×

জাতীয়

‘গুরুত্ব’ বোঝাতে গিয়ে উল্টো গুরুত্বহীন জামায়াত!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০১৮, ০১:৪৯ পিএম

‘গুরুত্ব’ বোঝাতে গিয়ে উল্টো গুরুত্বহীন জামায়াত!
জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপিকে চাপে রাখতে ও জোটে নিজেদের ‘গুরুত্ব’ বোঝাতে গিয়ে উল্টো নিজেরাই গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে জামায়াতে ইসলামী। বিএনপির সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতাদের অনুরোধের পরও দলীয় শক্তি প্রমাণের জন্য সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী দিয়েছিল জামায়াত। কিন্তু সেই প্রার্থী জামানত হারানোয় অন্যান্য নগরীর মতো সিলেটেও সাংগঠনিক দুর্বলতা ফুটে উঠেছে নিবন্ধন হারানো দলটির। এর ফলে আগামী সংসদ নির্বাচনে আসন ভাগাভাগির ক্ষেত্রে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে তাদের অবস্থানও দুর্বল হয়ে পড়েছে। যদিও জামায়াতের দাবি, স্থানীয় নির্বাচনের কারণে জোটের রাজনীতিতে কোনো প্রভাব পড়বে না। ১৯ বছর ধরে এক জোটে থাকা বিএনপি ও জামায়াতের বিরোধ প্রকাশ্যে চলে আসে সিলেট সিটির নির্বাচনকে ঘিরে। একপর্যায়ে দল দুটির নেতাদের বাকযুদ্ধ শুরু হয়। নির্বাচনকে সামনে রেখে উভয় দলের নেতাকর্মীরা সোশ্যাল মিডিয়ায়ও ঝড় তোলেন পরস্পরের বিরুদ্ধে। জামায়াতের অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতা যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত এবং নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন বাতিলের পর জোটে গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছিল দলটি। এ অবস্থায় সিসিক ইস্যুতে শক্ত অবস্থান নিয়ে মূলত বিএনপিকে ‘বার্তা’ দিতে চেয়েছিল জামায়াত। সিলেট নগরীতে ৩০/৪০ হাজার ভোট আছে দাবি করলেও তাদের মেয়রপ্রার্থী মহানগর জামায়াতের আমির এহসানুল মাহবুব জুবায়ের পেয়েছেন ১০ হাজার ৯৫৪টি, যা কাস্টিং ভোটের মাত্র ৫ ভাগ। এরকম ভরাডুবির পর জোটে ও দলের ভেতরে-বাইরে চাপের মুখে পড়েছেন জামায়াতের নেতারা। অথচ তাদের লক্ষ্য ছিল, হতাশায় ডুবে থাকা কর্মীদের চাঙ্গা করার পাশাপাশি বিএনপিকে আরো বেশি জামায়াত নির্ভর করে তোলা। কিন্তু ভোটের ফলে জামায়াতের কোনো উদ্দেশ্যই পূরণ হয়নি। বরং বিএনপির দাবিই সত্য প্রমাণিত হয়েছে। বিএনপির মেয়রপ্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী বরাবরই দাবি করে আসছিলেন, জামায়াতের সমর্থনের দরকার নেই, তাদের সমর্থন ছাড়াই সিলেটে জিততে সক্ষম বিএনপি। বাস্তবে হয়েছেও তাই। এদিকে জামায়াতের প্রার্থী এহসানুল মাহবুব জুবায়ের দাবি করেছেন, সিলেটের ফল তাদের কাছে অপ্রত্যাশিত। নিজেদের ২৫ হাজার ভোট কিভাবে গায়েব হলো, তা শিগগিরই তুলে ধরবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে কাউন্সিলর পদে ১২টি ওয়ার্ডে একক প্রার্থী দিলেও জামায়াতের একজনও জয়লাভ করতে পারেনি। কেবল স্থগিত হওয়া ২৪ নং ওয়ার্ডে তাদের একজন প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া ১৬ নং ওয়ার্ডের বিজয়ী কাউন্সিলর আবদুল মুমিত জাবেদ আগে জামায়াতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকলেও এবার নির্বাচনের আগে থেকেই তিনি নিজেকে স্বতন্ত্র হিসেবে পরিচয় দিয়ে বেড়াচ্ছেন। অথচ ২০১৩ সালের সিসিক নির্বাচনে জামায়াতের তিনজন কাউন্সিলর বিজয়ী হয়েছিলেন। স্থানীয় বিশ্লেষকরা বলছেন, সিসিক নির্বাচনে জামায়াতের সমর্থন ছাড়াই বিএনপি প্রার্থীর ঈর্ষণীয় সাফল্য এবং জামায়াত প্রার্থীদের চরম ভরাডুবিতে ২০ দলীয় জোটে তাদের গুরুত্ব আরেকদফা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। আগামী সংসদ নির্বাচনে আসন ভাগাভাগির ক্ষেত্রেও তাদের অবস্থান দুর্বল হয়ে গেল। এ ব্যাপারে সুজন সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, নির্বাচনের আগে জামায়াত দাবি করেছিল, সিলেটে তাদের ৩০/৪০ হাজার ভোট রয়েছে। এর ভিত্তিতে জোটে মেয়র পদে প্রার্থিতাও চেয়েছিল দলটি। কিন্তু দলটি তাদের দাবি করা ভোটের মাত্র এক-চতুর্থাংশ পেয়েছে। এতেই বোঝা যায়Ñ সিলেট নগরীতে তাদের এর চেয়ে বেশি ভোট নেই। সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ বলেন, জামায়াতে ইসলামী আসলে একটি কাগুজে বাঘ, এ নির্বাচনের মাধ্যমে তা আবার প্রমাণ হলো। আগামীতে সেই অনুপাতে তাদের সঙ্গে জোটের সম্পর্ক নির্ধারিত হবে বলেও তিনি মনে করেন। আলী আহমদ আরো বলেন, জামায়াত নেতাদের বদ্ধমূল ধারণা ছিল, তাদের সমর্থন ছাড়া বিএনপি জিততে পারবে না। সিলেটে এটা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। তবে জামায়াত নেতাদের দাবি, সিসিক নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির কারণে তাদের প্রার্থীর ভোট গণনায় নেয়া হয়নি। জামায়াতকে ছাড়াও বিএনপি জয়ী হতে পারে এটা বুঝাতে এবং জোটে ভাঙন ধরাতেই সরকার সিলেটে বিএনপিকে ছেড়ে দিয়েছে বলেও মনে করেন তারা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App