জাতীয়

বরিশালে গ্রাহকের অর্ধকোটি টাকা নিয়ে এনজিও লাপাত্তা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০১৮, ০১:১৩ পিএম

বরিশালে গ্রাহকের অর্ধকোটি টাকা নিয়ে এনজিও লাপাত্তা
বিনা সুদে ঋণ দেয়ার প্রলোভনে জামানত সংগ্রহের নামে গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়েছে এসকেএস নামের একটি এনজিও কর্মকর্তারা। গতকাল বুধবার সকাল ১০টার দিকে সাধারণ গ্রাহকরা ঋণ নিতে এসে এনজিও অফিস তালাবদ্ধ দেখেন এবং কর্মীদের মোবাইল ফোন বন্ধ পান। এ সময় প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে তারা বিক্ষোভ এবং থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনাটি জেলার মুলাদী উপজেলা সদরের বয়াতি মার্কেটের। ভুক্তভোগীরা জানান, গত দুসপ্তাহ আগে পার্শ্ববর্তী শরীয়তপুর উপজেলা থেকে দুজন প্রতারক মুলাদী, হিজলা উপজেলা ও কাজিরহাট থানার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে বিনা সুদে ঋণ দেয়ার কথা জানান। এ সময় প্রতারকরা কয়েকটি বাড়ি নিয়ে ২৫ জনের একটি ইউনিট গঠন করে ঋণ দেয়ার প্রলোভন দেখান। এসকেএস নামের এনজিওর ওই কর্মীরা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ দেয়ার বিপরীতে ৫ হাজার টাকা এবং ১ লাখ টাকার বিপরীতে ১০ হাজার টাকা করে জামানত আদায় করেন। বিনা সুদে ঋণ পাওয়ার আশায় কোনো কিছু না জেনেই সহজ-সরল গ্রামবাসী তথাকথিত এনজিও এসকেএসের কর্মকর্তাদের কাছে ৫-১০ হাজার টাকা করে দেন। কর্মকর্তারা সাধারণ মানুষের কাছে টাকা প্রাপ্তির একটি করে টোকেন দিয়ে মুলাদী বাঁধের ওপর বয়াতি মার্কেটে অফিস রয়েছে বলে ঠিকানা লিখে দিয়ে ৮ জুলাই ঋণের টাকা দেয়ার কথা জানান। এভাবে এসকেএসের দুই কর্মী ১৫ দিনে মুলাদী, হিজলা উপজেলা এবং কাজিরহাট থানার প্রায় ৮০০ মানুষের কাছ থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেন। মুলাদী সদর ইউনিয়নের ভাঙারমোনা গ্রামের ভুক্তভোগী নুর মোহাম্মদ হাওলাদার জানান, তাদের গ্রামের ২৫ জনের একটি ইউনিট গঠন করে এসকেএস জনপ্রতি ৫ হাজার করে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা নিয়েছে। উত্তরচর ডাকাতিয়া গ্রামের আছমা বেগম জানান, তার এলাকায় ২৫ জনের একটি ইউনিট গঠন করে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা জামানত নিয়েছেন ওই এনজিওর কর্মকর্তারা। কাজিরহাট থানার আন্ধারমানিক ইউনিয়নের মনির হোসেন হাওলাদার জানান, ওই এলাকায় তাকে দলনেতা করে ২৫ জনের একটি ইউনিট গঠনের মাধ্যমে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা নেন এসকেএসের দুই কর্মকর্তা। তিনি আরো জানান, বুধবার সকাল ১০টার দিকে গ্রাহকরা ঋণ নেয়ার জন্য মুলাদী বাঁধের ওপর স্থাপিত বয়াতি মার্কেটে গিয়ে অফিস তালাবদ্ধ দেখেন। এ সময় কল দিয়ে কর্মকর্তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েন তারা। পরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। একপর্যায়ে গ্রাহকরা ভবন মালিককের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, কোনো এনজিওর কাছে কক্ষ ভাড়া দেয়া হয়নি। তবে একটি কক্ষের সামনে এসকেএসের সাইনবোর্ড ঝুঁলতে দেখে ভুক্তভোগীদের মাঝে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে বয়াতি মার্কেটের মালিক মোশারফ হোসেন বয়াতি বলেন, এসকেএস নামের এনজিওর দুই কর্মকর্তা কিছুদিন আগে মার্কেটের একটি কক্ষ ভাড়া নেয়ার জন্য আসেন। কিন্তু এনজিওর মূল কাগজপত্রসহ চুক্তিপত্র ও অগ্রিম ভাড়া ছাড়া অফিস ভাড়া দেয়া হবে না জানিয়ে দিলে কর্মীরা তাদের ‘বড় অফিসার’ আসার কথা বলে কালক্ষেপণ করেন এবং কক্ষের সামনে একটি সাইনবোর্ড লাগানোর অনুমতি চাইলে তাদের নিষেধ করা হয়। পরে এনজিও কর্মীরা ৬ আগস্ট চুক্তিপত্র সম্পাদনের কথা জানিয়ে রবিবার সন্ধ্যায় একটি কক্ষের সামনে এসকেএসের সাইনবোর্ড লাগায়। এ ঘটনায় প্রতারণার শিকার গ্রাহকরা মুলাদী থানায় অভিযোগ করেছেন। মুলাদী থানার ওসি জিয়াউল আহসান জানান, টাকা দেয়ার আগে এনজিও এসকেএসের সম্পর্কে খোঁজ নেয়ার প্রয়োজন ছিল। একটু সচেতন হলে এভাবে প্রতারণার শিকার হতে হতো না। তিনি আরো জানান, গ্রাহকের অভিযোগ পাওয়ার পর এনজিও এসকেএসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্ধানে আশপাশের থানায় বার্তা পাঠানো হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App