×

জাতীয়

হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির তদন্তে দুদক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০১৮, ১১:৩৩ এএম

হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির তদন্তে দুদক
সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে সাব-রেজিস্ট্রার ও দলিল লেখক সিন্ডিকেট করে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দেশের প্রায় সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে বলতে গেলে একই কায়দায় দুর্নীতির কারণে বছরে হাজার কোটি টাকার উপরে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। রাজস্ব ফাঁকির টাকায় সাব-রেজিস্ট্রারসহ অনেকে যেমন আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন তেমনি জনদুর্ভোগ অসহনীয় মাত্রায় পৌঁছেছে। রাজস্বের ওই টাকা উদ্ধারে এবার উদ্যোগ নিয়েছে দুদক। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে প্রক্রিয়া। ঢাকা ও আশপাশের বেশ কয়েকটি সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের অনিয়মের ব্যাপারে শুরু হয়েছে খোঁজখবর ও অনুসন্ধান। ঢাকা জেলার সাভার ও আশুলিয়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের গত এক বছরের সব ধরনের দলিল পর্যালোচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। এ ছাড়া দালাল ও ঘুষের টাকা ধরতে দেশের যে কোনো সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে যে কোনো সময় ঝটিকা অভিযানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। এ জন্য প্রয়োজনে পাতা হবে ফাঁদ। দুদক সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। গত ৬ জুন বুধবার রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ঢাকার কোতোয়ালি, গুলশান ও তেজগাঁওয়ের সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সেবা কার্যক্রম নিয়ে দুদকের গণশুনানিতে সাব-রেজিস্ট্রার ও সিন্ডিকেটের দুর্নীতি, অনিয়মের খন্ড চিত্র উঠে আসে। ওই সময় রাজধানীর লালবাগের ভুক্তভোগী গাজী শহিদুল্লাহ অভিযোগ করেন ২০১০ সালের জমির দলিলের অনুলিপি তুলতে তেজগাঁও সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গেলে দালাল রাসেল ১৩ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। বিষয়টি সাব-রেজিস্ট্রার কুদ্দুস হাওলাদারকে জানানো হলে তিনিও রাসেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। টাকা না দেয়ায় ওই দলিল তোলা সম্ভব হয়নি। তার দাবি ওই অফিসে রাসেল ছাড়াও মামুন নামে আরেকজনের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। গণশুনানির সঞ্চালক দুদকের ঢাকার পরিচালক নাসিম আনোয়ার তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে ঢাকা সদরের সাব-রেজিস্ট্রার মো. কুদ্দুস হাওলাদারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহের কথা বলেন। এরপর দুদকের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. নাসির উদ্দীন আহমেদ ওই সাব-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও সম্পদ অনুসন্ধানের নির্দেশ দেন। গণশুনানিতে প্রধান অতিথি ছিলেন দুদক চেয়ারম্যান ড. নাসির উদ্দীন আহমেদ। বক্তব্য রাখেন আইন মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খান মো. আবদুল মান্নান, ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার দীপক কুমার সরকার। সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন দুদকের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক নাসিম আনোয়ার। ড. নাসিরউদ্দীন বলেছেন, ঢাকা মহানগর ও পার্শ্ববর্তী এলাকার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসগুলো দালালমুক্ত করতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করতে হবে। অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষ ঠেকাতে চলবে অভিযান। সাব-রেজিস্ট্রি অফিসগুলো কঠোর নজরদারির মধ্যে আনা হবে। জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে উচ্চমানের জমিকে নিম্ন মানের উল্লেখ করে দলিল সম্পাদন করে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার তথ্যগুলো অনুসন্ধান করা হবে। ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার দীপক কুমার সরকার গতকাল শনিবার বলেছেন, গণশুনানিতে প্রাপ্ত অভিযোগের সূত্রে ঢাকা সদরের সাব-রেজিস্ট্রার কুদ্দুস হাওলাদারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। ঢাকার রেকর্ড রুমের সাব-রেজিস্ট্রার সিরাজুল করিম এর তদন্ত করছেন। তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে পরবর্তী বিভাগীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, গণশুনানির কার্যবিবরণী ঢাকার সমন্বিত জেলা-১ থেকে সার সংক্ষেপ তৈরি করে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে ঢাকা বিভাগীয় পরিচালকের মাধ্যমে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে গণশুনানিতে অভিযোগ উঠা তেজগাঁও, গুলশান, সূত্রাপুর, কোতোয়ালি এবং সাভারের সাব-রেজিস্ট্রার ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। এদের কয়েক জনের ব্যাংক হিসাব, গাড়ি-বাড়ি ও সম্পদের ব্যাপারে খোঁজখবর শুরু করেছে দুদক। সিদ্ধান্ত হয়েছে সাভার ও আশুলিয়ার গত এক বছরের সব দলিল পর্যালোচনার। যাতে আন্ডারভেল্যুর মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির রহস্য উদ্ঘাটন এবং জড়িতদের আইনের আওতায় আনা যাবে বলে মনে করছেন দুদক কর্মকর্তারা। অপর একটি সূত্রের দাবি, সাব-রেজিস্ট্রি অফিসগুলায় দুর্নীতি ও অনিয়মের এন্তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক এই সেক্টরের ব্যাপারে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে কাজ শুরু করেছে। দুদকে অভিযোগ রয়েছেÑ সাব-রেজিস্ট্রার, উমেদার, নকল নবিশকারক, পিয়ন ও দালালচক্র মিলে সিন্ডিকেট করে অসহায় লোকজনকে জিম্মি করে টাকা আদায় করছে। সাব-রেজিস্ট্রারের কক্ষে অফিস স্টাফ নয় এমন লোকজনের আনাগোনা থাকে সব সময়। তারা ঘুষের টাকা চুক্তি করে আদায় করে থাকেন। স্বশিক্ষিত এসব লোকজনের সম্পদের পরিমাণ কোটি কোটি টাকা। জমির শ্রেণি বদলের মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হলেও সাব-রেজিস্ট্রার ও সংশ্লিষ্টরা হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। এ ছাড়াও রয়েছে কথিত সেরেস্তার নামে টাকা আদায় এবং পদে পদে হয়রানি ও ঘুষ বাণিজ্যের এন্তার অভিযোগ। গুঞ্জন রয়েছে সিন্ডিকেটের একটি অংশ দুদকের তদন্ত প্রক্রিয়া আটকাতে চেষ্টা-তদবির অব্যাহত রেখেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App