×

মুক্তচিন্তা

বাচ্চাগুলোকে রক্তাক্ত করা কি খুব দরকার ছিল?

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০১৮, ০৭:৩৭ পিএম

 
বাচ্চাগুলোকে রক্তাক্ত করা কি খুব দরকার ছিল? শিশুদের ওপর লাঠিচার্জ কেন? রাষ্ট্র কি শিশু, কিশোর, তারুণ্যের ভাষা বুঝতে ব্যর্থ? এই শিশু-কিশোরদের অভিভাবকরা এরপর রাস্তায় নামলে কি হবে? সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা কি করেন? সব দায়িত্ব কি একা প্রধানমন্ত্রীর? রাজনীতিকরা কি আজকাল আন্দোলনরত শিশু-কিশোরদের সামনে যেতেও ভয় পান নাকি? শিশুরা এখন বাসের লাইসেন্স দেখছে, সামনে রাজনীতির লাইসেন্স দেখতে চাইলে কি করবেন?
আগস্ট মাস। শোকের মাস। সতর্ক থাকার মাস। এ মাসে আমরা জাতির পিতাকে হারিয়েছি। তার দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, বঙ্গবন্ধু মহাকাশে, কেউ ইচ্ছা করলেও তার নাম মুছে ফেলতে পারবে না। কথাটা সত্য, তাই হোক। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশকে কলঙ্কিত তো করা যাবে? ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের গায়ে যখন নিরাপত্তা কর্মীদের হাত ওঠে, লাঠিচার্জ হয়, দেশ তখন কলঙ্কিত হয় বটে! এই শিশু-কিশোরদের নিজেদের সন্তান ভাবতে পারলে কি এমনটি ঘটে? বাচ্চাগুলোকে রক্তাক্ত করা কি খুব দরকার ছিল? শিশুদের ওপর লাঠিচার্জ কেন? রাষ্ট্র কি শিশু, কিশোর, তারুণ্যের ভাষা বুঝতে ব্যর্থ? এই শিশু-কিশোরদের অভিভাবকরা এরপর রাস্তায় নামলে কি হবে? সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা কি করেন? সব দায়িত্ব কি একা প্রধানমন্ত্রীর? রাজনীতিকরা কি আজকাল আন্দোলনরত শিশু-কিশোরদের সামনে যেতেও ভয় পান নাকি? শিশুরা এখন বাসের লাইসেন্স দেখছে, সামনে রাজনীতির লাইসেন্স দেখতে চাইলে কি করবেন? কুর্মিটোলায় দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে নৌমন্ত্রীর ভুবনমোহন হাসি; নিখোঁজ কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আরিফের লাশ বুড়িগঙ্গায় ভেসে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সদ্য চান্দিনায় এক ছাত্রীর ট্রাক চাপা পড়ে করুণ মৃত্যু দুঃখজনক অশনিসংকেত। মন্ত্রীকে তিরস্কার বা মন্ত্রীর ক্ষমা প্রার্থনা যথেষ্ট নয়! মেধাবী ছাত্র আরিফের লাশ বুড়িগঙ্গায় কেন, এ প্রশ্নের কি কোনো জবাব আছে? শিক্ষার্থীদের অস্বাভাবিক মৃত্যুর জন্য দায়ী কে? একজন মন্ত্রীর অপকর্মের দায় সরকারের নেয়া ঠিক নয়, এতে পুরো সরকারের ভাবমুর্ক্তি ক্ষুণ্ণ হয়। এর মধ্যে ছাত্রলীগের নতুন সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য, ‘ছাত্রদের গায়ে হাত তুলবেন না’ অথবা ওবায়দুল কাদেরের ‘প্লিজ, তোমরা ক্লাসে যাও’ কথাটা কিছুটা হলেও আশার ঝলকানি। শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধুর নামে রাস্তায় নামল, আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকারের পুলিশ ওদের পেটাল? বিচিত্র এ দেশ! সামাজিক মাধ্যমে ছাত্র পেটানোর কিছু কিছু দৃশ্য সত্যিই লজ্জাকর। ক’দিন আগে কাশ্মিরের লাঞ্ছিতা নারী আসিফার জন্য পুরো বাংলাদেশ জেগে উঠেছিল। কিন্তু খাগড়াছড়ির নয় বছরের নাবালিকা কির্তিকা ত্রিপুরা পূর্ণা ধর্ষণ ও হত্যার বিরুদ্ধে সবাই কেমন যেন উদাসীন। পঞ্চগড়ের পঞ্চদশী কবিতার লাশ তোলা হয়েছে ডোবা থেকে, সঙ্গে চিরকুট, ‘আনিসুর রহমান যেন শাস্তি পায়’। এতেও কারো সাড়াশব্দ নেই? দেশ কেন জানি ঝিমিয়ে পড়েছে। কোথায় যাচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ? এরই ফাঁকে হয়ে গেল তিন সিটিতে মেয়র নির্বাচন। এই নির্বাচনে কম খরচে ব্যাপক প্রচার পেয়েছেন বরিশালের মেয়র প্রার্থী ডাক্তার মনীষা চক্রবর্তী। মনীষা একটি বিপ্লবের নাম, তিনি নতুন করে মানুষের মনে আশা জাগিয়েছেন। নারী তাকে দেখে আশান্বিত হয়েছে। তিনি জেতেননি, তবে দেশে বা প্রবাসে মানুষ মনে মনে আশা করেছে, মনীষা জিতুন। নির্বাচন-উত্তর এক বিক্ষোভে দেখলাম, তার নামের আগে ‘কমরেড’ উপাধি। বুঝলাম, তার আর ভরসা নেই? তবে নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হয়েছে কিনা, এ প্রশ্ন অবান্তর। যারা জিতেছেন, সরকার, নির্বাচন কমিশন বলেছে, সুন্দর নির্বাচন হয়েছে। যারা হেরেছেন, তারা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছেন, ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন। সিলেটে বিজয়ী প্রার্থীরও একই অভিযোগ। কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ করেছিল, সে মরেনি। আওয়ামী লীগকেও ‘হারিয়া প্রমাণ করতে হইবে যে নির্বাচন সুষ্ঠু হইয়াছে’! তবে লোকে বলছে, সিলেটে অর্থমন্ত্রী জিতেছেন, আওয়ামী লীগ হেরেছে। ৩১ জুলাই ২০১৮ শিতাংশু গুহ : কলাম লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App