×

জাতীয়

আচরণবিধি মানছেন না তিন মেয়রপ্রার্থী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০১৮, ১১:১৬ এএম

বার বার সতর্ক করেও বরিশালের মেয়র প্রার্থীদের দমাতে পারছে না ইসি। একের পর এক আচরণবিধি লঙ্ঘন করে চলছেন তারা। বাধ্য হয়ে শোকজ নোটিশ জারি করেছিলেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। কিন্তু তাও আমলে নিচ্ছেন না হেভিওয়েট তিন প্রার্থী। তারা তাদের কাজ চালাচ্ছেন নিজস্ব গতিতে। অন্যদিকে নগরীর সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের চাপা আতঙ্ক লক্ষ করা যাচ্ছে। ভোট নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চাচ্ছেন না অনেকেই। এমনকি চায়ের দোকান বা অন্যান্য আড্ডার স্থলেও নির্বাচন নিয়ে নেই সরব আলোচনা। বিভাগীয় নির্বাচন কমিশন কার্যালয় সূত্র জানায়, প্রচারণার শুরু থেকেই মেয়র প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আসতে থাকে নির্বাচন কমিশনে। অভিযোগ আমলে নিয়ে কখনো তদন্ত, কখনো তাৎক্ষণিক ব্যাখ্যা চেয়ে নোটিশ জারি করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা জরিমানাও করেছেন দুই মেয়র প্রার্থীকে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। প্রার্থীরা রুটিন ওয়ার্ক হিসেবে ভেঙে চলেছেন আচরণবিধি। নির্বাচনী প্রচারণায় সরকারি কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ, গোপন বৈঠক, মিছিল, প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীর লোকজনকে হুমকিধমকি, ধর্মের দোহাই দিয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করার তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যেই বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ অডিটোরিয়ামে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে বৈঠক করার অভিযোগে অধ্যক্ষ ডা. ভাস্কর সাহা, হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন এবং নৌকা মার্কার প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে কারণ দর্শানোর নোটিশ করা হয়েছে। তাছাড়া আচরণবিধি লঙ্ঘন করে মিছিল করায় ধানের শীষের প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার এবং ধর্মের দোহাই দিয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী ওবায়দুর রহমান মাহবুবকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে সূত্র। তবে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ, মজিবর রহমান সরোয়ার নোটিশ পাননি বলে জানিয়েছেন। আর ওবায়দুর রহমান মাহবুব নোটিশ প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে জানিয়েছেন, তিনি এর জবাব দেবেন। এদিকে গতকাল সোমবারও বরিশাল মেডিকেল কলেজের সামনে থেকে প্রায় দুই হাজার লোক নিয়ে চরের বাড়ি, খ্রিস্টান পাড়া, আর্ম পুলিশ ব্যাটেলিয়ন এলাকায় গণসংযোগ করেন বিএনপির মেয়রপ্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার। এ সময় পুরো এলাকায় যানজট তৈরি হয়। অন্যদিকে ভোটের দিন যত এগিয়ে আসছে ততই কঠোর হওয়ায় কথা জানিয়েছেন রিটার্নিং অফিসার মজিবুর রহমান। তিনি বলেন, শুরু থেকেই আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আমাদের কানে আসছিল। প্রতিপক্ষ প্রার্থীরাও লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তদন্তে গিয়ে অনেক অভিযোগের সত্যতা মেলেনি। তথ্য সঠিক হলে তাৎক্ষণিক ব?্যবস্থা নিয়েছি, যা এখনো চলমান। মুখে কুলুপ ভোটারদের : সিটি নির্বাচনের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। কিন্তু এ নিয়ে কথা বলতে মোটেও আগ্রহ নেই বরিশালের ভোটারদের। যেন এক অলিখিত নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে তাদের ওপর। কোনো এক অজানা আতঙ্কে তটস্থ তারা। ভোটের আগে যেখানে পাড়া-মহল্লায় থাকে উৎসবের আমেজ; চায়ের দোকান, অফিস-আদালত সব জায়গাতেই চলে ভোটের হিসাব-নিকাশ আর প্রার্থীদের আমলনামা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ সেখানে বরিশালে এবারের চিত্র তার উল্টো। ভোট যেন তাদের মাঝে কোনো উৎসবের বার্তা নিয়ে আসেনি। এটা যেন বিরাট অভিশাপ! যতদ্রুত ভোট পার হবে তাতেই মুক্তি তাদের। ভোট নিয়ে কথা বলতে চাইলে আগ্রহী হন না ভোটারা, এমনকি নিজের নাম পর্যন্ত ভুল বলেন। কী কারণে এমনটা করেন জানতে চাইলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ছাত্রী মনিজা মাহবুব ভোরের কাগজকে বলেন, নিজের নিরাপত্তার বিষয়টি সবার বিবেচনায় থাকে। কেউই নিজের বিপদ ডেকে আনতে চান না। এ কারণে মানুষ মুখে কুলুপ এটেছেন। তার মতে, কথা বললে তা কারো পক্ষে বা বিপক্ষে যায়। এতে ভবিষ্যতে রাজনৈতিকভাবে সমস্যা হবার শঙ্কা থাকে। একই মত ব্যক্ত করেন বরিশাল প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজী বাবুল। তার মতে, মানুষ বেহুদা ঝামেলায় জড়াবে কেন? বোবার শত্রু নেই এই পলিসি ধরছে সবাই। তিনি বলেন, কথা তো প্রার্থীরা বলছে, ভোটারদের বলার দরকার কি? ভোটারা ভোট দিলেই হলো। নগরীর নবগ্রাম রোডের বাসিন্দা বুলবুল সরদার বলেন, ৫৭ ধারা এড়াতে অনেকে কথা বলতে চান না। রিকশাচালক সিদ্দিক বলেন, ‘থাবর চোপার খাওয়ার চাইতে চুপ কইরয়া থাহা ভালো।’ মাহিন্দ্রা চালক জাকিরের মত, ‘কী অইবে মোরা বেবাকতে জানি। কতা কইয়া কি লাভ অইবে।’

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App