×

জাতীয়

বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০১৮, ০১:০৯ পিএম

বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পাহাড়ি ঢলে নিম্নাঞ্চলের প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি মানুষ। এসব এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ। গোয়াইনঘাট (সিলেট) : টানা বৃষ্টি আর পিয়াইন ও সারী নদী দিয়ে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গোয়াইনঘাটে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। এতে করে উপজেলার নিম্নাঞ্চলের প্রায় সর্বত্রই প্লাবিত হয়ে লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাটের পাশাপাশি নতুন করে প্লাবিত হয়েছে উপজেলার বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা, মসজিদসহ প্রায় অর্ধশত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে এর মধ্যে ১০টি বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে পানি উঠায় সাময়িকভাবে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. মোশাহিদ মিয়া জানান, বন্যার পানি বেড়ে এ পর্যন্ত ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি ওঠায় সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারছে না। যার ফলে ওই বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকায় সাময়িকভাবে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। গত বুধবার সকাল থেকে বন্যার পানি আরেক দফা বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ দুটি রাস্তা সারীঘাট-গোয়াইনঘাট ও সালুটিকর-গোয়াইনঘাট তলিয়ে গিয়ে জেলা শহরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এ ছাড়াও জাফলং-গোয়াইনঘাট রাস্তায় পানি উঠে উপজেলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র জাফলংয়ের সঙ্গেও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় নতুন করে আরো প্রায় ৩শ হেক্টর জমির ফসল ও বীজতলা নিমজ্জিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়া অব্যাহত থাকলে এর পরিমাণ দেড় হাজার হেক্টর ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে কৃষি অফিসের তথ্য মতে, এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে পানিতে নিমজ্জিত জমির ফসল ও বীজতলার পরিমাণ ১ হাজার হেক্টর। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান জানান, বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন করে কিছু জমির ফসল ও বীজতলা নিমজ্জিত হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হলে এর পরিমাণ বাড়তে পারে বলে জানান তিনি। জানা যায়, টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সোমবার থেকে গোয়াইনঘাটের নিম্নাঞ্চলগুলোতে বন্যার পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। গত বুধবার সকাল থেকে বন্যার পানি আরেক দফা বেড়ে উপজেলার প্রায় সর্বত্রই প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এতে করে রাস্তাঘাট ও বসতবাড়িতে পানি উঠে উপজেলার প্রায় লাখো মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় গো-খাদ্যেরও সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে প্লাবিত অঞ্চলের মানুষ তাদের গবাদি পশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। এ দিকে বন্যার্তদের সাহায্যে যে পরিমাণ ত্রাণ সরবরাহ করা হচ্ছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে জানান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম চৌধুরী। তিনি বলেন, বন্যার পানি বৃদ্ধি পেয়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ছে। উপজেলার নিম্নাঞ্চলের মানুষগুলো পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। উপজেলার বন্যাকবলিত মানুষের মাঝে পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা বরাদ্দ দিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের আহŸান জানান তিনি। কাউনিয়া (রংপুর) : কাউনিয়া উপজেলায় টানা কয়েকদিনে ভারি বৃষ্টি ও ভারতের গজল ডোবায় গেট খুলে দেয়ায় উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। সরেজমিনে তিস্তা নদী বেষ্টিত নিম্নাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, টানা বৃষ্টি ও উজানের নেমে আসা ঢলে তিস্তা ব্রিজ পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির ফলে তিস্তা নদী বেষ্টিত চরাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে চর ঢুষমারা, বিশ্বনাথ চর, টাপুর চর, চর আজম খাঁ চরসহ বেশ কিছু নিম্নাঞ্চলে বন্যার পানি প্রবেশ করে। বন্যাকবলিত হওয়ায় চরের মানুষ গরু ছাগল হাঁস মুরগি নিয়ে বিপাকে পড়েছে। বিশেষ করে গো-খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ঢুসমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নুর ইসলাম জানান, সকাল থেকে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে চরের অধিকাংশ বাড়িঘর তলিয়ে গেছে, সেই সঙ্গে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। বালাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আনছার আলী জানান, ঢুসমারা স্কুল ও মাদ্রাসাসহ অধিকাংশ বাড়িঘর নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে। টেপামধুপুর ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম জানান, টাপুর চর, চর গনাই ও বিশ্বনাথে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যার সৃষ্টি হয়। সৌহার্দ্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আ. আজিজ জানান, বেশকিছু চর পরিদর্শন করেছি। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে চাওয়া হয়েছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসার জাকিরুল হাসান গত বুধবার বিকেলে বন্যাকবলিত চর ঢুসমারা স্কুল পরিদর্শন করে বিদ্যালয় থেকে বন্যার পানি না নামা পর্যন্ত স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম নাজিয়া সুলতানা জানান, চরে পানি উঠেছে শুনেছি। উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলার সব প্রস্তুতি গ্রহণ করা আছে পরবর্তী সময়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) : গত দুদিনের ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ফটিকছড়ির নিম্নাঞ্চল ফের প্লাবিত হয়। উপজেলার দক্ষিণ অঞ্চলের ইউনিয়ন আব্দুল্লাপুর, ধর্মপুর, জাফতনগর, সমিতিরহাট, রোসাংগিরী, নানুপুর ও লেলাংয়ের বেশকিছু এলাকা ইতোমধ্যে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। দুদিনের টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে ফটিকছড়ির ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া হালদা নদী, ধুরুং, সর্তা, গজারিয়া, ফটিকছড়ি, বারমাসিয়া, হাারুয়ালছড়ি, মান্দাকিনী, লেলাং ও তেলপারই খালে পানি বর্তমানে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে এসব খালের ভাঙনগুলো দিয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করে নিম্নাঞ্চলগুলো দ্রæত প্লাবিত হচ্ছে। এ দিকে বন্যায় শত শত একর আমনের বীজতলা, মৎস্য ঘের, বর্ষাকালীন সবজি ক্ষেত ও অধিকাংশ মুরগি খামারের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় বলে জানা গেছে। এ ছাড়া এসব এলাকার রাস্তাঘাট বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যানবাহন চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। পর পর দু’দফার বন্যার কারণে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে এলাকার জনসাধারণ। এ দিকে উপজেলার মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে বন্যার কারণে পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলে অন্য পরীক্ষাগুলোও পিছিয়ে যেতে পারে বলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে। বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক কুমার রায় বলেন, উপজেলার অধিকাংশ এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়। তবে দক্ষিণাঞ্চলের ৭-৮টি ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ইতোমধ্যে প্লাবিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছি, এমপির সঙ্গে কথা বলে দ্রæত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App