×

পুরনো খবর

সমস্যা আর অনিয়মে ঠাসা উত্তরখান থানা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০১৮, ১২:১৮ পিএম

সমস্যা আর অনিয়মে ঠাসা উত্তরখান থানা
থানা হিসেবে যেসব বৈশিষ্ট্য থাকা উচিত তার বেশিরভাগই অনুপস্থিত রাজধানীর উত্তরখান থানায়। একটি ভাড়া ভবনে নানা সমস্যা নিয়ে চলছে এই থানার কার্যক্রম। নেই পার্কিং ব্যবস্থা। পুরো থানা এলাকার রাস্তা নাজুক হওয়ায় টহলও দিতে পারেন না পুলিশ সদস্যরা। ফলে মাদকের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে থানাটি। রয়েছে আবাসিক সমস্যাও। এদিকে সমস্যা যেমন বিস্তর; এই থানার পুলিশের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও চাঁদাবাজির অভিযোগও তেমনি বেশি। উত্তরখান থানার মানুষের চলাচলের অন্যতম প্রধান বাহন ব্যাটারিচালিত অবৈধ অটোরিকশা। পুলিশও সুযোগ বুঝে প্রতিটি অটোরিকশা থেকে নিচ্ছে মাসোয়ারা। একাধিক চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উত্তরখান এলাকার অটোরিকশা থেকে পুলিশের নামে মাসিক ৫০০ টাকা হারে চাঁদা নেয় নয়ন ও সেলিম নামে ২ লাইনম্যান। তাদের টাকা না দিলে অটো চালাতে দেয়া হয় না। ওই চালকরা আরো জানান, আজমপুর ও আবদুল্লাহপুরে তারা প্রতিদিন চাঁদা (প্রচলিত ভাষায় জিপি) দেন ১২০ টাকা। তবে উত্তরখানের কোনো লাইনম্যানকে তারা দৈনিক চাঁদা দেন না। আজমপুর ও আবদুল্লাহপুরের চাঁদা থেকেই উত্তরখান থানাকে ম্যানেজ করে লাইনম্যানরা। গত ২১ জুন সরেজমিন দেখা যায়, একটি মামলায় ওয়ারেন্টভুক্ত এক বৃদ্ধ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে উত্তরখান থানা পুলিশ। তাকে হাজতখানায় পাঠানোর সময় থানার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সেন্ট্রিকে বলেন, তার স্বজনদের খাবার নিয়ে থানায় আসতে বল। অথচ সরকারিভাবে প্রতি হাজতির জন্য প্রতিদিন খাওয়ার জন্য ৭৬ টাকা বরাদ্দ থাকে। জিডি এবং মামলার ক্ষেত্রেও সময় বুঝে টাকা নেয়া হয় বলে অভিযোগ করেন এক যুবক। দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত থানায় রাজনৈতিক নেতাদের উপস্থিতি দেখা যায়। স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতারা ওসির রুমে দীর্ঘক্ষণ আড্ডায় মেতে থাকেন। ওসি তাদের জন্য স্পেশাল খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থাও করেন। এক পুলিশ সদস্য জানান, এই রাজনৈতিক নেতারা থানাতে পড়ে থাকেন বললেই চলে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তরখান থানার ওসি মো. হেলাল উদ্দিন ভোরের কাগজকে বলেন, এই থানার সবচেয়ে বড় সমস্যা আমাদের নিজস্ব ভবন নেই। তবে ইতোমধ্যেই ৫০ কাঠা জমি বরাদ্দ হয়েছে। টেন্ডার হয়ে গেছে। অতিশিগগিরই কাজ শুরু হবে। এটি হবে উত্তরা বিভাগের মধ্যে নজিরবিহীন অত্যাধুনিক ভবন। অটোরিকশা থেকে চাঁদা নেয়ার বিষয়ে ওসি বলেন, এই থানা এলাকায় কোনো স্ট্যান্ড নেই। আর পুলিশের পক্ষ থেকেও কোনো চাঁদা নেয়া হয় না। হাজতিদের সরকারি খাবার দেয়া হয় না কেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সব হাজতিকেই সরকারি খাবার দেয়া হয়। এই থানায় হাজতখানার পরিবেশও বেশ ভালো। কর্মকর্তারা জানান, রাজধানীর রাজাবাড়ী, আতিপাড়া, কুড়িপাড়ার টেক, শাহ কবির মাজার, মাস্টারপাড়া, মাদারবাড়ি, ফাজিরবাটন, ভ‚ঁইয়াপাড়া, বাটুলিয়া, ময়নারটেক, কুমুদখোলা, গোবিন্দপুর, উজামপুর, তালাশিয়া, বড়াবাড়ি, ডোবাদিয়া ও ভাড়ারদি এলাকা নিয়ে থানাটি গঠিত। এ থানায় ১ জন ইন্সপেক্টর ইনচার্জ (ওসি), ২ জন ইন্সপেক্টর, ১৫ জন এসআই, ২৪ জন এএসআই ও ৪২ জন কনস্টেবল রয়েছেন। সূত্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে এ থানায় ২৫টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি মাদক, ১টি ধর্ষণ এবং ২টি নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা। ফেব্রæয়ারিতে ২৩টি মামলার মধ্যে ১৭টি মাদক ও একটি রাজনৈতিক মামলা। মার্চে ২৮টি মামলার মধ্যে ২১টি মাদক, এপ্রিলে ২২টি মামলার মধ্যে ১৯টি মাদক, ১টি ধর্ষণ এবং মে মাসে ১৯টি মামলার মধ্যে ১৫টি মাদক ও ২টি ধর্ষণ মামলা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App