×

জাতীয়

কয়লা ‘গায়েব’ নিয়ে কঠোর প্রধানমন্ত্রী

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০১৮, ০৯:৪৬ পিএম

কয়লা ‘গায়েব’ নিয়ে কঠোর প্রধানমন্ত্রী
দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া খনি থেকে প্রায় দেড় লাখ টন কয়লা ‘গায়েবের’ ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী কঠোর অবস্থানে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। মঙ্গলবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের প্রথম দিনের তৃতীয় অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা জানান জ্বালানি উপদেষ্টা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ বিভাগ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে জেলা প্রশাসকদের এই অধিবেশন হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এতে সভাপতিত্ব করেন। সম্প্রতি দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির বিপুলসংখ্যক কয়লার হদিস না পাওয়ার কথা জানা যায়। ২০০৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত খনি থেকে উত্তোলিত দেড় কোটি টন কয়লার মধ্যে প্রায় দেড় লাখ টনের মতো কয়লার হিসাব পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সদস্য আবু সাঈদ কয়লা খনি এলাকা গত সোমবার পরিদর্শনে যাওয়ার পর কয়লা গায়েব হওয়ার কথা প্রথমে ধরা পড়ে। এই ঘটনায় বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির (বিসিএমসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও একজন মহাব্যবস্থাপককে প্রত্যাহার করা হয়েছে। সেই সাথে আরও একজন মহাব্যবস্থাপক ও উপ-মহাব্যবস্থাপককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে কয়লা খনি কোম্পানিটির নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে দুদক এই ঘটনা তদন্তে কমিটি করেছে। সোমবার সেই কমিটি খনি এলাকা পরিদর্শনও করেছে। আবার খনি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হাবিব উদ্দিন আহমেদ, মহাব্যবস্থাপন (জিএম) আবুল কাশেম প্রদানিয়া, জিএম আবু তাহের মো. নুরুজ্জামান চৌধুরী এবং ডিজিএম খালেদুল ইসলামের বিদেশে গমন ঠেকাতে চিঠিও দিয়েছে দুদক। কয়লার অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে দেশের একমাত্র কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। এতে চরম বিদ্যুৎ সংকটে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে রংপুর বিভাগের আট জেলায়। জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডেও এর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এক লাখ ৪২ হাজার টন কয়লা গায়েবের বিষয়টি এতদিনে ধরা পড়ল কেন – এমন প্রশ্নে জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, ‘এটাই তদন্ত হচ্ছে। আমি তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্য করব না। তদন্ত করে দেখা হবে কীভাবে জিনিসটা হলো, এর দায়-দায়িত্ব কার। তদন্ত হয়ে গেলে আপনারা জানতে পারবেন।’ ‘প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে কঠোর। তিনি সব সময়, এগুলোর ব্যাপারে...কোনো দুর্নীতি, কোনো বিশৃঙ্খলা, নিয়ম-নীতির বরখেলাপ তিনি কোনো দিন সহ্য করেন না, তিনি চানও না।’ বৈঠকে বড়পুকুরিয়া খনি নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, ‘উনারা (ডিসিরা) যখন এসেছেন তখন তো সমস্যাটা অত প্রকট হয়নি। ওখানে সাময়িক কিছু জায়গায় লোডশেডিং হবে, কয়লা উৎপাদন শুরু না হওয়া পর্যন্ত। যেখানে ইন্টারাপশন হবে ওরা জানিয়ে দেবে।’ এক মাসের মধ্যে খনিতে কয়লা উৎপাদন আবার শুরু হবে বলেও আশা করেন তৌফিক। এক বছরের মধ্যে দেশের সব এলাকায় বিদ্যুৎ আগামী বছরের মধ্যে সারা দেশের সব এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছে যাবে বলেও জানান জ্বালানি উপদেষ্টা। সেই সঙ্গে বিদ্যুতের গুণগত মান উন্নয়নেও চেষ্টা চলবে বলে জানান তৌফিক। বলেন, ‘দেশে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার বৈপ্লবিক একটা পরিবর্তন হয়েছে। এর সঙ্গে সমস্যাও হয়। কোনো কোনো জায়গায় বিদ্যুতের ভোল্টেজ কম হয়, বিদ্যুৎ হয়তো কিছু সময় ইন্টারাপ্ট (ব্যাঘাত) ছিল, এগুলো তারা তুলে ধরেছেন। যাতে আমরা ভবিষ্যতে সুষ্ঠুভাবে সম্প্রসারণ করতে পারি।’ গ্রামে লোডশেডিংয়ের ভোগান্তি আছে কি না বা এ বিষয়ে ডিসিরা কিছু বলেছেন কি না- জানতে চাইলে জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, ‘বলেনি, কিন্তু পল্লী বিদ্যুতের ছোটখাট অভিযোগের কথা বলেছেন (ডিসিরা)।’ ‘চেয়ারম্যান সেই বিষয়ে অভিযোগ কেন্দ্র খুলেছেন। গ্রামের সাধারণ মানুষের কষ্ট তো আমরা চাই না। সুতরাং এটা আমরা সমাধান করি।’ ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম রুখতে ২৮৫ কোটি টাকার প্রকল্প শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু জানান, ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত এক লাখ শিশুকে ফিরিয়ে আনতে ২৮৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হবে। এর আগে জেলা প্রশাসকদের নিজ নিজ জেলায় ঝুঁকিপূর্ণ শিশু শ্রমিক কোথায় কী পরিমাণ আছে তা জরিপ করে প্রতিবেদক দিতে বলা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. শাহ কামাল বলেন, ‘জেলা প্রশাসকরা বলেছেন, বন্যার বিষয়ে তাদের প্রস্তুতি ভালো আছে। তারা যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। তবে তারা বলেছেন, নৌকার কিছু ঘাটতি আছে।’ ‘বিভিন্ন জেলায় যদি ইঞ্জিনচালিত নৌকা থাকে তবে লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা যায়। তবে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমও ভালো হবে।’ অধিবেশনে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App