×

জাতীয়

শেষ মুহূর্তের জমজমাট প্রচারণা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০১৮, ০১:০১ পিএম

আজ শনিবার রাত ১২টায় শেষ হচ্ছে প্রচারণা। বরিশাল সিটি নির্বাচনের প্রার্থীরা এই রোদ, এই বৃষ্টি এমন আবহাওয়াকে মাথায় নিয়ে ছুটছেন ভোটারদের ঘরে ঘরে। প্রকৃতির বৈরী আচরণ উপেক্ষা করে নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থীরা ঝাঁপিয়ে পড়েছেন শেষ মুহ‚র্তের প্রচারণায়। প্রার্থী যাননি এমন কোনো এলাকা বা ভোটার যেন বাদ না থাকে সেদিকে লক্ষ্য তাদের। শুধু প্রার্থী নয়, এ প্রক্রিয়ায় জড়িয়ে পড়েছেন উভয় দলের নেতাকর্মী এমনকি সমর্থকরাও। গানে, স্লোগানে মাইকিংয়ের মাধ্যমে নিজ দলের প্রার্থীর গুণকীর্তন জানান দিচ্ছেন তারা। এ কারণে বরিশাল নগরী এখন প্রচারণার নগরীতে রূপ নিয়েছে। নগরীর পাকা-কাঁচা জনপথ, পাড়া মহল্লা মুখরিত নির্বাচনী প্রচারণায়। গোটা নগরী সেজেছে পোস্টারে পোস্টারে। এমন কোনো রাস্তা নেই যেখানে পোস্টারের রাজত্ব নেই। শুধু মেয়রপ্রার্থীরাই নন, পোস্টার দিয়ে ছেয়ে ফেলেছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের চারপাশে আগাম দখল নিয়েছেন প্রার্থীরা। পোস্টারে ঢেকে দেয়া হয়েছে কেন্দ্রগুলো। ৫৮ বর্গকিলোমিটারের এই নগরীর যেদিকে চোখ যায় সর্বত্রই প্রার্থীদের প্রচারণা। যেমন ঝুলছে পোস্টার, তেমনই দলে দলে চলছে লিফলেট বিলি। প্রার্থীদের পক্ষে নারী, পুরুষ, তরুণ, তরুণী, যুবক, যুবতীরা রয়েছেন ভোটের প্রচারণায়। বাদ যাচ্ছে না শিশুরাও, প্রতিটি মহল্লায় কোনো না কোনো প্রার্থীর পক্ষে পোস্টার হাতে মিছিল করছে শিশুরা। চিৎকার করে ভোট যাচ্ছে নৌকা, ধানের শীষ কিংবা হাত পাখার পক্ষে। শিশুদের এমন মিছিল শুধু মেয়রপ্রার্থীদের পক্ষেই নয়, কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষেও রয়েছে এই ক্ষুদে রাজনীতিকদের প্রচারণা। এটা যেন তাদের এক উৎসবের নাম। নগরীর ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বৈদ্যপাড়ায় নৌকা নৌকা বলে মিছিল করছে ৫/৬ জন শিশু। এদের একজন সোহাগ (৮), কেন মিছিল করছো জিজ্ঞাসা করতেই চিৎকার করে উঠল, মজা আছে। কেউ কি বলেছে মিছিল করতে জানতে চাইতেই দৌড়ে ছুট সবাই। ভোট চাইতে প্রার্থীরা ঘরে ঢুকলেই পরম মমতায় পাশে বসিয়ে প্রার্থীদের মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করেন বৃদ্ধ বৃদ্ধা ভোটাররা। প্রার্থীদের মনস্কামনা পূরণ হওয়ার আশীর্বাদও থাকে তাদের জবানীতে। একাধিক প্রার্থীকে একই আশীর্বাদ করেন এমন মুরব্বিদের নিয়ে হাসি ঠাট্টাও চলে মহল্লায় মহল্লায়। কেউ আবার মান অভিমানও দেখান প্রার্থীদের সঙ্গে। অভিযোগ অনুযোগ থাকে তাদের কণ্ঠে। নানা কথাও শোনান কেউ কেউ। প্রার্থীদের নাগালে পেয়ে অনেককেই বলতে শোনা গেছে, ভোটের পরে দরজা খোলা রাইখেন ভাই। সুখ দুঃখের কথা যেন কইতে পারি। গত ১২ দিনে বরিশাল নগরীতে অবস্থান করে সরেজমিন ভোটারদের চোখেমুখে যে শঙ্কা দেখা গেছে তা অনেকটাই কাটতে শুরু করেছে। সত্যিকারের ভোট হবে কিনা, ভোটকেন্দ্রে যাওয়া যাবে কিনা, খুলনা গাজীপুরের মতো হবে কিনা- এমন নানা প্রশ্ন ছিল ভোটারদের মনে। ভোট নিয়ে তাদের যে আনন্দ ও উৎসব তা একদম ছিল না বললেই চলে। কিন্তু গত কয়েক ঘণ্টায় পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করেছে। লোকজন মুখও খুলছেন। সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার পর কথাও বলছেন। এমনকি কে কোন প্রতীকে ভোট দেবে তাও বলছেন অকপটে। তবে ব্যতিক্রমও আছে। কোন প্রতীকে ভোট দেবেন তা যেমন স্বীকার করছেন না, তেমনি ভোটের ফলাফল নিয়ে শঙ্কাও রয়েছে অনেকের মধ্যে। তাদের ধারণা ফলাফলের পরে নগরীতে ব্যাপক সহিংসতা হবে। আক্রমণের শিকার হবেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাদের লোকজন। এমনকি নির্যাতনের শিকার হতে পারেন মা-বোনরাও। প্রতিদ্বন্দ্বী ভোটের পরে দেখামু কই থাকস- এমন হুমকির কারণেই এমন আশঙ্কা নগরীতে। নগর পিতা নির্বাচনে ভোটারদের কারো কারো কাছে নগরীর উন্নয়নের ধারাবাহিকতাই অধিকতর গুরুত্ব পাচ্ছে। বিদায়ী মেয়র আহসান হাবিব কামালের গত ৫ বছরের ব্যর্থতার ধারায় ফিরতে চান না তারা। সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরনের উন্নয়নকে পুঁজি করে নৌকাকেই বেছে নিতে চান তারা। এ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ২৫নং ওয়ার্ডের নাপিতপাড়ার অপূর্ব হালদার বলেন, সাদিক আবদুল্লাহকে ভোট দিলে তিনি হিরনের চেয়েও সুন্দর নগরী উপহার দেবেন বরিশালবাসীকে। একই অভিমত ৩০নং ওয়ার্ডের গণপাড়া মহল্লার মোর্শেদা বেগমের। তিনি বলেন, নগরীর বর্ধিত এলাকা হওয়ায় আমরা উন্নয়নবঞ্চিত রয়ে গেছি। সাদিক মেয়র হলে এ এলাকার উন্নয়ন হবে। তার মতে, এ ভোটে তো সরকার বদলাবে না। সরকারে যেহেতু শেখ হাসিনা রয়েছে তার প্রার্থীরেই ভোট দিমু। এমন মতামত ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের হরিনাফুলিয়া মহল্লার সাজেদা বেগম ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাগরদী দরগাবাড়ীর তমিজ খানের। এদের প্রত্যেকের কাছেই আগে এলাকার উন্নয়ন, পরে অন্যকিছু। এদের এমন মতামতের সঙ্গে দ্বিমত রয়েছে অনেকের। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের শায়েস্তাবাদ পাওয়ার হাউজ সড়কের জহির মল্লিকের মতে, উন্নয়নের আগে গণতন্ত্র প্রয়োজন। কেননা উন্নয়নের পূর্বশর্ত হলো গণতন্ত্র, সুশাসন। গণতন্ত্র না থাকলে সুশাসন থাকে না। কাক্সিক্ষত উন্নয়নও হয় না। দুর্নীতি সমাজকে গ্রাস করে ফেলে। আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটে, এলাকায় অশান্তি বিরাজ করে যা সমাজকে নরকে পরিণত করে। তার মতে, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে ধানের শীষে ভোট দেয়া উচিত। তিনি বলেন, সিটি ভোটে সরকার পরিবর্তন হয় না। তারপরও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবি প্রতিষ্ঠায় সরকারকে বাধ্য করতে নৌকা বর্জন করে সরকারকে ম্যাসেজ দেয়া উচিত। একই মতামত ২৯নং ওয়ার্ডের কাশিপুর মহল্লার বাসিন্দা হোসনে আরা বেগমের। তার মতে, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্র উদ্ধার ও খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য ধানের শীষে ভোট দেয়া উচিত। উভয় পক্ষের এমন মতামতের সঙ্গেও ভিন্নমত রয়েছে বরিশাল নগরীতে। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পলাশপুর গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা বাহাতন নেছা বলেন, ‘একজনের পর একজন প্রার্থী আইতেছে, হেগো লোকেরা আইতাছে, খালি লোভ দেহায়। নৌকায়-ধানের শীষে ভোট চায়, কারে ভোট দিমু হেইডা খালি জিগায়, কমু ক্যা। আগে কেন্দ্রে ঠুকমু হেরপর ভোট দিমু। ভোডের দিন আউক হেরপর বুজমুআনে কারে ভোট দিমু।’

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App