×

অর্থনীতি

আশঙ্কা ও সম্ভাবনার দোটানায় বাংলাদেশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০১৮, ১১:৪৫ এএম

আশঙ্কা ও সম্ভাবনার দোটানায় বাংলাদেশ
বেশ কিছু দিন ধরে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধ চলছে। গত শুক্রবার দুই দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরুর ঘোষণা দিয়েছে। এর ফলে ইতোমধ্যে বিশ^ অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বাণিজ্যযুদ্ধ নিয়ে উত্তরোত্তর বেড়ে চলা এ উত্তেজনা শেয়ার, মুদ্রাসহ আর্থিক বাজার এবং আন্তর্জাতিক পণ্য বাজারেও ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সুযোগ এবং ঝুঁকি এ দুইয়ের মাঝামাঝিতে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। অনেকের মতে, স্বল্পমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি দুই ধরনের ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশসহ বিশ্ব অর্থনীতি। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এ বাণিজ্যযুদ্ধ যদি নিজেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে তবে ট্যারিফ সুবিধার জন্য দুই দেশই বিকল্প বাজার খুঁজবে। বাংলাদেশের যদি যথাযথ প্রস্তুতি থাকে তবে এর ইতিবাচক সুযোগ নিতে পারবে। দুই দেশের অনেক বাণিজ্যই আমাদের বাজারগুলোতে নিয়ে আসতে পারব। এর জন্য উৎপাদনশীলতা বাড়ানোসহ প্রয়োজনীয় প্র্রস্তুতি রাখতে হবে। আর যদি এই বাণিজ্যযুদ্ধ বৈশি^কভাবে ছড়িয়ে পড়ে তবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আমাদের মতো বাণিজ্যনির্ভর দেশগুলোর। বাণিজ্যযুদ্ধের ফলে বাংলাদেশে কী প্রভাব পড়তে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর ভোরের কাগজকে বলেন, চলমান এ যুদ্ধে আরো নতুন নতুন দেশ যুক্ত হতে পারে। ফলে বৈশ্বিক বাণিজ্যের গতি শ্লথ হয়ে যাবে। চূড়ান্তভাবে ভোক্তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাতে আমাদের মতো দেশের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে স্বল্পমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি দুইভাবেই। তিনি বলেন, আমরা মূলত ভারতের তুলা কিনে থাকি। চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানিতে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। ফলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাংলাদেশে। কারণ ভারত মনে করছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনের তুলা আমদানি বন্ধ হয়ে গেলে ভারতের তুলার চাহিদা বাড়তে পারে। এর কারণে ভারতের তুলার দাম গত এক মাসের ব্যবধানে বেড়ে গেছে। ফলে বাংলাদেশের বাজারে সুতার দাম বাড়তে শুরু করেছে। জানা গেছে, এক মাস আগেও ভারত থেকে তুলা আমদানিতে প্রতি পাউন্ডের দাম পড়তো ৮০ থেকে ৮২ সেন্ট। সেটি এখন বেড়ে ৯০-৯৫ সেন্ট হয়ে গেছে। এর ফলে সুতার দাম বেড়ে গেছে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দেখার বিষয় কি ধরনের কাঁচামালের ওপর মার্কিন শুল্ক আরোপ হয়েছে এবং সেসব পণ্যে আমাদের উৎপাদন ও রপ্তানি সম্ভাবনা কেমন? তিনি আরো বলেন, শুধু চীন নয়, ভারত এবং ইউরোপের যেসব পণ্যের ওপর মার্কিন শুল্ক আরোপ হয়েছে, তা মূলত রপ্তানি পণ্যের ওপর। এর ফলে মার্কিন বাজারে রপ্তানির ক্ষেত্রে একটি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলো। তবে এ ধরনের বাণিজ্যিক যুদ্ধে দুপক্ষের ভোক্তা পর্যায়ে সমস্যা তৈরি হবে বলে মনে করেন মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, এর একটি নেতিবাচক প্রভাব বিশ^বাণিজ্য সংস্থার দর কষাকষির ওপর পড়বে। ডবিøউটিও-এর সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের ওপরও এর প্রভাব আসতে পারে। বাংলাদেশ রপ্তানি করে এমন কোনো পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ালে সেটির নেতিবাচক প্রভাবও পড়তে পারে। যেমন চীন থেকে তৈরি কাপড় আমদানি কমানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র যদি শুল্ক বৃদ্ধি করে, তবে এটি বাংলাদেশের তৈরি কাপড়ের ওপরও প্রযোজ্য হবে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বাণিজ্যযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে বিশ^বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন বিশ^ব্যাংকের ঢাকা অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। আবার যদি সীমিত আকারে হয় সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন-ভারত যে সমস্ত দেশ থেকে আমদানি করলে ট্যারিফের সম্মুখীন হবে না সেসব দেশের বাজারে চলে যাবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যদি সেরকম প্র্রস্তুতি রাখতে পারে তবে আমাদের কিন্তু লাভই হবে। কারণ তারা বেরিয়ে কোনো না কোনো দেশে তো যাবে। বাংলাদেশও হতে পারে তার মধ্যে একটি। তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন পোশাক প্র্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এ ধরনের বাণিজ্যযুদ্ধের ফলে বাংলাদেশও ক্ষতিগ্রস্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, ভিয়েতনামের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের টিপিপির চুক্তি ও রানা প্লাজা ধসের দুর্ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমাদের পণ্য রপ্তানি কিছুটা কমে এসেছিল। তবে কয়েক মাস ধরে এ বাজারে আবারো ইতিবাচক ধারা ফিরতে শুরু করেছে। আর এর মূলে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র টিপিপি চুক্তি বাতিলের ঘোষণা। ফলে আমাদের পোশাক রপ্তানির বিশ^বাজারে বড় প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনাম থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা ধীরে ধীরে তাদের ব্যবসা আবারো বাংলাদেশের দিকে নিয়ে আসছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App