×

জাতীয়

বড়পুকুরিয়ায় ১ লাখ ৪২ হাজার টন কয়লার হদিস নেই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ জুলাই ২০১৮, ১২:৩৫ পিএম

বড়পুকুরিয়ায় ১ লাখ ৪২ হাজার টন কয়লার হদিস নেই
পার্বতীপুরে বড়পুকুরিয়া খনির কোল ইয়ার্ডে কাগজ-কলমে মজুদ কয়লার পরিমাণ প্রায় দেড় লাখ টন। কিন্তু বাস্তবে রয়েছে মাত্র ৫-৬ হাজার টন। অবশিষ্ট ১ লাখ ৪২ হাজার টন কয়লার কোনো হদিস নেই। এ যেন কাজীর গরু খাতায় আছে গোয়ালে নেই। এত বিপুল পরিমাণ কয়লা উধাও হয়ে যাওয়ায় খনির মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) নুরুজ্জামান চৌধুরী ও উপমহাব্যবস্থাপক (স্টোর) খালেদুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিন আহমদকে অপসারণ এবং মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও কোম্পানি সচিব) আবুল কাশেম প্রধানিয়াকে বদলি করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পেট্রোবাংলা এ পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এ ঘটনায় পেট্রোবাংলার পরিচালক (মাইন অপারেশন) মো. কামরুজ্জামানকে আহŸায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এদিকে কয়লার অভাবে ৪-৫ দিনের মধ্যে বড়পুকুরিয়া ৫২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উত্তোলনযোগ্য কয়লার মজুদ শেষ হয়ে যাওয়ায় গত ১৬ জনু থেকে বড়পুকুরিয়া খনির কয়লা উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। পুনরায় কয়লা উত্তোলন শুরু হবে আগস্ট মাসের শেষ দিকে। এ সময়ের মধ্যে পার্শ্ববর্তী বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক ৫২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু রাখার জন্য জন্য প্রয়োজনীয় কয়লার মজুদ রয়েছে বলে ইতোপূর্বে কয়েক দফা পিডিবিকে নিশ্চিত করে খনি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু খনি কর্তৃপক্ষ গত ৩-৪ দিন আগে পিডিবিকে জানিয়ে দেয় খনির কোল ইয়ার্ডে কয়লার মজুদ প্রায় শেষ পর্যায়ে, বিদ্যুৎকেন্দ্রে আর বেশি দিন কয়লা সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। সেই সঙ্গে তারা বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা সরবরাহ কমিয়ে দেয়। বর্তমানে প্রতিদিন মাত্র ৮০০ থেকে ১ হাজার টন কয়লা সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে করে উৎপাদন কমে দাঁড়িয়েছে ১৪০ মেগাওয়াটে। সূত্র মতে, খনি কর্তৃপক্ষের হিসাবে কোল ইয়ার্ডে কয়লা থাকার কথা প্রায় দেড় লাখ টন। কাগজ-কলমে আছেও তাই। কিন্তু বাস্তবে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ছিল মাত্র ৫-৬ হাজার টন। ১ লাখ ৪২ হাজার টন কয়লার কোনো হদিস নেই। খনির একটি সূত্র জানায়, খনি ভ‚গর্ভ থেকে কয়লা উত্তোলনের সময় পানির সঙ্গে মিশে, ডাস্ট হয়ে বাতাসে ওড়াসহ বিভিন্নভাবে কয়লা বিনষ্ট হয়। কিন্তু উৎপাদন ঠিকাদার আন্ডারগ্রাউন্ডে যে পরিমাণ কয়লা সরবরাহ করে কাগজ-কলমে সেই হিসাব সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া ২০০৫ সালের অক্টোবর মাস থেকে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার পর থেকে খনির কোল ইয়ার্ড কখনো খালি হয়নি। এর মাঝে আগুনে পুড়েও বিপুল পরিমাণ কয়লা বিনষ্ট হয়। দীর্ঘদিন ধরে কোল ইয়ার্ডে বিপুল পরিমাণ কয়লার ঘাটতি ছিল। খনি কর্তৃপক্ষ এত দিন তা সমন্বয় করেনি এবং কোল ইয়ার্ড খালি না হওয়ায় এত দিন বিষয়টি ধরাও পড়েনি। সূত্র মতে, কয়লার অভাবে বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে উপনীত হওয়ায় পেট্রোবাংলা ও খনি কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পেট্রোবাংলা এক অফিস আদেশে খনির মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) নুরুজ্জামান চৌধুরী ও উপমহাব্যবস্থাপক (স্টোর) খালেদুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করে। এ ছাড়া ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিন আহমদকে অপসারণ করে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের দপ্তরে সংযুক্ত করা হয় এবং মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও কোম্পানি সচিব) আবুল কাশেম প্রধানিয়াকে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড সিরাজগঞ্জে বদলি করা হয়। বড়পুকুরিয়া খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব (অতিরিক্ত) দেয়া হয়েছে পেট্রোবাংলার পরিচালক আইয়ুব খানকে। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মো. ফয়েজ উল্লাহ ভোরের কাগজকে জানান, হঠাৎ করে কেন কয়লা নেই এ বিষয়টি তদন্তের জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কয়লা মজুদ কেন নেই সে সম্পর্কে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পেলে বলা যাবে। তিনি আরো বলেন, পিডিবিকে গ্যাস সরবরাহ বাড়িয়ে দিয়ে অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন বৃদ্ধি করে সংকট মোকাবিলার চেষ্টা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক ৫২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে ২৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি ও ১২৫ মেগাওয়াট করে আরো দুটি ইউনিট রয়েছে। তিনটি ইউনিট পূর্ণ উৎপাদনে থাকলে প্রতিদিন সাড়ে ৬ হাজার টন কয়লার প্রয়োজন হয়। ১২৫ মেগাওয়াট করে উৎপাদন ক্ষমতার ১নং ও ২নং ইউনিট বড় ধরনের (জেনারেল ওভারহোলিং) মেরামতের জন্য মাসাধিককাল ধরে বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে চালু রয়েছে ২৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩নং ইউনিটটি। ইউনিটটি পূর্ণ ক্ষমতায় উৎপাদনে গেলে প্রতিদিন সাড়ে ৪ হাজার টন কয়লার প্রয়োজন হয়। কিন্তু সরবরাহ দেয়া হচ্ছে মাত্র ৮০০ থেকে ১ হাজার টন কয়লা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App