×

জাতীয়

পানি কমছে আর ভেসে উঠছে ভাঙাচুরা রাস্তা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ জুন ২০১৮, ০৩:০৮ পিএম

পানি কমছে আর ভেসে উঠছে ভাঙাচুরা রাস্তা
মৌলভীবাজার জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। টানা ৫ দিনের বন্যা কাটিয়ে ঘরে ফিরছেন মানুষ। এদিকে পানি কমছে আর ভেসে উঠছে ভাঙাচুরা রাস্তা। বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশন, রোগবালাই, যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ নানা সমস্যায় ভুগছেন বন্যার্তরা। ঘরবাড়ি থেকে পানি নামতে থাকলেও আবাদি ও অনাবাদি জমি এখনো পানিতে তলিয়ে রয়েছে। গরু-ছাগল চরানোর জায়গা না থাকায় চরম গোখাদ্য সংকট রয়েছে প্লাবিত এলাকায়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের মৌলভীবাজার পৌরসভার কুসুমবাগ এলাকা থেকে বারইকোনা পর্যন্ত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কুসুমবাগ এলাকার সড়কের পানি সম্পূর্ণভাবে নেমে গেছে। তবে বরকাপন, খিদুর, হিলালপুর, যোগীডরসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কে দেখা গেছে পানির তোড়ে সড়কের পিচ, খোয়া ও মাটি ভেসে গেছে। সড়কগুলোর মুখে ও বিভিন্ন স্থানে বিশাল বিশাল গর্ত হয়ে আছে। স্থানীয় লোকজন বাঁশ ফেলে গর্তগুলো আগলে রেখেছেন। যাতে লোকজন ভুল করে এসব গর্তে পড়ে না যান। সাম্প্রতিক বন্যায় মৌলভীবাজার জেলার মৌলভীবাজার-সিলেট এবং মৌলভীবাজার-রাজনগর, কুলাউড়া, বড়লেখা, বিয়ানীবাজার, কমললগঞ্জ ও সমশেরনগর-চাতলাপুরসহ বিভিন্ন পাকা সড়কের প্রায় ৪৫ কিলোমিটার রাস্তা পানিতে তলিয়ে যায়। পানির তোড়ে এসব রাস্তার বিভিন্ন জায়গার পিচ ওঠে যায় এবং কোথাও কোথাও রাস্তা ৫০-১০০ ফুট পর্যন্ত মাটি সরে গিয়ে খালে পরিণত হয়। এ সময় একটি ব্রিজ দেবে যায় বলে জানালেন মৌলভীবাজার সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী মিন্টু রঞ্জন দেবনাথ।কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের আমতলা থেকে চাতলাপুর চেকপোস্ট পর্যন্ত ৪ কি.মি. সড়ক ভেঙে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় ভারত-বাংলার যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। গত ৯ দিন ধরে চাতলাপুর স্থল শুল্ক স্টেশনে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নে মনু নদের ৪টি স্থানের প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে প্রবেশ করা ঢলের পানিতে সঞ্জবপুর এলাকা থেকে চাতলাপুর চেকপোস্ট পর্যন্ত ৬ কি.মি. সড়ক ৪ ফুট পানিতে নিমজ্জিত হয়। তিলিবিল ও বাঘজুর গ্রামে মনু প্রতিরক্ষা বাঁধের দুটি ভাঙন দিয়ে পানি প্রবেশ করে রাস্তাটির মাটিসহ পিচ ওঠে অনেক স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে আমতলা থেকে চাতলাপুর চেকপোস্ট পর্যন্ত ৪ কি.মি. সড়কের ১২টি স্থানের অবস্থা খুবই নাজুক হয়ে পড়ায় এ সড়কে কোনো যান চলাচল তো দূরের কথা পায়ে হেঁটেও চলা যাচ্ছে না। চাতলাপুর চেকপোস্টের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা এসআই জামাল হোসেন বলেন, প্রতিদিন গড়ে শতাধিক যাত্রী ভারত-বাংলায় যাতায়াত করেন। এখন সড়ক থেকে পানি নেমে গেলেও রাস্তা ভাঙার কারণে যাত্রীরা পায়ে হেঁটে যাতায়াত করছেন। দ্রæত এ সড়ক সংস্কার করে যান চলাচলের ব্যবস্থা না করলে এই পথে দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত বন্ধ থাকবে। চাতলাপুর স্থল শুল্ক স্টেশনের আমদানি রপ্তানিকারক সাইফুর রহমান জানান, বন্যায় একটি কালভার্ট ভেঙে যাওয়ায় ও এ সড়কের ১৫টি স্থানে ভেঙে চুরে ক্ষতবিক্ষত হওয়ায় গত ৯ দিন ধরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। চাতলাপুর শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা আব্দুস সাত্তারও বলেন, সড়কটি সংস্কার করে যান চলাচলের উপযোগী করা না হলে দুই দেশে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকবে। সড়ক ও জনপথ মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মিন্টু রঞ্জন দেবনাথ বলেন, ভাঙা কালভার্টের স্থানে একটি বেইলি সেতু হচ্ছে। একসঙ্গে মৌলভীবাজার-সিলেট ও মৌলভীবাজার-রাজনগর সড়কের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামতের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ এলে দ্রæতই তা মেরামত করা হবে। জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার কুলাউড়া, রাগনগর, কমলগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল ও সদর উপজেলার ৩০টি গ্রাম। তার মধ্যে মৌলভীভাবাজার ও কমলগঞ্জ পৌরসভার কয়েকটি ওয়ার্ডও বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়। জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম বলেন, মানুষের অনেক সমস্যা রয়েছে। এসব আমরা সমাধানের চেষ্টা করছি। যেসব এলাকায় পানিবাহিত রোগ দেখা দিচ্ছে সেখানে আমাদের ৭৪টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। আমাদের পক্ষ থেকে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দেয়া হয়েছে প্রত্যেক এলাকার জনপ্রতিনিধিদের কাছে। সেগুলো মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। পুনর্বাসনের কাজও আমরা শুরু করব এখন। আগে মানুষকে খাদ্য দিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App