×

জাতীয়

নৌকা-ধানের শীষে গুরুত্ব হারাচ্ছে ব্যক্তি ইমেজ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০১৮, ১২:৫৩ পিএম

আর মাত্র দুদিন পর সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচন। ভোটের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রধান দুই মেয়রপ্রার্থীর ব্যক্তি ইমেজের চেয়ে দলীয় প্রতীক ভোটারদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আওয়ামী লীগ সমর্থক যেসব ভোটার ব্যক্তি কামরানকে পছন্দ করেন না, তারাও নৌকা প্রতীকে ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন। আবার বিএনপি সমর্থকদের অনেকে ব্যক্তি আরিফুলকে পছন্দ না করলেও ভোটটা কিন্তু দেবেন ধানের শীষেই। শেষ মুহূর্তে এসে ভোটারদের এমন মনোভাবই প্রকাশ পাচ্ছে। এবারের সিসিক নির্বাচন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলের জন্য ‘বড় চ্যালেঞ্জ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বদর উদ্দিন কামরান ও আরিফুল হক চৌধুরীর জনপ্রিয়তা পরীক্ষার লড়াই ছাপিয়ে তা হয়ে উঠেছে উভয়ের দলের মর্যাদার লড়াই। নৌকার বিজয়ের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা হারানো গৌরব ফিরে পেতে চায়। অন্যদিকে বিএনপি সিলেটে তাদের অবস্থান অটুট রাখতে গতবারের মতো এবারো অঙ্গীকার নিয়ে মাঠে নেমেছে। বড় কথা হলো, সিসিকে এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তাই প্রধান দুই প্রতিদ্ব›দ্বীর ব্যক্তি ইমেজ ছাপিয়ে ভোটারদের কাছে দলীয় প্রতীক নৌকা ও ধানের শীষ গুরুত্ব পাচ্ছে বলে মনে করছেন স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও উভয় দলের নেতাকর্মীরা। তা ছাড়া নগরীর ভোটারদের একটি বড় অংশই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত। এদের কাছেও ব্যক্তি এবং স্থানীয় ইস্যুর চেয়ে প্রতীক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দুদলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, ২০১৩ সালের সিসিক নির্বাচনে মেয়রপ্রার্থীদের কোনো দলীয় প্রতীক ছিল না। কিন্তু এবার জাতীয় নির্বাচনের আবহে নৌকা এবং ধানের শীষ প্রতীকের মধ্যেই হবে মূল প্রতিদ্বিদ্বতা। আওয়ামী লীগের যেসব সমর্থক ব্যক্তি কামরানকে পছন্দ করেন না, গত নির্বাচনে তারা তাকে ভোট দেননি। ব্যক্তি ইমেজ বিবেচনায় আরিফকে ভোট দিয়েছিলেন। আবার বিএনপির সমর্থদের মধ্যে অনেকেই আরিফকে পছন্দ না করায় কামরানকে ভোট দিয়েছিলেন। কিন্তু এবার কামরান ও আরিফের ব্যক্তি ইমেজ ছাপিয়ে দলীয় প্রতীক বড় হয়ে উঠেছে। তাই ভোটাররা আরিফ ও কামরানকে পছন্দ-অপছন্দের বিবেচনায় না নিয়ে প্রতীক দেখেই ভোট দেয়ার কথা ভাবছেন। ভোটারদের মানসিকতার এই পরিবর্তনের কারণে এবার ভোটের চিত্র পাল্টে যাবে বলেও ধারণা করছেন তারা। এ ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সিলেট শাখার সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, জাতীয় বিষয়গুলো ক্রমান্বয়ে এতই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে যে, আসন্ন সিসিক নির্বাচনেও এর প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে দলীয় প্রতীক এবার সবার কাছেই অনেক বেশি গুরুত্ব পাবে। জাতীয় রাজনীতির ওপর ভিত্তি করেই নৌকা ও ধানের শীষের মধ্যে ভোটের ফল নির্ধারণ হবে। সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে আমরা প্রার্থীর যোগ্যতার পাশাপাশি সরকারের উন্নয়নগুলো তুলে ধরছি। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় সিসিক নির্বাচনেও নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়ার জন্য ভোটারদের কাছে আহবান জানিয়েছি। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ বলেন, অবশ্যই এবারের সিসিক নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের একটা বড় প্রভাব পড়বে। বিগত সময়ে বিএনপি তথা ধানের শীষের প্রতি জুলুম করা হয়েছে, অবিচার করা হয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা হামলার ভারে জর্জরিত। তাই সরকারের জুলুম, অত্যাচার ও অবিচারের বিরুদ্ধে ধানের শীষে ভোট দেয়ার জন্য আমরা মানুষের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক দিলদার হোসেন সেলিম বলেন, স্থানীয় নির্বাচনে সাধারণত প্রার্থীর ব্যক্তিগত যোগ্যতাকে প্রাধান্য দেন। কিন্তু এবারের সিসিক নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ও জাতীয় বিষয়গুলো বেশি প্রভাব ফেলবে। শিক্ষিত ও সচেতন ভোটাররা জাতীয় বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখেই এবার দলীয় প্রতীক নৌকা ও ধানের শীষে ভোট দেবেন। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সিলেট জেলা কমান্ডার সুব্রত চক্রবর্তী জুয়েল বলেন, এবারের নির্বাচনে সব ভোটারই কামরান এবং আরিফের ব্যক্তি ইমেজের চেয়ে প্রতীকের দিকেই বেশি মনোযোগী হবে। বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (বাকবিশিস) সিলেট মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ আহমদ বাবর বলেন, নৌকা বঙ্গবন্ধুর প্রতীক, স্বাধীনতার প্রতীক। নৌকা বাঙালি জাতির ঐক্যের প্রতীক। এবারের সিসিক নির্বাচনে নৌকা প্রতীক সিলেটের শিক্ষক, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, শ্রমিকসহ সব শ্রেণি ও পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করবে। দলীয় প্রতীকই সবার কাছে বেশি গুরুত্ব পাবে। মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সহসভাপতি মোকাদ্দেস বাবুল বলেন, প্রধান দুই প্রার্থীর জয়-পরাজয়ের ক্ষেত্রে প্রতীক বড় ফ্যাক্টর হবে। প্রতীকের সঙ্গে আবেগ জড়িত। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক নৌকা। অন্যদিকে ধানের শীষের সঙ্গেও অনেকের আবেগ জড়িত রয়েছে। তাই প্রতীকের দিকে ভোটারদের গুরুত্ব বেশি থাকবে বলে আমার ধারণা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App