×

জাতীয়

সিলেটে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০১৮, ১০:৫৫ এএম

সিলেটে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকা ও ধানের শীষের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে। সাধারণ ভোটার, বিভিন্ন শ্রেণির পেশাজীবী ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে এই আভাস পাওয়া যায়। আজকের নির্বাচনে সহজেই কেউ মেয়র নির্বাচিত হয়ে যাবেন এমন প্রত্যাশা ভোটাররা করছেন না। এবারের নির্বাচন ঘিরে নানা সমীকরণের ফলে ভোটাররাও প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ের ব্যাপারে আগেভাগে কিছুই বলতে পারছেন না। তিন সিটির মধ্যে সিলেটের দিকেই যে সারা দেশের মানুষের নজর একটু বেশি, তার প্রমাণ মিলেছে প্রধানমন্ত্রীর প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের ফেসবুক স্ট্যাটাসে। তিনি সিলেট সিটির নির্বাচনের সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের পর সিলেটে নৌকা ও ধানের শীষের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস দিয়েছেন। ফলে সিলেটবাসীর ধারণার সঙ্গে জয়ের ধারণাও হুবহু মিলে গেছে। গত ১৫ দিনে সিলেট মহানগরের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে একই ধরনের আভাস পাওয়া গেছে। গত শনিবার রাতে সিলেট সার্কিট হাউসের সামনের হকার ফয়জুর রহমানের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের সিলেট সিটি নির্বাচন নিয়ে আলাপ হয়। এ সময় তিনি জানান, প্রথম দিকে সবাই আরিফের কথা বলেছিল। পরে অনেকে কামরানের কথা বলতে শুরু করে। এখন আর কেউ তাদের দুজনের কথা বলে না। সবাই নৌকা আর ধানের শীষের ভোট দেয়ার কথা বলে। আগে যারা ধানের শীষে ভোট দিতে বলেছে, তারা এখন আবার নৌকায় ভোট দিতে বলেছে। শহরের পূর্ব জিন্দাবাজার এলাকার একটি রেস্টুরেন্টে স্কুল শিক্ষক রফিকুল আলমের কাছে জানতে চাওয়া হয়, সিটি নির্বাচনে কোন প্রার্থী জিতবে? এ কথা শুনে একটু সময় নেন বিয়াল্লিশ বছর বয়সী রফিকুল আলম। তারপর মাথা নাড়িয়ে বলেন, এবার মার্কার কারণে কে জিতবে, কে হারবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। নৌকা-ধানের শীষের মধ্যে এবারের মতো হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের অবস্থা আগে হয়নি। অল্প ভোটের ব্যবধানে জয়-পরাজয় নির্ধারণ হবে মনে হয়। আরো বহু ভোটারের মুখে এ ধরনের কথা শোনা গেছে। এর কারণ হচ্ছে, প্রেক্ষাপটের ‘বহুমুখী রাজনৈতিক সমীকরণ’। সচেতন শিক্ষিত ভোটাররা তাদের সিটি নির্বাচনের ভোটের সমীকরণের ব্যাপারে বলেন, জামায়াত ও ইসলামিক দলগুলো আগের নির্বাচনে ধানের শীষের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। কিন্তু এবার এখানে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। এই অবস্থা ধানের শীষের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুরুতেই একটা ব্যবধান তৈরি হয়েছে। ধানের শীষের এই অবস্থার কারণে নৌকা বেশ সুবিধায় আছে। তবে হেফাজতে ইসলাম রাজনৈতিক সংগঠন না হলেও ভোটের মাঠে হেফাজতের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। তাদের বড় ভোট ব্যাংক রয়েছে। সিলেটে হেফাজত ধানের শীষের প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীকে সমর্থন জানিয়ে প্রচারণায় অংশ নিয়েছে। এদের দেখে ধর্মভীরু ভোটাররা ধানের শীষের দিকে ঝুঁকেছেন। এটা ধানের শীষের প্রার্থী আরিফের জন্য সুফল বয়ে এনেছে। অন্যদিকে আরিফ মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে নগরীর উন্নয়ন করেছে। এ জন্য আরিফ নগরীর নীরব ভোটারদের অনেকটা কাছে চলে এসেছেন। এক্ষেত্রে আরিফ সহানুভূতির ভোট পেয়ে এগিয়ে থাকবেন। মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টি শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে বেশ জোরেশোরেই সমর্থন জানিয়ে শেষ দিনে প্রচারণা চালিয়েছে। এতে জাপার সমর্থক ভোটাররা নৌকার পক্ষে থেকে ভোটের ব্যবধানে বড় ভূমিকা রাখতে পারবে। তা ছাড়া কয়েকটি ইসলামি সংগঠন এবারের নির্বাচন সামনে রেখে দ্বিধাবিভক্ত হয়েছে। একাংশ ধানের শীষের পক্ষে এবং অপর একটি অংশ নৌকা মার্কার পক্ষে নগরীতে প্রচারণায় অংশ নিয়েছে। এদের ভোট যে প্রার্থী বেশি পাবেন তিনিই মেয়রের চেয়ারে বসার সুযোগ পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সর্বোপরি এবার প্রতীক একটি বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেশিরভাগ ভোটার এবার দ্বিধাদ্ব›েদ্বর মধ্যে আছেন। ব্যক্তি কামরানকে পছন্দ না করা লোকজন এবার নৌকা প্রতীকের কারণে বিমুখ হতে পারছেন না। তারা যদি ভোটকেন্দ্রে যান এবং নৌকায় ভোট দেন তাহলে নৌকার পালে হাওয়া লাগবেই। গতবার এই শ্রেণির ভোটাররা অনেকেই ভোটকেন্দ্রে যাননি। আবার যারা গিয়েছেন তারা কামরানকে ভোট দেননি। ধানের শীর্ষ প্রতীকের কারণে আরিফকে যারা অপছন্দ করেন, তারাও এবার আর ভোট না দিয়ে পারছেন না। ভোটের মাঠের এসব সমীকরণ থেকেই ধারণা করা হচ্ছে, এবারের সিলেট সিটি নির্বাচনে নৌকা ও ধানের শীষের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। দুই প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান খুবই কম থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App