×

জাতীয়

রাজশাহীতে মূল ইস্যু উন্নয়ন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০১৮, ১০:৩৮ এএম

রাজশাহীতে মূল ইস্যু উন্নয়ন
রাজশাহীর নগর পিতার আসনে কে বসবেন তা নির্ধারণে আজ সোমবার ৩ লাখ ১৮ হাজার ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। নির্বাচনী মাঠে ৫ প্রার্থী থাকলেও মূল লড়াই হবে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির মধ্যেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজশাহী সিটির এ নির্বাচন প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী দুই দলের জন্যই এসিড টেস্ট। নির্বাচনে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন হারলে হারবে সরকার এবং সারা দেশের সঙ্গে তালমিলিয়ে উন্নয়নের দৌড়ে পিছিয়ে পড়বে রাজশাহী নগরী। আর মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল হারলে ব্যাপক উন্নয়ন হবে নগরীর কিন্তু জাতীয় রাজনীতিতে আরো কোণঠাসা হয়ে পড়বে বিএনপি। স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারের নির্বাচনে দলীয় ভোটারের বাইরে নতুন ভোটাররা একটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে। এ ছাড়া বরাবরের মতো বস্তিবাসীর ২০ হাজার, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ২৯ হাজার, নতুন ৩০ হাজার, উর্দু ভাষাভাষীর (বিহারি) প্রায় ১৫ হাজার ভোট নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণে ভ‚মিকা রাখবে। জানা গেছে, ২০১৩ সালের তুলনায় এবার নতুন ভোটার বেড়েছে প্রায় ৩০ হাজার। লিটনের কর্মসংস্থান সৃষ্টির ঘোষণায় এসব ভোটের অধিকাংশই নৌকা মার্কায় যাবে বলে নগরবাসীর ধারণা। অন্যদিকে সংখ্যালঘু ২৯ হাজার ভোটার জয়-পরাজয়ে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বরাবরের মতো এবারও এই ভোট নৌকা মার্কায় যাবে বলে দৃঢ় বিশ্বস আওয়ামী লীগ নেতাদের। নগরীতে উর্দু ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর ভোট প্রায় ১৫ হাজার। এ ভোটের একটি বড় অংশ বরাবরই বিএনপি পেয়ে আসছে। এবারের নির্বাচনে এই ভোট পাওয়ার জন্য দুই প্রার্থীই মরিয়া। দু’দলের শীর্ষ নেতারাই বিহারি ক্যাম্পে তাদের ভোট পেতে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। নগরীতে বস্তিবাসীর ভোট রয়েছে ২০ হাজার। এর আগের নির্বাচনগুলোতে এই ভোট অর্থের বিনিময়ে নিজের পক্ষে টানতে দেখা গেছে বিভিন্ন প্রার্থীকে। অনেকে মনে করছেন, সেই সময় আর নেই। এখন তাদের আয়-রোজগার ভালো। তাদের ছেলেমেয়েরাও লেখাপড়া শিখছে। সে ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে। কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ভোট দেয়ার সম্ভাবনা কমেছে। তাই বিশাল এই ভোট ব্যাংক সম্পর্কে কারোই স্পষ্ট ধারণা নেই। রাজশাহীতে হেফাজতে ইসলামের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ১৫-২০টি মাদ্রাসা। ২০১৩ সালের সিটি নির্বাচনে এসব মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীরা সরাসরি বিএনপির মেয়রপ্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। এমনকি শাপলা চত্বরে হত্যাকান্ড নিয়ে সচিত্র লিফলেট ছেপে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রচারণায় নেমেছিলেন তারা। সে বার লিটনের পরাজয়ের পেছনে হেফাজতের ভূমিকাও ছিল উল্লেখযোগ্য। এবারের নির্বাচনে তাদের তেমন কোনো কর্মকান্ড চোখে পড়েনি। রাজশাহী চেম্বারের সহসভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, যিনি নির্বাচিত হয়ে জনগণের পাশে থাকবেন, অবহেলিত এই জনপদের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে, শিল্প-কলকারখানার প্রসার ঘটাতে পারবে এবং বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে পারবেন আমরা এমন একজনকে মেয়র হিসেবে দেখতে চাই। রাসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটনের প্রধান সমন্বয়কারী ও নগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক লাবলু সরকার বলেন, রাজশাহী নগরের সাধারণ মানুষের মধ্যে নৌকার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ দলমত নির্বিশেষে উন্নয়নের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। সাধারণ মানুষের ভেতর একটি জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে, যা ভোটের মাধ্যমে প্রতিফলন ঘটবে। আশা করি ৬০-৭০ হাজার ভোটের ব্যবধানে নৌকার প্রার্থী নির্বাচিত হবেন। বিএনপির প্রধান সমন্বয়কারী ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, গ্রেপ্তার-অত্যাচার-নির্যাতন করে মানুষের মন জয় করা যায় না। রাজশাহীর মানুষ বার বার ধানের শীষের পক্ষে ভোট দিয়েছে। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটবে না। জনগণ ভোটকেন্দ্রে যেতে পারলে ও স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারলে ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে বিপুল ভোটে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বিজয়ী হবেন। রাজশাহী সিটি করপোরেশনে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে মেয়র পদের পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন (নৌকা), বিএনপির মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল (ধানের শীষ), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (মতিন) হাবিবুর রহমান (কাঁঠাল), গণমঞ্চ ও গণসংহতি আন্দোলনের এডভোকেট মুরাদ মোর্শেদ (হাতি) ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শফিকুল ইসলাম (হাতপাখা)। তবে নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের মতে, মূলত নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থীর মধ্যেই হবে ভোটের লড়াই। এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল দুজনই নগরীর উপশহর এলাকার স্যাটেলাইট স্কুল কেন্দ্রে ভোট দেবেন। কাফনের কাপড় পরে ভোটকেন্দ্রে যাবেন বুলবুল : কাফনের কাপড় পরে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির মেয়রপ্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। গতকাল রবিবার বেলা ১২টার দিকে নির্বাচন অফিসে অভিযোগ দিতে গিয়ে তিনি সাংবাদিকদের সামনে এ ঘোষণা দেন। বুলবুল বলেন, আমরা সব নির্যাতন-জুলুম সহ্য করে এখন পর্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে নির্বাচনে আছি। কিন্তু সব কিছুর সীমা থাকা উচিত। প্রশাসন-পুলিশ যেভাবে আওয়ামী লীগের মতো কাজ করছে, তাতে নির্বাচন পরিস্থিতি সুষ্ঠু নয়। পুলিশ আমাদের নির্যাতন করছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমার ২৩-২৪ জন পোলিং এজেন্টকে খুঁজে পাচ্ছি না। অন্যদেরও নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। আমাদের জেলা বিএনপির সাবেক নেতা দেলওয়ারকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে পুলিশ। নির্বাচন কমিশনে জমাকৃত অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, গত ২৭ জুলাই পোলিং এজেন্টসহ বিএনপির ৩০-৩২ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। সাদা পোশাকধারী পুলিশ কর্মীদের এলাকায় না থাকার জন্য হুমকি দিচ্ছে ও ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য ভয় দেখাচ্ছে। এ ছাড়া নির্বাচনী অফিসে নেতাকর্মীরা অবস্থান করলে তাদের হুমকি দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়। এ অবস্থায় ভোটের দিন ভোটার, পোলিং এজেন্টসহ সব নেতাকর্মীর নিরাপত্তা চেয়েছেন তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App