×

জাতীয়

কাউনিয়ায় ফসলি জমিতে ইটভাটা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০১৮, ১১:৪০ এএম

কাউনিয়ায় ফসলি জমিতে ইটভাটা
পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই কাউনিয়ায় ৩০ বিঘা আয়তনের তিন ফসলি জমি নষ্ট করে নির্মাণ করা হচ্ছে ইটভাটা। উপজেলার শহীদবাগ ইউনিয়নের সাধু কুঠিরঘাট কানিপাড়া গ্রামে আর কে আর নামের এ ইটভাটাটি নির্মাণ করা হচ্ছে। উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, নির্মাণাধীন ইটভাটার আশপাশে সব তিন ফসলি জমি। এসব জমিতে ধান, ভুট্টা, পাটসহ সারা বছর বিভিন্ন ফসল ও সবজি আবাদ হয়। সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে অনেক ফসলি জমি চলে গেছে ইটভাটার দখলে। আশপাশের জমি দখলের চেষ্টা করছে। কুঠিরঘাট ও নাজিরদহ গ্রামের আট-দশজন বাসিন্দা বলেন, মীরবাগ-হারাগাছ সড়কের পাশে সাধু কানিপাড়া গ্রামে প্রায় ৩০ বিঘা আয়তনের তিন ফসলি জমি নষ্ট করে ইটভাটাটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মালিক হারাগাছ পৌরসভার ঠাকুরদাস গ্রামের ওয়াহেদুজ্জামান খোকা হাজি। ইটভাটাটি চালু হলে আশপাশের জমির ফসল উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন ওই এলাকার শতাধিক কৃষকরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভাটার পাশেই জমি থাকা কয়েকজন কৃষক ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, এই ইটভাটার জন্যি হামাকেরে অনেক ক্ষতি হবি। কিন্তু হামরা ভাটার মালিকের কাছে অসহায়। গ্রামের মজিবর হাজি, আব্দুল মান্নান, দেলওয়ারসহ কতিপয় কয়েক মাতাব্বরের জমি লিজ নিয়ে ইটভাটা তৈয়ার (নির্মাণ) করছে। তাই কথা কবার গেলে ভয় পায় ক্ষুদ্র কৃষকরা। সাধু গ্রামের কৃষকরা জানান, এই বছরও ওই ইটভাটার জমিতে ধান, আলু আবাদ হয়েছে। অন্য বছর এ সময় আউশ ধান আবাদ হতো। কিন্তু এখন ফসল চাষের বদলে ওই জমিতে ইটভাটা নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে শুধু ওই জমিগুলোতেই চাষাবাদ বন্ধ হচ্ছে না, ইটভাটার নির্গত ধোঁয়ায় পাশের মাঠজুড়ে শত শত বিঘা জমিতে ফসল চাষাবাদ হুমকির মুখে পড়বে। ইটভাটার পাশের জমির মালিক মিলু মিয়া (৩৮) বলেন, এ্যাটে ভাটা হইলে হামার জমি ছাড়ি দেয়া লাগবে। এ ব্যাপারে ইউএনওর কাছে একটি আবেদন করেন স্থানীয় কৃষকরা। কিন্তু ভাটা নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়নি। ওই গ্রামের ফুলু মিয়া বলেন, ইটভাটার মালিক ও জমি মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রতিকার করতে সাহস পাচ্ছে না কেউ। কালিগঞ্জ চন্দ্রপুর কলেজের প্রভাষক মো. কামরুজ্জামান বলেন, জনবসতিপূর্ণ এবং ফসলি জমির মাঝে ভাটা নির্মাণ হলে আশপাশের জমিতে ফসলের উৎপাদন হ্রাস পাবে। বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় মানুষের জীবনযাত্রাসহ, প্রকৃতি ও প্রাণী জগতে ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ভাটা নির্মাণের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা ক্ষেতের মাঝের জমির একটি ছোট রাস্তা তৈরি করছেন। ওই রাস্তায় ফেলা হয়েছে মাটি, বালু ও ইট। পাশাপাশি চিমনি নির্মাণকাজও এগিয়ে চলছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের রংপুরের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ইটভাটা প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ অনুযায়ী, কৃষিজমিতে বা এর আশপাশে ইটভাটা নির্মাণ নিষিদ্ধ। সরেজমিনে তদন্ত করে শর্তপূরণ সাপেক্ষে পরিবেশগত ছাড়পত্র দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হয়। তবে কৃষি বিভাগ থেকে অনাবাদি জমির প্রত্যয়ন না দিলে পরিবেশগত ছাড়পত্র দেয়ার প্রশ্নই আসে না। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল আলম জানান, আমার কাছ থেকে ওই ইটভাটার জন্য কোনো প্রত্যয়নপত্র নেয়া হয়নি। তিনি বলেন, আবাদি জমির মাঝখানে ইটভাটা নির্মাণ হলে আশপাশের জমিতে একসময় আর ফসল ফলবে না। ইটভাটার মালিক ওয়াহেদুজ্জামান খোকা হাজি বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সব বিভাগে আবেদন করা হয়েছে। আশা করি কিছুদিনের মধ্যে ছাড়পত্রের সব কাগজপত্র পেয়ে যাব। রংপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মেজবাবুল আলম বলেন, আর কে আর নামের ইটভাটাটির কোনো ছাড়পত্র নেয়নি। ইটভাটা নির্মাণ বা ইট পোড়ানোর জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের প্রয়োজন আছে। কিন্তু তা মানা হয়নি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম নাজিয়া সুলতানা বলেন, কুঠিরঘাট কানিপাড়া এলাকায় নতুন ভাটা নির্মাণের বিষয়টি আমাদের জানা নেই। বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। রংপুর জেলা প্রশাসক এনামুল হক বলেন, ভাটাটির নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে ইউএনওকে নির্দেশ দেয়া হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App