×

জাতীয়

চট্টগ্রামে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে কিশোর অপরাধ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ জুলাই ২০১৮, ১২:৩১ পিএম

চট্টগ্রামে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে কিশোর অপরাধ
চট্টগ্রামে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে কিশোর অপরাধ। খুন, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, দাঙ্গা-হাঙ্গামাসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে কিশোর-তরুণ অপরাধীরা। নগরীতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে অর্ধশত কিশোর গ্যাং। তাদের নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ। কথিত বড় ভাইদের রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এসব বেপরোয়া ও ভয়ঙ্কর কিশোর অপরাধী নগর ছাড়িয়ে গ্রামেও নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েছে। আধিপত্য বিস্তার, বড় ভাই ছোট ভাই দ্বন্দ্ব ও স্কুলের মতানৈক্য এবং তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে এসব কিশোর গ্যাং নানা ধরনের অপরাধে জড়িত। নগরীতে সংঘটিত বেশ কয়েকটি খুন, ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণ ও দস্যুতার ঘটনায় যারা আটক হয়েছে তাদের বেশিরভাগ উঠতি বয়সী। এদিকে স¤প্রতি বড় ভাই নামধারী সন্ত্রাসীর ছত্রছায়ায় থাকা নগরীর প্রায় ৫০ জন কিশোর অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেছে বিভিন্ন থানায়। তারা বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড করে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করতেন। গত মঙ্গলবার রাতে সাতকানিয়া উপজেলার রাস্তার মাথা এলাকা থেকে ৩ কিশোর অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গত ১৬ জুলাই আবদুল হামিদ নামে এক ব্যবসায়ীর পেটে ছুরি ঠেকিয়ে ৪ কিশোর অপরাধী টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনতাই করেন। গ্রেপ্তারকৃত কিশোর অপরাধীরা হচ্ছেন সাকিব (১২), মো. রায়হান (১৬) ও মো. হোসেন (১৭)। অপর কিশোর রায়হারকে (১৫) গ্রেপ্তার অভিযান চলছে। সিএমপির এক কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ‘স্কুল ছাত্রলীগের’ নামে এসব কিশোর গ্যাং গড়ে উঠে। যারা নগরীর স্টেশন রোড, বিআরটিসি মোড়, কদমতলী, চকবাজার, মেডিকেল হোস্টেল, শিল্পকলা একাডেমি, সিআরবি, খুলশি, ফয়েস লেক, ডেবারপার, চান্দগাঁও শমসের পাড়া, ফরিদের পাড়া, আগ্রাবাদ সিজিএস কলোনি, সিডিএ, ছোটপুল, হালিশহর, বন্দর কলোনি ও পতেঙ্গার বেশ কয়েকটি এলাকায় মাদক বেচাকেনাসহ মোটরসাইকেল ও সাইকেল ছিনতাই, গান-বাজনা, খেলার মাঠ, ডান্স ও ডিজে পার্টি ও ক্লাবের আড্ডাসহ বেশ কিছু বিষয় নিয়ন্ত্রণে মরিয়া। নিজ এলাকা ছাড়িয়ে অনেক সময় তারা নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড চালায়। এরকম নগরীর ১৬ থানা এলাকায় প্রায় অর্ধশত কিশোর গ্যাং চক্রের তথ্য পুলিশের হাতে এসেছে। সাস্প্রতিক সময়ে নগরে কিশোর অপরাধ বৃদ্ধির বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ-সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম ও অপারেশন) আমেনা বেগম ভোরের কাগজকে বলেন, পরিবারে সন্তানদের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় বাড়ছে কিশোর অপরাধ। পরিবারের উচিত তাদের সন্তানদের কাজ মনিটরিং করা। তিনি বলেন, কিশোর অপরাধ দমনে অপরাধীদের নামের তালিকা তৈরি করেছে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ। ইতোমধ্যে তালিকাভুক্ত বেশকিছু কিশোর অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সিএমপির প্রতিটি থানায় নির্দেশ দেয়া হয়েছে এখন থেকে সন্ধ্যার পর কিশোর বা শিক্ষার্থীরা বাইরে আড্ডা দিলে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। সিএমপির উপকমিশনার (দক্ষিণ) এসএম মোস্তাইন হোসাইন ভোরের কাগজকে বলেন, গত এক দশকে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এসব গ্রুপের সদস্যরা বেপরোয়া হয়ে উঠে। শুধু পুলিশ ব্যবস্থা নিয়ে কিশোর অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। কিশোরদের রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া বন্ধ করতে হবে। কিশোর অপরাধ বন্ধ করতে পারিবারিক ও সামাজিক অনুশাসন বাড়াতে হবে। গত ১৭ জুন রাতে নগরীর হালিশহর আর্টিলারি রোডে ছুরিকাঘাতে মো. সুমন (১৭) নামে এক গ্যারেজ কর্মচারীকে খুনের ঘটনায় ১০ কিশোরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার কিশোরদের স্বীকারোক্তি মতে পুলিশ সুমন খুনে ব্যবহৃত ছোরা এবং ছিনতাই করা মোবাইল উদ্ধার করে। গত ১৭ জুন কিশোর গ্যাংস্টারের বলি হয় অনিক। ছুরিকাঘাতে অনিককে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামিরা সকলেই কিশোর বয়সের। গত ১৮ জুন রাতে নগরীর বাকলিয়ার মিয়া খান নগর এলাকায় ছুরিকাঘাতে জসিম উদ্দিন (২০) খুনের ঘটনায় মূল আসামিসহ ৫ কিশোর-যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গত ২৭ মে সকালে নগরীর মধ্যম হালিশহরে ব্যাংক কর্মকর্তা সজল নন্দীকে ২৯ লাখ টাকার জন্য খুন করে তিন কিশোর। এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় জয় (১৬), প্রতীক (১৬), জিকু (১৭) নামে ৩ কিশোরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গত ২ মে সকালে নগরের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত থেকে সানসাইন স্কুল এন্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্রী তাসফিয়া আমিনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তাসফিয়া হত্যাকান্ডে দায়েরকৃত মামলায় ৬ আসামির সবাই কিশোর। এ ঘটনায় আদনান মির্জা ও আসিফ মিজান নামে দুই কিশোরকে আটক করে পুলিশ। গত ২১ মে নগরীর কামাল বাজারে খুর দিয়ে গলা কেটে আরাফাতকে (২০) খুনের ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামিদের অধিকাংশই কিশোর। এ ছাড়া গত ১৬ জানুয়ারি নগরীর কলেজিয়েট স্কুলের মেধাবী শিক্ষার্থী আদনান ইসফার (১৫) নামে এক কিশোরকে হত্যা করা হয়। কিশোর অপরাধের বলি আদনান হত্যায় জড়িতরা সবাই কিশোর। এ ছাড়া গত ১৬ ফেব্রুয়ারি নগরীর মুরাদপুরে গ্যাংস্টার সদস্যদের দ্বারা গুলিবিদ্ধ হন সিএমপির এএসআই আবদুল মালেক। ওইদিন রাতে গ্রেপ্তার হয়েছিল দুই কিশোর। এরা দুজনই এসএসসি পরীক্ষার্থী এবং নগরীর নামি-দামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App