×

জাতীয়

আনুষ্ঠানিক প্রচারে প্রার্থীরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ জুন ২০১৮, ০১:১৫ পিএম

আনুষ্ঠানিক প্রচারে প্রার্থীরা
দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে ফের শুরু হয়েছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা। গতকাল সকাল থেকেই নির্বাচনী মাঠে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থীরা। ভোটের আগে সংক্ষিপ্ত সময়ে ভোটারদের মন জয়ে প্রার্থীরা নিয়েছেন নানা পরিকল্পনা। অনেকে ব্যতিক্রমী নানা উদ্যোগ নিয়ে চাইছেন ভোটারদের সমর্থন। প্রধান দুদলের মেয়রপ্রার্থীরা তাদের পূর্ণ শক্তি ও নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে মাঠে নেমেছেন। শুরু হয়েছে এলাকায় মাইকিং, পোস্টার লাগানোসহ নির্বাচনের আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি। আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বিএনপির মিথ্যাচারের জবাব দিয়ে নগরীকে গ্রিন ও ক্লিন সিটি গড়ার লক্ষ্যে ভোটারদের ভোট প্রার্থনা করছেন। অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার বীরোচিত লড়াইয়ের মাধ্যমে নির্বাচনে জয়লাভের আশা প্রকাশ করে বলেন, খুলনা আর গাজীপুর এক নয়। গতকাল সোমবার বেলা ১২টায় স্থানীয় গাছা এলাকায় বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ের সামনে মুক্তিযোদ্ধাদের আয়োজিত পথসভায় যোগ দেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়রপ্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন মহির সভাপতিত্বে পথসভায় মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে সাবেক এমপি জেলা ইউনিট কমান্ডার কাজী মোজাম্মেল হক, মহানগর সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. আজমত উল্লা খান, ডেপুটি কমান্ডার মোহর আলী, আব্দুর রউফ নয়ন, জাতীয় পার্টি নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন। সেখানে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা আমাকে সন্তান হিসেবে ভালোবেসে আজ পথসভার আয়োজন করেছেন। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের দোয়া নিয়ে প্রচারণা শুরুর সুযোগ করে দেয়ায় তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। বিগত নির্বাচনে বিএনপি মিথ্যাচার এবং প্রোপাগাণ্ডা করেছে। মিথ্যাচার করে নৌকাকে নয়, গাজীপুরবাসীকে পরাজিত করেছে। পাঁচ বছর গাজীপুরবাসীকে উন্নয়নবঞ্চিত রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী গাজীপুরকে আধুনিক নগর হিসেবে গড়ে তুলতে একটি ইউনিয়ন থেকে সিটি করপোরেশন করেছেন। গাজীপুর সিটিকে ঢাকার পাশে দ্বিতীয় ঢাকারূপে একটি অত্যাধুনিক শহর হিসেবে গড়তে চাই। গড়ে তুলতে চাই একটি ক্লিন ও গ্রিন সিটি। আপনারা আওয়ামী লীগকে, নৌকাকে সমর্থন করেন। ঘরে ঘরে মা-বোনদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চান। সবার সহযোগিতা নিয়েই নৌকাকে বিজয়ী করব ইনশাল্লাহ। আজমত উল্লা খান বলেন, গাজীপুরকে ‘গ্রিন সিটি-ক্লিন সিটি’ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য জাহাঙ্গীরের বিকল্প নেই। তিনি নেতাকর্মীদের ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট চাওয়ার আহবান জানান। তিনি বলেন, ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আমাদের প্রার্থী ১১ লাখ ৬৪ হাজার ভোটারের কাছে যেতে পারবেন না। প্রার্থীর পক্ষে আমরা সবাই যদি ঘরে ঘরে ভোট চাই তাহলে আগামী ২৬ জুন নির্বাচনে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত। দ্বিতীয় তফসিলে আওয়ামী লীগ মেয়রপ্রার্থীর প্রচারণা শুরুর প্রথম পথসভায় নেতাকর্মীরা ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে যোগ দেন। মুহূর্তেই পথসভা বিশাল জনসভায় পরিণত হয়। অন্যদিকে প্রচারণার প্রথম দিন গতকাল সকাল ৯টা থেকে দুপুর পর্যন্ত নিজ বাসভবনে কাশিমপুর এলাকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদ পুনর্মিলনীতে মিলিত হন বিএনপি মেয়রপ্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার। এ সময় তিনি সাবেক কাশিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান শওকত হোসেন সরকার গ্রেপ্তার হওয়ায় তার অনুপস্থিতিতে নির্বাচনী ঝুঁকি মোকাবেলার কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন। এ সময় হাসান সরকার বলেন, মরতে হলে বীরোচিতভাবে মরব। তালবাহানা না করে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমি বিজয়ী হব। এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি ফজলুল হক মিলন, কেন্দ্রীয় সহ-শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান, গাজীপুর জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি সালাহ উদ্দিন সরকার, সোহরাব হোসেন, মাহবুবুল আলম শুক্কর প্রমুখ। বিএনপির মিডিয়া সেল সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের পুরো বিষয়টি কেন্দ্র থেকে মনিটরিং করা হবে। এ ছাড়া নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে একাধিকবার যোগাযোগ করা হচ্ছে। নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রকার ষড়যন্ত্র করা হলে তা কঠোরভাবে প্রতিহতের ঘোষণাও দিয়েছে দলটির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা। এ বিষয়ে বিএনপি প্রার্থী হাসান উদ্দীন সরকার বলেন, খুলনা ও গাজীপুরের অবস্থা এক নয়। গাজীপুরে খুলনার মতো করতে চাইলে গাজীপুরের জনগণ তা প্রতিহত করবে। আর এ জন্য সব দায় সরকারের ঘাড়েই পড়বে। তিনি জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় নেতাকর্মীদের মনে ক্ষোভের আগুন জ্বলছে। তারা সর্বশক্তি দিয়ে নির্বাচনী মাঠে থাকবেন। ভোটকেন্দ্র অনুযায়ী দলীয় নেতাদের কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সবাইকে কৌশলী ও সতর্ক হয়ে চলারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কাউন্সিলরদের প্রচারণা : গতকাল সকাল থেকে একটানা প্রচারণায় নেমেছেন নগরীর ৫৭টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলররা। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাইছেন তারা। এ ছাড়া কাউন্সিলর প্রার্থীরা সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট গ্রহণের আশা প্রকাশ করেছেন। এদিকে ভোটারদের নিজেদের দলে ভেড়াতে এ প্রার্থীরা নিচ্ছেন নানা কৌশলও। আসন্ন বিশ^কাপ ফুটবল উন্মাদনাকে সামনে রেখে অনেক কাউন্সিলর প্রার্থী ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রজেক্টরের মাধ্যমে খেলা দেখানোর ব্যবস্থা করছেন। অনেক ওয়ার্ডে ১০ থেকে ১৫টি পয়েন্টে প্রজেক্টরের মাধ্যমে খেলা দেখানো হচ্ছে। এ বিষয়ে ১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী খোরশেদ আলম জানান, তরুণদের খেলায় উৎসাহ দেয়ার লক্ষ্যে প্রজেক্টরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে সবাই আনন্দে উদ্বেলিত, যা সব বয়েসীকে বিনোদন দিচ্ছে। একই অবস্থা ১৬ নং ওয়ার্ড, ১৭ নং ওয়ার্ডসহ বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডের। নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মণ্ডল জানান, আমাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আমরা চাই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ হোক। এ লক্ষ্যে আমরা মাঠে কাজ করে যাচ্ছি। সব দলের সমান অধিকার নিশ্চিতে জিরো টলারেন্সে বিশ্বাসী আমরা। গত ১৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা ছিল। নির্বাচনের কয়েক দিন আগে সীমানা সংক্রান্ত জটিলতায় হাইকোর্টে রিট হলে আদালতের নির্দেশে নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। পরবর্তীতে দুই মেয়রপ্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার ও জাহাঙ্গীর আলম এবং নির্বাচন কমিশন এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে আপিল বিভাগ নির্বাচনের স্থগিতাদেশ তুলে দেন। ফলে নির্বাচন কমিশন ২৬ জুন নির্বাচনের ভোটগ্রহণের নতুন তারিখ নির্ধারণ করে। গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৫ জন, নারী ভোটার ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৮০১ জন। মোট মেয়রপ্রার্থী ৭ জন। ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ২৫৫ জন ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী প্রার্থীর সংখ্যা ৮৪ জন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App