×

পুরনো খবর

আ.লীগে অর্ধ ডজন সম্ভাব্য প্রার্থী, বিএনপিতে একক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০১৮, ০৪:৩২ পিএম

আ.লীগে অর্ধ ডজন সম্ভাব্য প্রার্থী, বিএনপিতে একক
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনে আওয়ামী লীগের অর্ধ ডজন এবং বিএনপির একক সম্ভাব্য প্রার্থী প্রচার-প্রচারণায় মাঠে রয়েছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে সাবেক সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী প্রয়াত আলহাজ ফরিদ গাজীর ছেলে শাহনেওয়াজ মিল্লাত গাজী, সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়া, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী, উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট আলমগীর চৌধুরী, সিলেট-হবিগঞ্জ জেলার সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া চৌধুরী কেয়া ও অবসরপ্রাপ্ত মেজর সুরঞ্জন দাসের নাম শোনা যাচ্ছে। সম্প্রতি ড. রেজা কিবরিয়া তার বাবার প্রকাশিত ম্যাগাজিন মুদুভাষনে প্রকাশিত একটি সংবাদে আগামী সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানান। এ সংবাদ স্থানীয় পত্রিকায় প্রচার হওয়ার পর নবীগঞ্জ ও বাহুবল উপজেলায় রেজা কিবরিয়াকে নিয়ে নতুনভাবে আলোচনা শুরু হয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে দেওয়ান ফরিদ গাজীর ছেলে দেওয়ান মিল্লাত গাজী দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মহাজোটের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির কারণে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান দেখিয়ে মিল্লাত গাজী তার মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। তাই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের তিনিই হকদার বলে দাবি তার সমর্থকদের। এ দুজনের মধ্যে যে কেউ মনোনয়ন পেলে আওয়ামী লীগের আসনটি পুনরুদ্ধার হবে বলে সাধারণ ভোটারদের ধারণা। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাবেক জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী ও উপজেলা চেয়ারম্যান আলমগীর চৌধুরী পদে থাকায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজকর্ম করে এবং নিজেদের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে এলাকায় প্রতিনিয়ত দলীয় কর্মকাণ্ড ও প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি আমাতুল কিবরিয়া চৌধুরী কেয়া সংসদ সদস্য হওয়ার কারণে ওই দুই উপজেলায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে বলিষ্ঠ ভ‚মিকা রাখার কথা তুলে ধরে এলাকায় সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছেন। এদিকে বাহুবল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বাহুবল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই জানান, এমপি আমাতুল কিবরিয়া চৌধুরী কেয়া বাহুবল উপজেলার একজন কৃতী সন্তান। তিনি সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি হিসেবে প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তিনি দলীয় লোকদের সম্পৃক্ত করেননি। উল্টো বিভিন্ন মামলা মোকদ্দমা দিয়ে দলীয় লোকদের হয়রানি করছেন। তিনি বলেন, কেয়া চৌধুরী বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ করেন। কিন্তু তার সভা-সমাবেশে দলীয় লোকদের সম্পৃক্ত করেননি। এসব কারণে যতই দিন যাচ্ছে দলের লোকজন ততোই ফুঁসে উঠছেন। এমপি কেয়া চৌধুরী সম্প্রতি এক জনসভায় বলেছেন, টেন্ডারবাজি ও তেলবাজিতে তিনি বিশ্বাসী নন। তিনি জনগণের রাজনীতি করেন। তিনি আরো বলেন, স্টেডিয়াম নির্মাণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মন্দির, রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্টসহ এলাকার বিভিন্ন উন্নয়ন করছেন। এতে সরকারের ভাবমূর্তি বাড়ছে। জাতীয় পার্টির বর্তমান সংসদ সদস্য এম এ মুবিন চৌধুরী বাবু আগামীতেও মহাজোটের আসন ভাগাভাগির আশা নিয়ে এলাকায় সভা-সমাবেশ, গণসংযোগসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। হবিগঞ্জ-১ নির্বাচনী এলাকার নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই প্রয়াত নেতা সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া ও সাবেক মন্ত্রী আলহাজ দেওয়ান ফরিদ গাজীর জন্মস্থান। দলমত নির্বিশেষে তারা জনগণের কাছে ছিলেন শ্রদ্ধাভাজন। বিগত দিনে এলাকার উন্নয়নে তাদের ভ‚মিকা এলাকাবাসী ভুলতে পারেনি। এখনো ওই দুই পরিবারের প্রতি জনগণের বেশ আস্থা রয়েছে। এবার দুনেতার সন্তানরা নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার প্রচেষ্টায় রয়েছেন। এদিকে বিএনপির সম্ভাব্য একক প্রার্থী শেখ সুজাত মিয়া অবস্থান করছেন লন্ডনে। নিজ দলে কোনো ধরনের কোন্দল না থাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ ভোটারদের মধ্যে তার যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তিনি একজন শক্তিশালী প্রার্থী। এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৬০ হাজার ২৮ জন। এর মধ্যে নবীগঞ্জ উপজেলায় ২ লাখ ৩১ হাজার ৭৯৪ ও বাহুবল উপজেলায় ১ লাখ ২৮ হাজার ২৩৪ জন। গত ৩১ জানুয়ারি নতুন ভোটার হিসেবে সংযুক্ত হয়েছে ৮ হাজার ৩০৯ জন। এ আসনের সংসদ নির্বাচন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের আব্দুল আজিজ চৌধুরী, ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের আব্দুল মান্নান চৌধুরী ছানু মিয়া, ১৯৭৯ সালে জাসদের মাহবুবুর রব সাদী, ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগের ইসমত আহমেদ চৌধুরী, ১৯৮৮ সালে জাসদের এডভোকেট আব্দুল মোছাব্বির চৌধুরী ও ১৯৯১ সালে জাপার খলিলুর রহমান চৌধুরী রফি এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বর্ষীয়ান নেতা সাবেক মন্ত্রী আলহাজ দেওয়ান ফরিদ গাজী বিপুল ভোটে এমপি নির্বাচিত হন। মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই তিনি মারা গেলে ২০১১ সালের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাবেক আওয়ামী লীগ সভাপতি ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী বিএনপির শেখ সুজাত মিয়ার কাছে পরাজিত হন। এ পরাজয় মেনে নিতে পারেননি স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই। স্বাধীনতার পর থেকেই আসনটি অধিকাংশ সময় আওয়ামী লীগের দখলেই ছিল। মাঝে জাতীয় পার্টি ও জাসদ দুবার করে ভাগ বসিয়েছে। বড় দুদল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে জাতীয় পার্টিরও ভোটব্যাংক রয়েছে এ আসনে। ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে ড. শাহ রেজা কিবরিয়ার প্রার্থিতা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হলেও তিনি প্রার্থী হননি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App