×

জাতীয়

নজর এবার তিন সিটিতে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০১৮, ০২:৪৫ পিএম

নজর এবার তিন সিটিতে
রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নজর এবার সিলেট, রাজশাহী ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিকে। ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনের আগে এ তিন সিটি করপোরেশনের নির্বাচন ইসির কাছে যেমন; তেমনি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছেও চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ঈদের আগে খুলনা এবং গত ২৬ জুন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন মোটামুটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার পর এবার এ তিন সিটি করপোরেশন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে বদ্ধপরিকর ইসি। এ তিন সিটিতে আগামী ৩০ জুলাই ভোট হওয়ার কথা। আর এ চ্যালেঞ্চকে মোকাবেলার জন্য মাঠে নেমে পড়েছে এ সাংবিধানিক সংস্থাটি। নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। সংসদ নির্বাচনের আগে এ তিন সিটি নির্বাচনকে এসিড টেস্ট হিসেবে দেখছে ইসি। সিইসি কে এম নুরুল হুদাসহ অন্যান্য কমিশনাররা তিন সিটিতে একাধিক বৈঠক করছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে চলছে জরুরি বৈঠক। এ ছাড়া নির্বাচনে কোন কোন কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ তার একটি তালিকাও চেয়েছে ইসি। নির্বাচন উপলক্ষে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, মাস্তান-সন্ত্রাসীদের ধড়পাকড় চলছে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে ইসি। তিন সিটি নির্বাচনকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলও। কারণ এই নির্বাচন তাদের জন্য একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে ভোটযুদ্ধের চ‚ড়ান্ত মহড়া। খুলনা ও গাজীপুর নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাছে তিন সিটি পুনরুদ্ধারের বিকল্প নেই। খুলনা ও গাজীপুরের বিজয়কে তারা দেখছে, সরকারের উন্নয়নের সাফল্য হিসেবে। নেতাদের দাবি, দেশের মানুষ শেখ হাসিনার উন্নয়নের রাজনীতি গ্রহণ করেছে। আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। তারই সুফল পেয়েছে সদ্য শেষ হওয়া দুই সিটি নির্বাচনে। রাজশাহী, সিলেট ও বরিশালে দলীয় মেয়রপ্রার্থীরা জয়ী হলে এই দাবি আরো পোক্ত হবে- শেখ হাসিনার সরকার দেশের সত্যিকারের উন্নয়নের জন্য কাজ করছে। জনগণও সরকারের সঙ্গে আছে। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে আগামী সংসদ নির্বাচনে। আর ফলাফল যদি ক্ষমতাসীনদের বিপক্ষে যায়, তাহলে প্রতিপক্ষ দাবি করবে জনগণ এই সরকারকে আর চায় না। এসব কারণেই তিন সিটিতে জয় পেতে মরিয়া আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে, গাজীপুর ও খুলনায় হারের পর বিপর্যস্ত বিএনপি। এমনিতেই দুঃসময় পার করছে দলটি। দলীয় প্রধান দুর্নীতির দায়ে কারাকারে। অনেক নেতাকর্মী মামলার বোঝা মাথায় নিয়ে হয় কারাগারে, নয় তো পালিয়ে বেড়াচ্ছে। চরম বিশৃঙ্খলা ও কোন্দলে জর্জরিত দলটির সাংগঠনিক অবস্থাও নড়বড়ে। এই প্রেক্ষাপটে দুই সিটিতে মেয়র পদ হাতছাড়া হওয়ায় আরো মুষড়ে পড়েছে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল- সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। হতোদ্যম এই দলটিকে আবার চাঙ্গা করতে আসন্ন তিন সিটি নির্বাচনে শুধু মাত্র জয়ই হতে পারে বিএনপির জন্য ধনন্তরী ওষুধ। এতে এটাও প্রমাণ হবে, জনগণের কাছে এই সরকারে কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। বিএনপিই দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল। তাই রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল নির্বাচনে মেয়র পদ দখলে রাখতে সব চেষ্টাই করবে রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি। অবশ্য হেরে গেলেও অন্য অস্ত্র হাতে তুলে নেবে বিএনপি। বরাবরের মতোই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করবে তারা। সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি, ইসি নিরপেক্ষ নয়, এই সরকারের অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়- এসব অভিযোগ তুলে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার দাবি আরো জোরালো করবে দলটি। দাবি তুলবে ইসি পুনর্গঠনেরও। উল্লেখ্য, গত ১৩ জুন রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে কমিশন। তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন পার হয়েছে গতকাল ২৮ জুন, বাছাই ১ ও ২ জুলাই, আপিল ৩ থেকে ৫ জুলাই, নিষ্পত্তি ৬ থেকে ৮ জুলাই, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার ৯ জুলাই, এবং প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে ১০ জুলাই। ইতোমধ্যে প্রায় সব প্রার্থীই তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে অনানুষ্ঠানিক প্রচারে নেমে পড়েছেন। এ তিন সিটিতে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। চায়ের দোকান থেকে শপিংমল সর্বত্রই এখন ভোটের উত্তাপ। এদিকে খুলনা ও গাজীপুর সিটিতে সামান্য কিছু অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ছাড়া নির্বাচন শান্তিপূর্ণ বলে ঘোষণা করেছে ইসি। এ দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনকে সাফল্য হিসেবে দেখছে এ সাংবিধানিক সংস্থাটি। এবারে কমিশন আগামী ৩০ জুলাই এ তিন সিটির নির্বাচনে অগ্নি পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করেছে তারা। নির্বাচনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোও। উজ্জীবিত দেখা গেছে তিন সিটির প্রার্থীদের। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের মাধ্যে নতুন করে শুরু হয়েছে নানা জল্পনাকল্পনা। তবে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না- তা নিয়ে সংশয়ও প্রকাশ করেছেন বিএনপি নেতারা। দলটি খুলনা ও গাজীপুর এ দুই সিটি নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে এ নির্বাচনকে প্রহসন বলে মন্তব্য করেছে। ইসি সূত্রে জানা গেছে, এ তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে স্বাধীন এ সংস্থাটি। এরই মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সঙ্গে বারেবারে বৈঠক করেছেন কমিশনাররা। এ ছাড়া সিলেট, রাজশাহী ও বরিশালের জেলাপ্রশাসক, পুলিশ কমিশনার, নির্বাচনী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। তিন সিটির ভোট কর্মী, ভোটকেন্দ্রসহ সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে চ‚ড়ান্ত করা হয়েছে। নির্বাচনী এলাকায় টহল দিচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালত, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ পর্যাপ্ত পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ইসি সূত্র জানিয়েছে, এ ৩ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্য ৮৫২ রিম গোলাপি মুদ্রণ কাগজের প্রয়োজন ছিল। এর মধ্যে ৩৩৩ রিম কাগজ মজুত ছিল। বাকি ৫১৯ রিম পরে সংগ্রহ করে কমিশন। ভোটার তালিকা চ‚ড়ান্ত করা হয়েছে, ভোটকেন্দ্র ও ভোট কক্ষও নির্ধারিত হয়েছে। ভোটের কাজে প্রয়োজনীয় কর্মী ও সরঞ্জামাদি ইতোমধ্যে সংগ্রহ করা হয়েছে। ব্যালট বাক্সসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ঝেড়ে মুছে পরিষ্কার করে সংরক্ষণ করা হচ্ছে ডিসি অফিসের গোডাউনে। ব্যালট পেপার ছাপানোর বিষয়টিও দুএক দিনের মধ্যে চ‚ড়ান্ত করবে ইসি। এদিকে তফসিল ঘোষণার পরে পরেই এ তিন সিটিতে বইছে নির্বাচনী আবহ। সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে মাঠে নেমেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা। তিন সিটিতে দলীয় কর্মকাণ্ড বাইরেও তারা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন, গণসংযোগ করছেন। রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তাদের মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী- রাজশাহীতে এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, বরিশালে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ও সিলেটে বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। এদিকে বসে নেই প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপিও। দলটি বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়ন দিয়েছে যুগ্ম মহাসচিব ও বরিশাল মহানগরের সভাপতি মজিবর রহমান সরোয়ারকে। রাজশাহী সিটি করপোরেশনে (রাসিক) মেয়র পদে মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। আর সিলেটে প্রার্থী করা হয়েছে বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে। নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে দুদলের মুখোমুখি লড়াই হবে সিটি ভোটের মাঠে। জনপ্রিয়তা যাচাইয়ে মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় সবার নজর থাকছে সিটি ভোটের দিকে। সংসদ নির্বাচনের আগে সিটি নির্বাচনকে মর্যাদার লড়াই হিসেবে দেখছে রাজনৈতিক দলগুলো। নৌকা ও ধানের শীষের মধ্যে জনগণের কাছে কোন প্রতীকের কদর বেশি- তার প্রমাণ হবে এ নির্বাচনে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App