×

মুক্তচিন্তা

স্কুলে শিক্ষার্থী নির্যাতনের শেষ কোথায়?

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০১৮, ০৭:৩৯ পিএম

দেশের সব স্কুল শিক্ষার্থীবান্ধব হোক, শিক্ষার্থীদের প্রতি মমত্ববোধসম্পন্ন ও দায়িত্বশীল হোক। সে ক্ষেত্রে শিক্ষকদের মানসিকতার পরিবর্তন সবার আগে জরুরি। পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শারীরিক শাস্তির বিরুদ্ধে সরকারের জারি করা পরিপত্রের বাস্তবায়ন যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং আইন লঙ্ঘনকারী শিক্ষকদের বিচারের আওতায়ও আনতে হবে।

শিশুর অধিকার সুরক্ষায় যথেষ্ট আইন থাকলেও বাস্তবে তার প্রয়োগ নেই বললেই চলে। বেশির ভাগ মানুষই জানে না, শিশুদের ওপর নির্যাতন করা হলে শাস্তির বিধান রয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের ওপর শারীরিক ও মানসিক শাস্তিকে অভিভাবক-শিক্ষক সবাই সাধারণ ঘটনা হিসেবেই ধরে নেন। শিক্ষকদের এ ধরনের আচরণ দেশের বিভিন্ন স্কুলে ঘটার খবর গণমাধ্যমে প্রতিনিয়ত আসছে। এর থেকে উত্তরণে সচেতনতার বিকল্প নেই।

বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত বছর প্রথম পাঁচ মাসের (জানুয়ারি থেকে মে) তুলনায় চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে ৬৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। ২০১৭ সালে প্রথম পাঁচ মাসে ২৫ জন শিশু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্যাতনের শিকার হয়। চলতি বছর এ সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৬৮। এই পরিসংখ্যান বলে দিচ্ছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ওপর কি পরিমাণ নির্যাতন হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তির হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় ২০১০ সালে একটি রিট পিটিশন দায়ের করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালের ১৩ জানুয়ারি হাইকোর্ট এক রায়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি দেয়ার নামে নির্যাতনকে সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করে। শিক্ষার্থীদের ওপর শারীরিক নির্যাতন বন্ধে আইন পাসের পরও পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। সরকার আইন পাস করলেও শিক্ষকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ না নেয়ায় আইনের ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের ঘটনা একটি স্পর্শকাতর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক সময় এ নির্যাতন শারীরিক ও মানসিক পর্যায়ে হয়ে থাকে, যা মানবাধিকারেরও লঙ্ঘন। অথচ এ ব্যাপারে শিক্ষক বা অভিভাবকরা তেমন সচেতন নন। শাস্তি কখনোই শিক্ষার্থীর চরিত্র বা আচরণে পরিবর্তন ঘটায় না। এসবের পাশাপাশি আরো একটি বড় কারণ হচ্ছে ‘শিশু মনোবিজ্ঞান’ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের, বিশেষ করে শিক্ষক, প্রশিক্ষক ও অভিভাবকদের তেমন কোনো ধারণা নেই। তাই তারা মনে করেন শাস্তি দেয়াই শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণের ও নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার। এমন অবস্থায় শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি থেকে সুরক্ষার জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট সরকারি নির্দেশনার যথাযথ বাস্তবায়ন।

শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের একটি নিয়ম আছে। শিক্ষকদের আচরণ কেমন হবে, বিশেষ করে কোমলমতি ছাত্রদের প্রতি শিক্ষকদের আচরণ কেমন হওয়া উচিত তা শিক্ষক প্রশিক্ষণে শেখানো হয়। কিন্তু দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় সেটা কতখানি মেনে চলা হয়, শিক্ষকরাই বা এসব নিয়ম কতটা মেনে চলেন এ নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠছে। আমরা চাই, সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী নির্যাতন বন্ধ হোক, পাশাপাশি দেশের সব স্কুল শিক্ষার্থীবান্ধব হোক, শিক্ষার্থীদের প্রতি মমত্ববোধসম্পন্ন ও দায়িত্বশীল হোক। সে ক্ষেত্রে শিক্ষকদের মানসিকতার পরিবর্তন সবার আগে জরুরি। পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শারীরিক শাস্তির বিরুদ্ধে সরকারের জারি করা পরিপত্রের বাস্তবায়ন যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং আইন লঙ্ঘনকারী শিক্ষকদের বিচারের আওতায়ও আনতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App