×

জাতীয়

বিপদসীমার ওপর মাতামুহুরীর পানি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০১৮, ০১:৪৩ পিএম

বিপদসীমার ওপর মাতামুহুরীর পানি
টানা দুদিনের ভারি বর্ষণে চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভয়াবহ ভাঙনের কবলে পড়েছে পৌরসভা ১নং ওয়ার্ডের আবদুল বারী পাড়া ও লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের হাজীপাড়া। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে শত শত ঘরবাড়ি ও মসজিদ নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। জানা যায়, গত দুদিনের ভারি বর্ষণে চকরিয়া উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ড বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ঢলের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মাতামুহুরী নদীর বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফাঁশিয়াখালী, কৈয়ারবিল, লক্ষ্যারচর, কাকারা ও সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের প্রায় দুই শতাধিক গ্রামে শত শত ঘরবাড়িতে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। এসব ইউনিয়নের রাস্তাঘাটগুলো যান চলাচলের জন্য অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তবে সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের আবদুল বারীপাড়া ও লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের হাজীপাড়া। গত দুদিনের মুষলধারে বৃষ্টিতে বন্যার পানি বৃদ্ধি পেয়ে মাতামুহুরী নদীর দু’পাড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ওই এলাকার অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে ভাঙন ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়বে বলে জানান স্থানীয় এলাকাবাসী। এ দিকে বন্যার বৃদ্ধি ও পাহাড়ধস থেকে রক্ষার জন্য উপজেলায় সতর্কতা জারি করেছেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরউদ্দিন মোহাম্মদ শিবলী নোমান। তিনি বলেন, টানা বৃষ্টিপাতে পাহাড়ধসের সম্ভাবনা রয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে ২-৩ দিন ওই এলাকায় মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে পাহাড়ি ঢল ও নদীভাঙনের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে নিচু স্থানে বন্যায় আক্রান্ত পরিবার, নদীর তীরবর্তী পরিবার ও পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরত জনগণকে নিরাপদ স্থানে সরে আসার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। অপরদিকে চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলম, পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী ও কক্সবাজার পানি বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সবিউর রহমান পৌরসভার আবদুলবারী পাড়ার ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তারা লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের হাজীপাড়া ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। বন্যার পানি বেড়ে যাওয়ায় মাতামুহুরী নদীর হাজীপাড়া অংশটি ভাঙনের কবলে পড়েছে। অব্যাহত ভাঙনের কারণে স্থানীয় জামে মসজিদটিও হুমকির মুখে পড়েছে। বর্তমানে নদীর অবস্থান একেবারে গ্রামের কাছে চলে এসেছে। এ অবস্থায় মসজিদের আশপাশ এলাকার হাজারো জনবসতি, একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ছিকলঘাটা-কৈয়ারবিল সড়কসহ গ্রামীণ জনপদের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ভাঙন হুমকিতে পড়েছে। এতে এলাকাবাসীর মাঝে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এলাকাবাসী অর্ধশত বছরের পুরনো জামে মসজিদ ও গ্রামের জনবসতি রক্ষায় ঝুঁকিপূর্ণ ওই পয়েন্টে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টেকসই প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে। ইতোমধ্যে হাজীপাড়া জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. শহীদ উল্লাহ লিখিতভাবে আবেদন করেছেন কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরে। তার আবেদনটি সরেজমিন বিবেচনাপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আলম সুপারিশও করেছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, নদীভাঙনের কবলে পড়ে বিগত দুই দশকে ভিটেবাড়ি হারিয়ে গৃহহীন হয়েছেন কমপক্ষে ১০ হাজার পরিবার। এসব পরিবার বেঁচে থাকার তাগিদে ঠাঁই নিয়েছে পাহাড়ি অঞ্চলে। নদীতে বিলীন হওয়ার পথে রয়েছে জনবসতি ও বিপুল পরিমাণ আবাদি জমি, দোকানপাট, মসজিদ মাদ্রাসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বর্তমানে ভাঙনে আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন উপজেলার লক্ষাধিক জনসাধারণ। লক্ষ্যারচর ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তাফা কাইছার বলেন, নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে হাজীপাড়া পয়েন্টে ৩৩ হাজার ভোল্ডের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন। হাজীপাড়ার মসজিদ, গুরুত্বপূর্ণ একাধিক গ্রামীণ সড়ক, ফসলি জমি, স্কুল, মাদ্রাসাসহ হাজারো জনবসতি ভাঙনের কবলে পড়ে নদীতে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলম বলেন, মাতামুহুরী নদীর ভাঙনে নদী তীরবর্তী এলাকা ব্যাপক ভাঙনের কবলে পড়েছে। বর্তমানে লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের হাজীপাড়া জামে মসজিদ ও পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের আবদুলবারী পাড়াটি ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। ইতোমধ্যে এলাকা দুটি আমি পরিদর্শন করেছি। পাউবো চাইলে মসজিদের পাশে চলমান প্রকল্পের আওতায় মসজিদটি রক্ষায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারে। তাতে মসজিদটি নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের চকরিয়া শাখা কর্মকর্তা তারেক বিন সগীর বলেন, লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের হাজীপাড়া পয়েন্টে মাতামুহুরী নদীর ভাঙন প্রতিরোধে বর্তমানে ২০০ মিটার পাথরের বøক দ্বারা টেকসই উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্পের শুরুতে মসজিদ এলাকাটি সম্পৃক্ত করতে চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু অর্থ বরাদ্দ পর্যাপ্ত না হওয়ায় শুধুমাত্র বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন এলাকাটি অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। তারপরও মসজিদ এলাকাটি রক্ষার্থে জরুরি প্রকল্পের আওতায় ১০০ মিটার এলাকাজুড়ে নতুনভাবে জিও ব্যাগ বসানোর জন্য টাকা বরাদ্দ চেয়ে ইতোমধ্যে পরিপত্র পাঠানো হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App