×

পুরনো খবর

সেবা নয়, টাকাই টার্গেট পল্লবী পুলিশের

Icon

ইমরান রহমান

প্রকাশ: ১৪ জুন ২০১৮, ১২:৫৮ পিএম

সেবা নয়, টাকাই টার্গেট পল্লবী পুলিশের
১১ জুন, রাত সাড়ে ৮টা। পল্লবী থানার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন তিন মহিলা ও এক যুবক। কিছুক্ষণ পরপর তারা থানার ভেতরে যাচ্ছেন, আবার বাইরে এসে দাঁড়াচ্ছেন। তাদের কাছাকাছি গেলে শোনা যায়, এক মহিলা অপর মহিলাকে বলছেন পোড়া কপাল আমার। মামলা করেও কোনো লাভ হলো না। এরপর ওই মহিলার কাছে ঘটনা জানতে চাইলে বলেন, আমার স্বামীর নাম মো. কালাম। আরেকটি বিয়ে করার পর থেকেই আমাকে নানাভাবে নির্যাতন করছে। এ জন্য থানায় মামলা করেছি। কিন্তু পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এখন ওসি স্যারের কাছে বিচার দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছি। মামলা করতে কি টাকা লাগে? এই প্রশ্নে ওই মহিলার জবাবÑ এই থানায় কোন কাজে টাকা লাগে না সেটা বলেন? মামলা করার পর আমার কাছে ৫০০ টাকা চাওয়া হয়। পরে আমি ৩০০ টাকা দিছি। এখন টাকা না দিলে হয়তো বা মামলার তদন্তও হবে না। এই থানার কার্যক্রম দেখলে মনে হয় টাকাই তাদের টার্গেট, মানুষের সেবা নয়Ñ বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। একইদিন সকালে পৃথক ঘটনায় জিডি করতে আসা ৩ জন অভিযোগ করেন, জিডি করার পরই ২০০ থেকে ১০০ টাকা চেয়ে নেয়া হচ্ছে। জিডির ক্ষেত্রেও হয়রানির শিকার হচ্ছেন তারা। জিডির কপির ফটোকপি আনতে বলছেন ডিউটি অফিসাররা। কিন্তু এই কাগজে ফটোকপি হয় না। ফলে স্ক্যান করে প্রিন্ট করাতে আরো ১০০ টাকা লাগছে। দুপুর একটার দিকে ছিনতাইয়ের ঘটনায় জিডি করতে আসেন শফিক নাকে এক ব্যক্তি ও তার স্ত্রী। গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার সময় মিরপুর সাড়ে ১১ নম্বরে দিনে দুপুরে ছিনতাই হয় তাদের মোবাইল, পাসপোর্টসহ সব কিছু। এ ঘটনায় জিডি করতে এলে তাদের কাছে টাকা চান এক পুলিশ সদস্য। পরে শফিকের স্ত্রী তার হাতব্যাগ ঘেটে ১০০ টাকা দিলেও ছিনতাইয়ের ঘটনা শুনে অন্য পুলিশ সদস্যরা তা নেননি। এদিকে ফুটপাতে চাঁদাবাজি, চোরাই মার্কেট থেকে মাসোয়ারা আদায় ছাড়াও পল্লবী থানা পুলিশের বিরুদ্ধে রয়েছে এন্তার অভিযোগ। সূত্র জানায়, মিরপুরের লালমাটিয়া টেম্পু স্ট্যান্ড রোড সংলগ্ন শেখ কামাল স্কুলের পাশে প্রতিদিন সন্ধ্যার পরে পুরনো মোবাইল ফোনের দোকান বসে। এই দোকানগুলোতে সব চোরাই মোবাইল ফোন বিক্রি করা হলেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয় না। কারণ পুলিশকে নিয়মিত মাসোয়ারা দিয়েই চলছে ওই অর্ধশতাধিক দোকান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক দোকানি বলেন, লাইনম্যান জাকির মোল্লা পুলিশের নামে প্রতিদিনই দোকানপিছু ২০০-৫০০ টাকা করে নেয়। এ থানার কিছু পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে রয়েছে মাদক ব্যবসার অভিযোগও। পুলিশকে মাসোয়ারা দিয়ে তালতলা বস্তিতে জুয়েল ও মিঠু এখনো মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। তা ছাড়া সরেজমিন থানায় অবস্থানকালে মানিক হাসান ও শেখ রাজু জামান নামে দুই দালালকেও ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পল্লবী থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. মঈনুল কবীর ভোরের কাগজকে বলেন, এই থানায় জিডি কিংবা মামলা কোনোটাতেই টাকা নেয়া হয় না। যারা অভিযোগ করেছে, আগে তাদের যাচাই করা উচিত। চাঁদাবাজি ও মাদকের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, লালমাটিয়ায় কিছু পুরনো মোবাইল ফোনের দোকান বসে। তবে, সেখানে চোরাই ফোন বিক্রি হয় কিনা আমার জানা নেই। আর পল্লবীতে কোনো মাদকের স্পট নেই। চাঁদাবাজিতো প্রশ্নই আসে না। সরেজমিন দেখা যায়, থানার নিজস্ব ভবন থাকলেও অভ্যাগতদের জন্য বসার কোনো জায়গা নেই। জায়গার অভাবে থানার গাড়িগুলো রাস্তার উপরেই পার্ক করে রাখা হয়েছে। নারী ও শিশু হেল্প ডেস্ক থাকলেও সেটি তালাবদ্ধ দেখা যায়। দুপুর ১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত থানার সেরেস্তা রুম ফাঁকা পাওয়া যায়। থানাটিতে আবাসিক সমস্যা রয়েছে বলেও জানান পুলিশ সদস্যরা। থানার কর্মকর্তারা জানান, রাজধানীর সেনপাড়া পর্বতা, হারুন মোল্লা সড়ক, লালমাটিয়া সড়ক, কালসি রোড, দুয়ারিপাড়া রোড, কালাপানি, বেগুনটিলা, বালুঘাট, সাগুফতা হাউজিং, আলুবদিরটেক, মিরপুর ডিওএইচএস, মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট, সিরামিক এভিনিউ, বাউনিয়া, চাকদ্বিগুণ, ষটোহাতি, মানদুরা ও বানদুরা এলাকা নিয়ে পল্লবী থানা গঠিত। এই থানায় মাসে গড়ে ৮০টি মামলা হয়। এর বেশিরভাগই মাদক ও নারী নির্যাতন সংশ্লিষ্ট।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App