বাড়ছে উৎকণ্ঠা, বদলে যাচ্ছে মাঠের চিত্রও
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০১৮, ০১:৫০ পিএম
নির্বাচনী ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগ এবং গত কয়েকদিনে একাধিক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় সিলেট নগরীর ভোটারদের মধ্যে উৎকণ্ঠা বেড়েছে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, ভোটের দিনও এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। এ অবস্থায় ভোট দিতে যাবেন কিনা- তা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে রয়েছেন কেউ কেউ।
নগরীর পূর্ব জিন্দাবাজার এলাকার ভোটার মো. জামালউদ্দিন জানান, কিছু দুষ্কৃতকারী সিটি নির্বাচন ঘিরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর চেষ্টা করছে। নির্বাচনী ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা তাই প্রমাণ করে। একারণে ভোট দিতে যাওয়ার ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত নেইনি। ভোটের দিন এধরনের ঘটনা ঘটলে তা সিলেটবাসীর জন্য খুবই দুঃখজনক ঘটনা হবে।
নগরীর জামতলা এলাকার ভোটার জীবন রায় বলেন, ভোটের দিন দুপুর পর্যন্ত পরিস্থিতি দেখে ভোট দেয়ার চিন্তা করব। এবারের নির্বাচন ঘিরে কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে মারামারি, পুলিশের ওপর ককটেল নিক্ষেপ ও নির্বাচনী ক্যাম্পে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার পর এবার আমরা নাশকতার আশঙ্কা কোনোভাবেই বাদ দিতে পারছি না। ভোটের দিন পুলিশের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা উচিত। ভোটারদের মন থেকে আশঙ্কা দূর করা সম্ভব হলে ভোটারদের উপস্থিতিও বাড়বে।
এ ব্যাপারে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলিমুজ্জামান জানান, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ বজায় রাখতে আমরা সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি। ভোটারদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সব ভোটকেন্দ্রে পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। পাশাপাশি র্যাবের টিমও কাজ করবে। এ কারণেই বলছি, ভোটারদের শঙ্কা বা ভয়ের কিছুই নেই।
এদিকে শেষ মুহূর্তে ভোটের মাঠ নিজেদের অনুক‚লে রাখতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা মরিয়া হয়ে উঠেছেন। গত দুই দিনে অনেক জায়গায় ভোটের মাঠের চিত্রও বদলে গেছে। বিশেষ করে ইসলামিক দলগুলোর অবস্থানের পরিবর্তন নগরবাসীর নজরে পড়েছে। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম পার্টি ও খেলাফত মজলিসের একাংশ প্রাচারণা শুরুর দিকে ধানের শীষের পক্ষে ছিল। কিন্তু গত শুক্রবার থেকে এদেরই আবার নৌকার পক্ষে কাজ করতে দেখা গেছে। এদিন নগরীর তালতলা, বন্দরবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় নৌকার পক্ষে পথসভা ও জনসংযোগ করেছেন সিলেট ইমাম সমিতি। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নগরীর বিভিন্ন কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক ও নেতাদের নৌকায় ভোট দেয়ার আহবান জানিয়ে ঘরোয়া বৈঠক করেছেন বলেও জানা গেছে।
অন্যদিকে বিএনপির মহানগরীর নেতারা জানিয়েছেন, ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে মেয়র প্রার্থী আরিফুলের যোগাযোগ রয়েছে। তারা ধানের শীষের পক্ষে কাজ করছেন।
এর বাইরে সিলেট নগরীতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৩০ ভাগ ভোট রয়েছে। এই ভোট নিজেদের পক্ষে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন কামরান ও আরিফ। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত নির্বাচনের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটাররা বেশির ভাগই ভোটকেন্দ্রে যাননি।
এবার তাদের ভোটকেন্দ্রে নিতে নানা প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি নিরাপত্তার ব্যাপারেও আশ্বাস দিচ্ছেন প্রার্থীরা। কামরান গত শুক্রবারও হিন্দু এবং মনিপুরী সম্প্রদায়ের নেতারা ও পুরোহিতদের সঙ্গে বৈঠক করে ভোট প্রার্থনা করেছেন। অন্যদিকে আরিফ তার দায়িত্ব পালনকালে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নাগরিকদের জন্য বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছেন। তাই এই সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে আরিফেরও গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তিনিও এদের ভোট পেতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।
এদিকে প্রধান দুই মেয়র প্রার্থী আওয়ামী লীগের বদর উদ্দিন কামরান ও বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরী এবং তাদের সমর্থকরা নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। অনেকটাই ফুরফুরে মেজাজে থাকা কামরান বলেন, সিলেটে মহাজোটের প্রত্যেক নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধভাবে প্রচারণা নেমেছে। সব জায়গাতেই নৌকার প্রতি মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন দেখেছি। এটাই আমার শেষ নির্বাচন।
আমি আশা করি আগামীকালের নির্বাচনে নগরবাসী আমাকে ভোট দেবে এবং আমি বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করব। সন্ত্রাস আর লুটপাট নয়, আমি নগরবাসীর কাক্সিক্ষত উন্নয়ন নিশ্চিত করব। পরাজয় নিশ্চিত জেনেই আমার প্রতিপক্ষ সন্ত্রাস বোমাবাজি শুরু করেছে। এসব কর্মকাণ্ডের কারণেই নগরবাসী তাদের প্রত্যাখ্যান করে নৌকার পক্ষে রায় দেবে।
অন্যদিকে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে শঙ্কা প্রকাশের পাশাপাশি জয়ের ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন আরিফ। তিনি বলেন, বিএনপি জনগণের দল। আমি বিএনপির মনোনীত প্রার্থী। এ ছাড়া গত আড়াই বছরে আমি সিলেটবাসীকে উন্নয়ন দিতে পেরেছি। তাই জনগণের ভালোবাসা ও সমর্থন আমার দিকেই থাকবে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
কোনো কারণ ছাড়াই গত কয়েকদিনে আমার আড়াই শতাধিক সমর্থক ও কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভোটের দিন কেন্দ্রে আমার এজেন্টরা থাকতে পারবে কিনা এবং ভোট সুষ্ঠু হবে কিনা তা নিয়ে আমি শঙ্কার মধ্যেও আছি। আমি শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকব এবং সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমি ফলাফল মেনে নেব।