×

জাতীয়

মেয়র যেই হোক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান চান নগরবাসী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০১৮, ১১:৪৭ এএম

সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরগরম রাজশাহী নগরী। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে প্রার্থীদের গণসংযোগ। বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রত্যেক ভোটারের কাছে ভোট চাইছেন তারা। নির্বাচনে জয়ী হতে নানা প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে সাধারণ ও অবহেলিত মানুষের ভাগ্য বদলে দেয়ার স্বপ্নও দেখাচ্ছেন প্রার্থীরা। এদিকে বিগত দিনগুলোতে অবহেলার শিকার হলেও নতুন মেয়রের কাছে অনেক প্রত্যাশা সাধারণ মানুষের। মেয়র হিসেবে যে-ই জিতুক না কেন, নগরবাসী চান উন্নয়ন। নগরীর ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত বুধপাড়া, মীর্জাপুর, চৌদ্দপাই, মাসকাটাদীঘি ও মহনপুর এলাকা ঘুরে দেখা য়ায়, এই ওয়ার্ডটি খুবই ঘনবসতিপূর্ণ। ভোটার সংখ্যাও ১২ হাজারের অধিক। এখান থেকেই সবচেয়ে বেশি কর পায় সিটি করপোরেশন। তবুও এ এলাকায় লাগেনি উন্নয়নের তেমন কোনো ছোঁয়া। বুধপাড়া থেকে খড়খড়ি বাইপাস পর্যন্ত প্রায় আট কিলোমিটার সড়কটি এতটাই সরু যে, একটি ট্রাক ঢুকলেই সড়কে আর দাঁড়ানোর মতো জায়গা থাকে না। বুধপাড়া এলাকার চিত্তরঞ্জন দাস বলেন, বর্তমানে টাকা ছাড়া চাকরি পাওয়া যায় না। ছেলেরা বেকার বসে আছে। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে না। আমাদের ওয়ার্ডে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এলাকায় উন্নয়নের সম্ভাবনাও অনেক বেশি। এসব প্রতিষ্ঠানে স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা গেলে অনেক পরিবার লাভবান হবে। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় সম্ভাবনা থাকলেও আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। অপরদিকে বিএনপি বা আওয়ামী লীগ যে দলের প্রার্থীই মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেবেন, তার কাছে এলাকার উন্নয়ন চান ২৯ নম্বর ওয়ার্ডবাসী। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা নিয়মিত কাজ না করায় দুর্গন্ধ ও মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ এই ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। স্থানীয় মীর্জাপুর এলাকার মুদি দোকানদার আবু তালেব বলেন, ড্রেনে ময়লা পানি আটকে থাকে। তাই মাঝে মাঝে নিজেই ড্রেন পরিষ্কার করি। এবারের নির্বাচনে যেই জিতুক আমরা নাগরিক সুযোগ-সুবিধা যেন সঠিকভাবে পাই। তিনি বলেন, এই ওয়ার্ডে পঁচিশজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ১৬ জন। তারা আবার নিয়মিত কাজেও আসেন না। তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় প্রার্থীরা আমাদের মন জোগাতে নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও পরে আমাদের কোনো খোঁজ নেন না। চাকরির প্রতিশ্রুতি দিলেও পরে কোনো ব্যবস্থা নেন না। ওই এলাকার মো. বাবু, মো. মনোয়ার এবং মো. লালচান রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। তারাও একই অভিযোগ করেন। রাস্তাঘাট সংস্কার, ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নতি এবং যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার মাধ্যমে এলাকার উন্নয়ন চান তারা। আলুপট্টি এলাকার ব্যবসায়ী কামাল জানান, পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন মোড়। অধিকাংশ সড়কে ছোট-বড় খানাখন্দ থাকলেও তা সংস্কারে দীর্ঘদিন ধরেই কোনো পদক্ষেপ নেই কর্তৃপক্ষের। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে না পারায় নগরীতে বেকারের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। এ কারণেই মাদকসেবীদের সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে বলে মনে করেন তিনি। কাজলা এলাকার আরেক বাসিন্দা মোকসেদুল ইসলামের বাড়ির সামনে চলাচলের কোনো রাস্তা নেই। ছোট্ট একটি ড্রেন থাকায় সেটিই চলাচলের একমাত্র ভরসা। আবার সেই ড্রেনটিও নোংরা। এতে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। নতুন সিটি মেয়র এসব সমস্যা দূরীকরণে কাজ করবেন বলে আশাবাদী তিনি। নগরীর ইসলামপুর, টিকাপাড়া, মীরের চকসহ কয়েকটি এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে। সাপ্লাইয়ের পানিতে প্রায়ই ময়লা ও শ্যাওলা পাওয়া যায়। আবার এই পানিও কখনো আসে, কখনো আসে না। এ অবস্থায় নতুন মেয়রের কাছে পানির সমস্যাটির দ্রæত সমাধান আশা করেন এলাকাবাসী। ইসলামপুর এলাকার হাসনা বানু (৮০) নামের এক বৃদ্ধা জানান, এ পর্যন্ত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনজনকে ভোট দিয়েছেন তিনি। নির্বাচনের আগে সবার দেখা মিললেও পরে আর কেউ খোঁজ নেয় না। অন্যদিকে রাজশাহীর ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের চকপাড়া মহল্লাটি সিটি করপোরেশনের আওতাধীন হলেও পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না এই মহল্লার মানুষ। বিদ্যুৎ বিল, পানি বিল আর খাজনা বৃদ্ধি পেলেও আয় না বাড়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে এলাকার নিম্নআয়ের মানুষগুলো। এ ছাড়াও মেহেরচন্ডী, জামালপুর, গোসর মন্ডলের মোড়সহ আরো বেশ কয়েকটি এলাকা নিয়ে গঠিত এই ওয়ার্ডে উল্লেখযোগ্য কোনো স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রও নেই। নামমাত্র একটি প্রাথমিক চিকিৎসাকেন্দ্র থাকলেও তা এলাকা থেকে দূরে। পর্যাপ্ত চিকিৎসাও সেখানে মেলে না বলে অভিযোগ ওয়ার্ডবাসীর। যিনি মেয়রের দায়িত্ব নেবেন তার কাছে এলাকায় একটি স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্র প্রত্যাশা করছেন তারা। ওই এলাকার বাসিন্দা ফজলু বলেন, দীর্ঘদিন থেকে আমাদের ওয়ার্ডটিতে তেমন কোনো উন্নয়ন কার্যক্রম নেই। ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকলেও তা পরিষ্কার করা হয় না প্রায় বছর হলো। রাস্তায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা না থাকায় সন্ধ্যার পর চলাচলেও খুব সমস্যা হয়। এলাকায় চিকিৎসাসেবাও ঠিকমতো পাওয়া যায় না। নতুন মেয়রের কাছে আমরা সামগ্রিক ও পরিকল্পিত উন্নয়ন আশা করছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App