×

জাতীয়

গাজীপুরে শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত প্রার্থীরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০১৮, ১০:৩৭ এএম

গাজীপুরে শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত প্রার্থীরা
আর মাত্র এক দিন পরই গাজীপুর সিটি করপোরেশন (গাসিক) নির্বাচন। নির্বাচনী বিধিমালা অনুযায়ী আজ রবিবার মধ্যরাত থেকেই বন্ধ হয়ে যাবে সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা। তাই শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। বিশেষ করে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। অন্যদিকে দলীয় নেতাকর্মীরাও গ্রæপে গ্রæপে ভাগ হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও যেসব জায়গায় তুলনামূলকভাবে কম প্রচারণা হয়েছে সেইসব জায়গায় ছুটে যাচ্ছেন। দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাতে গাজীপুরে ছুটে এসেছেন কেন্দ্রীয় নেতারাও। নিজ নিজ দলের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিয়ে গাজীপুরের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছেন তারা। শেষ মুহূর্তের প্রচারণার ব্যস্ততায় যেন নাওয়া-খাওয়াও ভুলে গেছেন প্রার্থী-নেতাকর্মী ও তাদের সমর্থকরা। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সমানতালে চলছে প্রচার-প্রচারণা। টঙ্গী ও জয়দেবপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সর্বত্রই নির্বাচনী আমেজ। মাইকে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষে বিরতিহীন প্রচারণার শব্দে রাস্তায় কান পাতা দায়। পোস্টারে পোস্টারে ছেঁয়ে গেছে শহরের রাজপথ ও অলিগলি। পোস্টার দেখেই ৪২৫টি ভোটকেন্দ্র সহজেই চিহ্নিত করা যায়। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের সামনে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পোস্টারের ছড়াছড়ি। প্রার্থী ও তাদের কর্মীদের বিলি করা লিফলেটও পৌঁছে যাচ্ছে ভোটারদের হাতে হাতে। ঢাকা থেকে গাজীপুরে ছুটে আসা কেন্দ্রীয় নেতারা নগরীর যেখানেই যাচ্ছেন সেখানেই জনতার ভিড় জমে যাচ্ছে। স্থানীয় নেতাকর্মীদের মাঝেও দেখা যাচ্ছে চাঙ্গা ভাব। সবমিলিয়ে গাজীপুরের সবত্রই এখন উৎসবমুখর পরিবেশ, সেইসঙ্গে রয়েছে নির্বাচনী উত্তাপও। গতকাল গাজীপুরের মালেকের বাড়ি এলাকায় কথা হয় যুবলীগ কর্মী ফরহাদের সঙ্গে। তিনি জানান, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা দলে দলে ভাগ হয়ে জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তরুণ ও শ্রমিক ভোটারদের মধ্যে জাহাঙ্গীরের গ্রহণযোগ্যতা ব্যাপক। সে হিসেবে প্রায় সব কেন্দ্রেই তিনি এগিয়ে থাকবেন। জয়দেবপুরের সালনা বাজারের মহুয়াতলায় কথা হয় স্থানীয় যুবদল নেতা মাসুমের সঙ্গে। মাসুম জানান, তিনি ও তার সহযোগীরা হাসান উদ্দিন সরকারের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। সাবেক মেয়র এমএ মান্নানের বাড়ির কাছে হওয়ায় সালনা এলাকায় বিএনপির অবস্থান খুবই ভালো। এই এলাকা থেকে হাসান সরকারই বেশি ভোট পাবেন। এই এলাকার বিএনপির নেতাকর্মীরা ২৪ তারিখ রাত ১২টা পর্যন্ত প্রচারণা অব্যাহত রাখবেন বলেও জানান মাসুম। এদিকে গতকালও বৃষ্টি উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের দলীয় প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জনসংযোগকালে তারা সবাই জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে ভোট প্রার্থনা করেন। তাছাড়া প্রতিদিনের মতো গতকাল সকালেও নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঘরোয়া বৈঠক করেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। ওই বৈঠকে ভোটের দিন পর্যন্ত নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালানার বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেন তিনি। এরপর টঙ্গির খরতুল এলাকা থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। বেলা ১১টায় নগরীর ৫১ নম্বর খরতৈল স্কুলের সামনে পথসভায় বক্তব্য রাখেন জাহাঙ্গীর। নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষ ওই পথসভায় যোগ দেয়। দুপুরে তিনি মিলগেট এলাকায় পথসভায় যোগ দেন। এসময় নৌকার পক্ষে ¯েøাগানে ¯েøাগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। এই পথসভায় জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গাজীপুরের মানুষ টঙ্গী, চান্দনায় হাইওয়েতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকে। আমি সেই যানজট থেকে আপনাদের মুক্ত করে দেব। আমি নির্বাচিত হওয়ার নব্বই দিনের মধ্যে এই সড়কের অর্ধেক কষ্ট কমিয়ে দেব। আগে যিনি মেয়র ছিলেন, তাকে এবার বিএনপি মনোনয়ন দেয়নি। তিনি একাধিকবার এই এলাকার পৌরসভা ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং এলাকার এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু জনগণের ভাগ্যের উন্নয়ন করতে পারেননি। অন্যদিকে বিএনপি প্রার্থী হাসান সরকারও গতকাল বিরামহীনভাবে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন। সকাল সাড়ে ৯টায় হায়দরাবাদ এলাকা থেকে প্রচারণা শুরু করেন তিনি। এরপর মাজুখান বাজার, নন্দীবাড়ি, বিন্দাইন, পূবাইল, ভাদুন, ইছালি ও কলেরবাজার এলাকায় প্রচারণা চালান। এসময় হাসান সরকার বলেন, সরকারের অসহযোগিতার কারণে মেয়র মান্নান চেষ্টা থাকা সত্তে¡ও গাজীপুরের উন্নয়নে কাজ করতে পারেননি। তিনি নির্বাচিত হলে গাজীপুরবাসীর উন্নয়ন হবে বলেও আশ্বাস দেন। তিনি অভিযোগ করেন, দলীয় নেতাকর্মীদের ধরপাকড়, গণগ্রেপ্তার ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না নির্বাচন কমিশন। যান চলাচলে জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা : গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। গতকাল জেলা প্রশাসক স্বাক্ষরিত এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২৫ জুন রাত ১২টা থেকে ২৬ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত গাজীপুর সিটির নির্বাচনী এলাকায় (মহাসড়ক ব্যতীত) বেবিট্যাক্সি, সিএনজি চালিত অটোরিকশা, ট্যাক্সিক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ ভ্যান, বাস, ট্রাক, টেম্পো, ইজিবাইক এবং নৌপথে লঞ্চ, ইঞ্জিনবোট, স্পিডবোটসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এ ছাড়া আজ ২৪ জুন দিবাগত রাত ১২টা থেকে ভোটগ্রহণের পরের দিন অর্থাৎ ২৭ জুন সকাল ৬টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তবে রিটার্নিং অফিসারের অনুমতিপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক, সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত সাংবাদিক, নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষক, প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী, নির্বাচনী এজেন্ট এবং কতিপয় জরুরি কাজ যেমনÑ অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডাক টেলিযোগাযোগ ও জরুরি পণ্য সরবরাহসহ অন্যান্য জরুরি প্রয়োজনে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে এবং জাতীয় হাইওয়ে সমূহের ওপর দিয়ে চলাচলরত যানবাহনের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না। গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর জানান, ১৯৮৩ সালের মোটর ভেহিক্যালস অধ্যাদেশের (১৯৮৩ সালের ৫৫ নং অধ্যাদেশ) ৮৮ ধারার ক্ষমতা বলে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে যানবাহন চলাচলের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App