×

জাতীয়

অবৈধ বলে খুলে নেয়ার পর উৎকোচে পুনঃস্থাপন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০১৮, ১১:৫৭ এএম

অবৈধ বলে খুলে নেয়ার পর উৎকোচে পুনঃস্থাপন
বড়লেখায় এক গ্রাহকের বৈদ্যুতিক মিটার লুকিয়ে খুলে নিয়ে চার দিন পর টাকার বিনিময়ে মিটারটি পুনরায় স্থাপন করা হয়েছে। এমন অভিযোগ উঠেছে পল্লী বিদ্যুতের বড়লেখা আঞ্চলিক কার্যালয়ের এক ইঞ্জিনিয়ার, কর্মকর্তা ও এক লাইনম্যানের বিরুদ্ধে। তীব্র গরমে পরিবারের সদস্যদের কষ্ট দিয়ে অমানসিক শাস্তি, হয়রানি ও অনিয়মের অভিযোগ করা হয়েছে পরিবারটির পক্ষ থেকে। পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয়সহ এলাকায় ঘটনাটি জানাজানি হলে তোলপাড় শুরু হয়। অবৈধ পন্থায় গ্রাহকদের মিটারের চাবি ভেঙে, মিটার খুলে নিয়ে জরিমানা, ভীতি দেখিয়ে বাইরের দালাল চক্রের যোগসাজশে দফারফা করে গ্রাহক হয়রানি করা হয়। ভয়ে কেউ অভিযোগ বা প্রতিবাদ করতে সাহস পান না, পাছে যদি বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয়সহ বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, গ্রাহক হয়রানি করে, টাকায় চুক্তিতে মিটার সংযোগ দিয়ে বাড়তি আয়ে লিপ্ত রয়েছে একটি চক্র। তাদের লাগাম টেনে ধরতে অফিস কর্তা নানা চেষ্টা চালাচ্ছেন। এমনকি এক ইঞ্জিনিয়ার অফিস রোস্টার ভেঙে লাইনম্যানদের দিয়ে চুক্তিবদ্ধ কাজ করে নেন। এ নিয়ে অফিসে একে অন্যের বাদানুবাদের ঘটনাও ঘটে। আলাপকালে ডিজিএম সুজিত কুমার বিশ্বাস জানান, চেইন অব কমান্ড ফিরিয়ে আনতে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। জানা যায়, গত ২১ জুন উপজেলার গ্রামতলার লন্ডন প্রবাসী আপ্তাব আলীর বাড়ির বৈদ্যুতিক মিটারটি বোর্ডসহ বাড়ির লোকজনের অলক্ষ্যে খুলে নেন পল্লী বিদ্যুতের দুব্যক্তি। বাড়িতে থাকা আপ্তাব আলীর বড় ভাইয়ের স্ত্রী জানান, এ সময় কেউ বাড়িতে ছিলেন না। তিনি পাশের বাড়ি থেকে ফেরার পথে দেখতে পান পল্লী বিদ্যুতের দুব্যক্তি বোর্ডসহ একটি মিটার নিয়ে মোটরসাইকেলে চলে যাচ্ছেন। ঘরে ফ্যান চালাতে গিয়ে লক্ষ্য করেন তা চলছে না। পাশের ঘরে ফ্যান চলার শব্দ শুনে তিনি মিটার বোর্ডের কাছে গিয়ে দেখেন তাতে মিটার নেই। অবৈধ হওয়ার কারণে পল্লী বিদ্যুতের লোকেরা তাদের মিটার খুলে নিয়েছে এমন সমালোচনা ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। এরপর টাকার বিনিময়ে মিটারটি বসিয়ে দিতে বিভিন্ন মাধ্যমে তারা বাড়ির মালিক মঈনউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর ২৪ জুন পল্লী বিদ্যুতের লাইনম্যান রেজাউল করিম বাড়িতে গিয়ে মিটারটি পুনঃসংযোগ দিতে ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। অন্যথায় অফিসিয়ালি মিটারটি আনতে মামলাসহ নানা ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হবে। মামলা, জরিমানার পরিমাণ, গরমের কষ্ট আর সন্তানদের লেখাপড়ার কথা ভেবে মঈনউদ্দিন অর্ধেক টাকা দিতে সম্মত হয়ে কাকুতি-মিনতি করেন। লাইনম্যান বলেন, বিষয়টি এজিএম ও ইঞ্জিনিয়ার জানেন। তাদের ৫ হাজার টাকা করে দিতে হবে। বকেয়া বিল ও সংযোগ ফি দেয়ার পর যে টাকা থাকবে তাতে তার পোষাবে না। পরবর্তী সময়ে লাইনম্যান রেজাউল করিম রাজি হয়ে বিদ্যুৎ বিলের কাগজ আর নগদ ৩ হাজার টাকা নেন। অবশেষে ওই দিন বিকেলে মিটারটি পুনঃস্থাপন করে দিলে লাইনম্যানকে আরো ৫ হাজার টাকা দিতে হয়। ভাঙা বোর্ডের টুকরার উপর চাবি ছাড়া মিটারটি বসিয়ে দেয়া হয়েছে বলে মঈনউদ্দিন জানান। তদন্তে গিয়ে পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএমও তা দেখে এসেছেন। লন্ডন প্রবাসী আপ্তাব আলী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় জানান, পিডিবির সময়কার বিদ্যুৎ লাইনে পল্লী বিদ্যুৎ খুঁটি, সার্ভিস ড্রপ তারসহ মিটার সংযোগ দিয়েছে। ২০ বছর পর তাদের লোকজন অবৈধভাবে মিটার খুলে নিলে আমার সামাজিক সম্মান ক্ষুণœ করেছে। বিষয়টি সংস্থার উচ্চ পর্যায়ে জানিয়ে আদালতে মামলা করতে তিনি তার ভাই মঈনউদ্দিনকে বলে দিয়েছেন। লাইনম্যান রেজাউল করিম জানান, তিনি শুধু আদেশ পালন করেছেন। আলাপকালে মিটারটি খুলে নেয়ার ব্যাপারে বড়লেখা পল্লী বিদ্যুতের জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার বিদ্যুৎ দাস জানান, মিটারটি অবৈধ সন্দেহ হওয়ায় খুলে আনা হয়েছিল। তবে বিষয়টি স্যারের জানা ছিল। তবে মিটার আনার আগে সে ব্যক্তি সম্পর্কে খোঁজ না নিয়ে আনাটা ভুল ছিল। বড়লেখা পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম সুজিত কুমার বিশ্বাস অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা স্বীকার করে জানান, তিনি অবগত হওয়ার পরই খুলে আনা মিটারটি পুনঃস্থাপনের নির্দেশ দেন। ঘটনার তদন্ত চলছে বলে তিনি জানান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App