×

মুক্তচিন্তা

চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ জরুরি

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ জুন ২০১৮, ০৭:৪৪ পিএম

বিশালাকার এই বাজেটকে বলা হচ্ছে উচ্চাভিলাষী বাজেট। তবে বাজেট উচ্চাভিলাষী কিনা সেটা নির্ভর করে বাস্তবায়ন সক্ষমতার ওপর। বাজেট উচ্চাভিলাষী হবে না যদি এই বাজেট বাস্তবায়নের জন্য উপযুক্ত কর্মসূচি, পরিকল্পনা ও প্রচেষ্টা থাকে। আমরা আশা করব সরকার তার প্রতিশ্রুতি পূরণের বাজেট বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছেন। প্রস্তাবিত এ বাজেটের আকার চলতি অর্থবছরের চেয়ে ২৫ শতাংশ বড়। টাকার অঙ্কে গত বছরের চেয়ে এ বাজেটের আকার বেড়েছে ৬৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে উন্নয়ন ব্যয় হচ্ছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা। এই বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে, অনুন্নয়ন বা পরিচালন ব্যয় হচ্ছে ২ লাখ ৮২ হাজার ৪১৫ কোটি টাকা। দ্রুত উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উত্তীর্ণ হতে বাজেটের উন্নয়ন কর্মসূচিতে মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়ন খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এই দুই খাতে ব্যয় হবে মোট উন্নয়ন কর্মসূচির ৫৩ দশমিক ২ শতাংশ, যা আর্থিক মূল্যমানে ৯০ হাজার ৯০২ কোটি টাকা। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের এই ৫ম বাজেট দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ বাজেট। বৃহৎ বাজেট আমাদের অর্থনীতির কলেবর বৃদ্ধি, জাতীয় ব্যয় বৃদ্ধিরই প্রতিফলন। বাজেটে নির্ধারিত ব্যয়ের অঙ্ক যত বড় হয়, তার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থসংস্থানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং উন্নয়ন প্রকল্প যথাযথভাবে বাস্তবায়নের সক্ষমতা অর্জন ততই বড় চ্যালেঞ্জ।

২০১৮-১৯ অর্থবছরটি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য ও বর্তমান সরকারের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এর কারণ বর্তমান মহাজোট সরকার তাদের ঘোষিত উন্নয়ন রূপকল্প বাস্তবায়নের একটা বিশেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ অর্থবছরে সরকারের বেশকিছু মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হবে বা শুরু করতে হবে বা শুরু করা কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। যেমন পদ্মা সেতুর কাজ চলতি বছর শেষ করতে হবে বলে বাজেটে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প, পায়রা বন্দরের কাজ চলমান। এসব ক্ষেত্রে বড় রকম অর্থ জোগানের ব্যাপার আছে। উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি পূরণের পাশাপাশি ২০১৯ সালের নির্বাচনকে মাথায় রাখতে হয়েছে। বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির খাতওয়ারি বরাদ্দ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, স্থানীয় সরকার বিভাগে সর্বোচ্চ ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ বা ২৫ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের জন্য ১৩ দশমিক ২ শতাংশ বা ২২ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে প্রস্তাব করা হয়েছে ১২ শতাংশ বা ২০ হাজার ৮১৭ কোটি টাকার বরাদ্দ। বাজেট ঘোষণার পর সাধারণ মানুষের আগ্রহ থাকে দ্রব্য ও সেবামূল্য বাড়া-কমার দিকে। এই বাজেটের পর খাদ্যপণ্য, গুঁড়ো দুধ, কৃষি উপকরণ, ক্যান্সারের ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী, চিকিৎসাসেবা মূল্য, দেশে উৎপাদিত মোটরসাইকেল ও ইলেকট্রনিক সামগ্রীর দাম কমার যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে তা সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেবে। কৃষি, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি এসব অবশ্যই ইতিবাচক দিক। উন্নয়ন প্রকল্পের মানসম্মত বাস্তবায়ন, সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বরাদ্দকৃত টাকা সঠিক হাতে সবটা পৌঁছানো নিশ্চিত করার দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন সুশাসন। এবারের বাজেটে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশনের রূপরেখা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী যা বাস্তবায়ন হলে সমাজের উপকার হবে। বিশালাকার এই বাজেটকে বলা হচ্ছে উচ্চাভিলাষী বাজেট। তবে বাজেট উচ্চাভিলাষী কিনা সেটা নির্ভর করে বাস্তবায়ন সক্ষমতার ওপর। বাজেট উচ্চাভিলাষী হবে না যদি এই বাজেট বাস্তবায়নের জন্য উপযুক্ত কর্মসূচি, পরিকল্পনা ও প্রচেষ্টা থাকে। আমরা আশা করব সরকার তার প্রতিশ্রুতি পূরণের বাজেট বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App