×

মুক্তচিন্তা

এ দায়ভার কে নিবে?

Icon

কাগজ অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০১৮, ০৮:০৫ পিএম

ভারতের তদন্ত সংস্থার ভুল তদন্তের কারণে বাদল ফরাজীকে বিনা অপরাধে ১০ বছর জেল খাটতে হলো। অবৈধভাবে বাদল ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করেছে এ জন্য প্রচলিত নিয়মে বিচার হতে পারত। শুধুমাত্র নাম বিভ্রাটের কারণে দীর্ঘসময় কারাবাস থাকতে হলো এর কারণ হিসেবে তিনি ক্ষতিপূরণ চাওয়াও প্রাসঙ্গিক। এখন আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে দ্রুত বাদল ফরাজীকে মুক্তি দিয়ে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হোক- এটাই প্রত্যাশা।

বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে। কথাটি আবারো সত্য প্রমাণিত হলো। বিনা অপরাধে দীর্ঘ ১০ বছর ভারতে কারাবাসে ছিলেন বাদল ফরাজী। বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় তাকে গত শুক্রবার দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। দেশে ফিরেই তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হস্তান্তর করা হয়েছে। ভারতে দীর্ঘ বছর জেল খেটেও মুক্তি মিলছে না বাদল ফরাজীর। একজন কিশোরের জীবন থেকে দীর্ঘ ১০ বছর ঝরে যাওয়ার দায়ভার কে নিবে তা বড় প্রশ্ন হিসেবে দেখা দিয়েছে।

জানা যায়, বাদল ফরাজী বাগেরহাটের মোংলার বাসিন্দা। ২০০৮ সালে ১৫ বছর বয়সে তাজমহল দেখার উদ্দেশে বন্ধুদের সঙ্গে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের সময় বেনাপোল সীমান্তে গ্রেপ্তার হন। ওই বছরের ৬ মে নয়াদিল্লির অমর কলোনির এক বৃদ্ধা খুনের মামলায় বাদল সিং নামের এক আসামিকে খুঁজছিল ভারতের পুলিশ। ইংরেজি বা হিন্দি জানা না থাকায় বাদল ফরাজী বিএসএফ সদস্যদের নিজের পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেননি। ভারতে বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে, নিম্ন আদালতের রায়ে খুনের দায়ে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় ২০১৫ সালের ৭ আগস্ট বাদলকে দোষী সাব্যস্ত করেন দিল্লির আদালত। তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। পরে হাইকোর্টেও একই সাজা বহাল থাকে। ঘটনা জানার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সুরক্ষা বিভাগে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। এরপর আইন মন্ত্রণালয়, পুলিশের বিশেষ শাখা ও কারা অধিদপ্তর থেকে মতামত চাওয়া হয়। পরে বাংলাদেশ অনুসন্ধান করে জানতে পারে বৃদ্ধা খুনের সময় বাদল ফরাজী বাংলাদেশে ছিলেন। বিষয়টি ভারত সরকারকে জানায় বাংলাদেশ। তিনি ভারতে গিয়েছিলেন তাজমহল দেখতে। বাদল নির্দোষ হওয়ার বিষয়টি জানার পর গত ১৯ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক জরুরি বৈঠক করে তাকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার গত ১৭ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র সচিবকে এক ফ্যাক্স বার্তায় জানান, অনেক দিন ধরে বাদল ফরাজীকে বাংলাদেশে ফেরানোর বিষয়টি ঝুলে আছে। তাই এ বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। গত ২২ এপ্রিল ভারতে আনুষ্ঠানিক আবেদন পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অবশেষে গত শুক্রবার বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। যেহেতু তিনি সাজাপ্রাপ্ত আসামি তাই তাকে কারাগারে রাখা হয়েছে। দেশে ফিরিয়ে আনা হলেও সহসা মুক্তি মিলছে না বাদল ফরাজীর। কাগজপত্র পর্যালোচনা করে তার মুক্তির বিষয়ে পরবর্তী সময়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছেন। ভারতের তদন্ত সংস্থার ভুল তদন্তের কারণে বাদল ফরাজীকে বিনা অপরাধে ১০ বছর জেল খাটতে হলো। অবৈধভাবে বাদল ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করেছে এ জন্য প্রচলিত নিয়মে বিচার হতে পারত। শুধুমাত্র নাম বিভ্রাটের কারণে দীর্ঘসময় কারাবাস থাকতে হলো এর কারণ হিসেবে তিনি ক্ষতিপূরণ চাওয়াও প্রাসঙ্গিক। এখন আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে দ্রæত বাদল ফরাজীকে মুক্তি দিয়ে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হোকÑ এটাই প্রত্যাশা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App