×

মুক্তচিন্তা

নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নে আদৌ সাফল্য আসবে?

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ জুলাই ২০১৮, ০৮:২০ পিএম

ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থার আধুনিকায়নে যে প্রকল্পই হাতে নেয়া হোক না কেন, তা বাস্তবায়নের পর যথাযথ কার্যকর করতে হলে প্রথমেই দরকার পরিবহন খাতের অরাজকতা দূর করা। এ ছাড়া প্রয়োজন সড়ক প্রশস্তকরণ, গণপরিবহনের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। এসব শর্ত পূরণ না করে নতুন প্রকল্পের বাস্তবায়নে আদৌ সাফল্য আসবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়।

ঢাকায় এখন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা হাতের ইশারায় আর বাঁশি ফুঁকে নিয়ন্ত্রণ করছেন যানবাহন। কোথাও কোথাও ট্রাফিক পুলিশকে রশি দিয়েও যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যায়। কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপিত বেশিরভাগ ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যাল অকেজো হয়ে পড়ায় পুরনো এনালগ পদ্ধতিতে চলছে এই ব্যবস্থা। এতে যানজটের মাত্রা দিনদিন বাড়ছে। সড়ক ব্যবস্থাপনার বাস্তবতা অনুযায়ী ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যাল স্থাপন করা না হলে যানজট নিরসনে কোনো সফলতা আসবে বলে মনে হয় না।

জানা যায়, যানজট নিরসনে আধুনিক ট্রাফিক সিগন্যালের কাজে বেশ কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ২০০০ সালের দিকে ঢাকা আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পের আওতায় ৭০টি পয়েন্টে আধুনিক ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি বসানোর কাজ শুরু হয়। শেষ হয় ২০০৮ সালে। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবহার না হওয়ায় অল্পদিনেই বেশির ভাগ বাতি অকেজো হয়ে পড়ে। একই সংস্থার অর্থায়নে ২০১০-১১ অর্থবছরে নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ (কেইস) নামে আরেকটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। এই প্রকল্পের আওতায় স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা গড়ে তুলতে প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে সরঞ্জাম কেনা হয়। এর আওতায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৯২টি মোড় বা ইন্টারসেকশনে সোলার প্যানেল, টাইমার কাউন্ট-ডাউন, কন্ট্রোলার ও ক্লেব স্থাপন করা হয়। এ স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থাও এখন অকার্যকর। আর যেগুলো চালু আছে সেসব সিগন্যালে লাল, হলুদ, সবুজ বাতি জ্বললেও যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যায় ‘হাত ও লাঠি’ উঁচিয়ে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছেন, ঢাকা শহরের যানবাহনের চাপের বাস্তবতার কারণে ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যাল মানা সম্ভব হচ্ছে না। প্রধান সড়কগুলোতে রিকশা চলাচলের কারণেও ডিজিটাল সিগন্যাল মানা কঠিন। এই অবস্থায় মহানগরীতে যানজট লেগে আছে। আর যানজট মোকাবেলায় হিমশিম খেতে হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশকে। নষ্ট হচ্ছে নগরবাসীর কর্মঘণ্টা। ডিজিটাল সিগন্যাল বিড়ম্বনার ব্যর্থতা নিয়ে চলছে ডিএমপি আর সিটি করপোরেশন যুদ্ধ। তারা একে অপরের কাঁধে চাপাচ্ছে সমন্বয়হীনতার দোষ। স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থায় সুফল রয়েছে কিন্তু এ ব্যবস্থা চালুর আগে আনুষঙ্গিক অন্যান্য কর্ম সম্পন্ন করা জরুরি ছিল। মহানগরীতে সব ফুটপাত হকার আর ভিখারিদের দখলে। তাছাড়া যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা, অনিয়ন্ত্রিত রিকশা চলাচলসহ ট্রাফিক ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলার যে কারণগুলো রয়েছে, সেসব দূর না করে ডিজিটাল সিগন্যাল ব্যবস্থা কার্যকর করা প্রায় অসম্ভব। রাস্তার সংখ্যা ও পরিসরের তুলনায় অত্যধিক যানবাহনও এ ক্ষেত্রে একটি সমস্যা বটে। সড়কে ধারণক্ষমতার অধিক যানবাহন চলাচল করলে যত আধুনিক পদ্ধতিই চালু করা হোক না কেন- যানজট সহনীয় পর্যায়ে নামবে না। ডিজিটাল সিগন্যাল কার্যকর করতে নগরীর ৬২টি পয়েন্টে রিমোট কন্ট্রোল যন্ত্র চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে সিটি করপোরেশন। ইতোমধ্যেই এ ব্যাপারে টেন্ডার, ওয়ার্ক অর্ডার হয়েছে। আগামী আগস্টের মধ্যে রিমোট কন্ট্রোল ব্যবস্থা চালু করা যাবে বলে তারা আশা করা হচ্ছে। ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থার আধুনিকায়নে যে প্রকল্পই হাতে নেয়া হোক না কেন, তা বাস্তবায়নের পর যথাযথ কার্যকর করতে হলে প্রথমেই দরকার পরিবহন খাতের অরাজকতা দূর করা। এ ছাড়া প্রয়োজন সড়ক প্রশস্তকরণ, গণপরিবহনের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। এসব শর্ত পূরণ না করে নতুন প্রকল্পের বাস্তবায়নে আদৌ সাফল্য আসবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App