×

মুক্তচিন্তা

সড়ক পরিবহন আইন নৈরাজ্য কি থামবে এবার?

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ আগস্ট ২০১৮, ০৮:১১ পিএম

কেউ অপরাধ করলে তাকে কি শাস্তি দেয়া যাবে না? শাস্তি দিলে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে তা থেকে ফায়দা নেয়া হবে? পরিবহন শ্রমিকরা এই ঔদ্ধত্য ও সাহস কোথায় পায়? আইন-আদালত-প্রশাসনকে অবজ্ঞা করে চালিত পরিবহন খাতে এমন নৈরাজ্য সমাজব্যবস্থায় একটি মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়বে। যেভাবেই হোক, দেশের পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর প্রতিবাদে গতকাল বৃহস্পতিবার পঞ্চমদিনের মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা। অথচ সড়কে বাস চলাচল নিরাপদ নয় এমন কারণ দেখিয়ে রাজধানীতে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে পরিবহন মালিকরা। এছাড়া ঢাকার সঙ্গে দেশের বিভিন্ন রুটেও দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সড়ক-মহাসড়কে চলছে এক ধরনের অঘোষিত ধর্মঘট। এতে করে ভোগান্তিতে পড়ছে সাধারণ মানুষ। পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা নিরাপত্তার অজুহাতে যে অমানবিক আচরণ করছে তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে চলছে পরিবহন খাতে চরম নৈরাজ্য। নৈরাজ্য রোধে সরকার নানাভাবে উদ্যোগ নিলেও তা কোন কাজেই আসছে না। দিনদিন পরিবহন শ্রমিক-মালিকরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। কোনোভাবেই যেন তাদের দমন করা যাচ্ছে না। রবিবার বাসচাপায় বিমানবন্দর সড়কে দুই শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় যেন সারাদেশে বিক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। বোধ-বুদ্ধিসম্পন্ন প্রতিটি মানুষই আজ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। পিঠ যেন দেয়ালে ঠেকে গেছে। শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে ৯ দফা দাবি তুলছে। তাদের এই দাবি যৌক্তিক। তাদের দাবির সঙ্গে আমরাও সহমত পোষণ করছি। সরকার দাবিগুলো বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছেন। সেটা কতটুকু বাস্তবায়ন হবে দেখার অপেক্ষায়। ভাবতে অবাক লাগে যে, সড়ক-মহাসড়কে শৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করার জন্য সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্তৃপক্ষ আছেন। কিন্তু তাদের চোখের সম্মুখেই চলছে বাসে বাসে রেষারেষি, প্রাণঘাতী প্রতিযোগিতা এবং স্বেচ্ছাচারিতা। সেইসঙ্গে ফিটনেসবিহীন লক্কড়ঝক্কড় বাস এবং ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ চালকদের দাপট তো আছেই। আর এই বিশৃঙ্খলার বলি হচ্ছে সাধারণ মানুষ। ক্ষতিগ্রস্তরা বিচার তো পাচ্ছেন না, উল্টো হয়রানির শিকার হচ্ছেন। স্বভাবতই প্রশ্ন সামনে আসে, কেউ অপরাধ করলে তাকে কি শাস্তি দেয়া যাবে না? শাস্তি দিলে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে তা থেকে ফায়দা নেয়া হবে? পরিবহন শ্রমিকরা এই ঔদ্ধত্য ও সাহস কোথায় পায়? আইন-আদালত-প্রশাসনকে অবজ্ঞা করে চালিত পরিবহন খাতে এমন নৈরাজ্য সমাজব্যবস্থায় একটি মারাত্মক হুমকি। চালকরা আর চালক থাকবেন না, খুনের লাইসেন্সধারীতে পরিণত হয়ে চরম বেপরোয়া ও ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করবে। আইন ও বিচারিক কার্যক্রমের ব্যাপারে সড়ক-তাণ্ডবে যে সমাধান নেই, সেই বোধোদয় সংশ্লিষ্টদের হওয়া দরকার। যেভাবেই হোক, দেশের পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এখন ভরসার জায়গা সম্ভবত একটাই সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক মহল। জঙ্গি ও মাদকের মতো এই বিষয়টিকেও তারা গুরুত্বের সঙ্গে দেখার সময় হয়েছে। আর ছাড় নয়। শিক্ষার্থীরা আমাদের সে আশার জায়গাটা মজবুত করে দিয়েছে। জানা গেছে, আগামী সোমবার মন্ত্রিসভায় উঠছে সড়ক পরিবহন আইন। ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে ন্যূনতম অষ্টম শ্রেণি পাসের বাধ্যবাধকতা ও গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে শাস্তির বিধান রেখে নতুন আইনের নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছিল গত বছর মার্চ মাসে। প্রায় দেড় বছর পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সেই আইনের অনুমোদন দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। রাজধানীর নগর পরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানোর কোনো বিকল্প নেই। দ্রুত আইন পাস ও সব রুটে বিআরটিসির বাস চালু করা গেলে বেসরকারি বাস মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ হবে বলে প্রত্যাশা করছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App