মঠবাড়িয়া কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর বেহালদশা,
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০১৮, ০২:৫০ পিএম
মঠবাড়িয়া উপজেলার ৪০টি কমিউনিটি ক্লিনিকের অধিকাংশের বেহালদশা। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় ঝুঁকির মধ্যেই চালাতে হচ্ছে চিকিৎসা কার্যক্রম। পাশাপাশি ক্লিনিকে যাতায়াতের রাস্তা, বিদ্যুৎ, পানি সংকট ও টয়লেটের সুব্যবস্থা না থাকায় প্রতিদিনই রোগী ও হেলথ কেয়ার প্রোভাইডরদের সমস্যায় পড়তে হয়।
উপজেলার সাপলেজার হাজীগঞ্জ বাজার সংলগ্ন কাদের মাওলানা বাড়ি, উত্তর মিঠাখালী (মাঝেরপুল), পশ্চিম মিঠাখালী, তুষখালী ইউনিয়নের বান্ধাঘাটা, ধানীসাফার তেঁতুলতলা, দেবত্রসহ বেশ কিছু কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা গেছে, ভবনের ছাদে বড় বড় ফাটল ধরেছে। দেয়ালের পলেস্তারা খসে রড বের হয়ে গেছে। সামান্য বৃষ্টিতেই ছাদ চুইয়ে মেঝেতে পানি পড়ে। টয়লেটগুলো ব্যবহারের জন্য পানির ব্যবস্থা না থাকায় রোগীরা টয়লেট ব্যবহার করতে পারছেন না। এ ছাড়া অধিকাংশ ক্লিনিকেই নেই কোনো বিদ্যুৎ সংযোগ। অবকাঠামোগত সমস্যাসহ বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডর (সিএইচসিপি) তাদের চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি মাসিক প্রতিবেদন তৈরিসহ নানা কাজে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
ঠান্ডা জনিত সমস্যার চিকিৎসা নিতে আসা তেঁতুলতলা কমিউনিটি ক্লিনিকে বৃদ্ধা রিনা বেগম জানান, ‘ক্লিনিকে আইতে ভয় লাগে বাবা। কোন সময় বিল্ডিং ভাইঙ্গা চাপা পড়ি’।
তুষখালীর বান্ধাঘাটা কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি গোপাল চন্দ্র তালুকদার জানান, প্রতিদিন গড়ে ৫০/৬০ জন রোগীর চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকি। ক্লিনিকের সংকীর্ণ এ রুমে রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়। এ ছাড়া রাস্তা না থাকায় বর্ষার সময়ে রোগীদের ক্লিনিকে আসতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
তেঁতুলতলা কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপিরা জীবন কৃষ্ণ সরকার বলেন, পুরনো ভবন হওয়ায় ক্লিনিকে নানা সমস্যা লেগেই আছে। দরজা-জানালা ভাঙা বিধায় ক্লিনিকে ওষুধ, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র রাখা ঝুঁকিপূর্ণ। এ ছাড়া নেই কোনো প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র।
কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি কমিটির সভাপতি বনি আমীন জানান, পুরনো ও ঝুঁকিপূর্ণ কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো দ্রæত সংস্কার প্রয়োজন। সংস্কারের জন্য এ বিষয়ে লিখিত ও মৌখিকভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জামাল মিয়া শোভন জানান, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর অধিকাংশই সংস্কার করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে সাপলেজা কাদের মিয়াবাড়ি ও মাঝেরপুল কমিউনিটি ক্লিনিক পুনর্নির্মাণের টেন্ডার আহŸান করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকি ক্লিনিকগুলো সংস্কার করা হবে।
সংশিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে ১৯৯৬ সালে তৎকালীন সরকার কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করে। সেই থেকে ক্লিনিকগুলোতে স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার কল্যাণ সহকারীরা স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে এলেও ২০০১ সালের পরে তা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পুনরায় কমিনিউটি ক্লিনিকগুলো চালু করে প্রতিটি ক্লিনিকে একজন করে সিএইচসিপি নিয়োগ দেয়া হয়। সিএইচসিপি, স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার কল্যাণ সহকারীদের সমন্বয়ে ওই সব কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।