×

পুরনো খবর

মোহাম্মদপুরে বরাদ্দকৃত খাবার পায় না হাজতিরা

Icon

ইমরান রহমান

প্রকাশ: ০৫ জুন ২০১৮, ০১:৪০ পিএম

মোহাম্মদপুরে বরাদ্দকৃত খাবার পায় না হাজতিরা
মাদক সেবনের অভিযোগে গত শনিবার (২ জুন) সন্ধ্যার পর অপু নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। রাতেই তাকে মোহাম্মদপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়। এরপর সারা রাত কিছু না খেয়েই কাটাতে হয় অপুকে। পরদিন সকালে খবর পেয়ে থানায় ছুটে আসেন তার মা চায়না বেগম ও স্ত্রী। দুপুর ১২টার দিকে তারা সেন্ট্রিকে ১০০ টাকা ঘুষ দিয়ে দেখা করেন অপুর সঙ্গে। অপু তাদের বলেন, এখনো পেটে কিছু পড়েনি। যদি পার আমার জন্য কিছু খাবার কিনে আন। এরপর চায়না বেগম বাইরে থেকে খাবার কিনে ছেলেকে খেতে দেন। পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের জানানো হয়, হাজতখানায় থাকাকালীন খাবার দিতে হবে আসামির পরিবারকেই। ওইদিন আদালতে চালান না করায় চায়না বেগম সন্ধ্যার পর আবার ছেলের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। পরে তিনি ছেলের জন্য রাতের খাবার কিনতে বের হন। এ সময় পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে বলা হয়, আগামীকাল (৪ জুন) সকাল ৮টায় অপুকে আদালতে পাঠানো হবে। আপনি সকাল ৮টার আগে এসে খাবার খাইয়ে যাবেন। একইদিন থানার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় দুই যুবককে। কারণ জানতে চাইলে এক যুবক বলেন, আমার ভাই চুরি মামলায় গত শুক্রবার গ্রেপ্তার হয়। এরপর থেকে ৫ দিনের রিমান্ডে রয়েছে। গ্রেপ্তারের দিন থেকে আজ পর্যন্ত প্রতি বেলা আমরাই খাবার দিয়ে যাচ্ছি। প্রতি বেলা খাবার দিতে সেন্ট্রিরা ১০০-২০০ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ তার। শুধু এই দুটি ঘটনাই নয়, গত ৩ মে সরেজমিন দেখা যায়Ñ মোহাম্মদপুর থানায় আটককৃত সব আসামির স্বজনরাই খাবার নিয়ে হাজির হচ্ছেন থানায়। জানতে চাইলে একই উত্তর সবার থানা থেকে খাবার নিয়ে আসতে বলা হয়েছে, তাই আমরা খাবার নিয়ে এসেছি। এদিকে, খাবার দেয়ার ফাঁকে সেন্ট্রিরা হাতিয়ে নিচ্ছেন লোক বুঝে ১০০ থেকে ২০০ টাকা। র‌্যাবের অভিযানে আটক হন শহিদুল নামে এক দর্জি। তার স্বজনরাও একই ধরনের অভিযোগ করেন। সূত্র জানায়, পুলিশি হেফাজতে থাকা আসামির খাওয়ার জন্য সরকার প্রতিদিন বরাদ্দ দিয়ে থাকে ৭৬ টাকা। এতে করে, আসামির স্বজন না এলেও তার খাওয়ায় কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু মোহাম্মদপুর থানায় আটক আসামিদের থাকতে হয় স্বজনদের প্রতীক্ষায়। স্বজনরা থানায় এসে খাবার কিনে না দিলে পেটে দানা পড়ে না তাদের। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর থানার ওসি জামাল উদ্দিন মীর বলেন, সরকারের বরাদ্দকৃত খাবার নিয়মিত সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে, আসামিদের স্বজনরা দেখা করার জন্য খাবার দেয়ার অছিলা খোঁজে। সেন্ট্রিদের টাকা নেয়ার বিষয়ে বলেন, খাবার সরবরাহ করে টাকা নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। যদি এ ধরনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। পরে ওসি থানার ডিউটি অফিসারকে বিষয়গুলো দেখার নির্দেশ দেন। এনপর ডিউটি অফিসার সেন্ট্রিদের টাকা নিতে নিষেধ করেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে খাবার কিনে থানায় আসেন চায়না বেগম। তখন ডিউটি অফিসার এ প্রতিবেদকের সামনে বলেন, সরকারি খাবারতো আছে। এগুলো না দিলেও চলবে। ডিউটি অফিসারের হঠাৎ এমন পরিবর্তনে বেশ অবাক হন চায়না বেগম। থানার পুলিশ কর্মকর্তরা জানান, রাজধানীর একতা হাউজিং, বসিলা গার্ডেন সিটি, ঢাকা উদ্যান, রামচন্দ্রপুর, রাজধানী হাউজিং, সিসিডিবি আবাসিক এলাকা, চাঁদ উদ্যান, শ্যামলী, নবীনগর হাউজিং, রায়েরবাজার, কাটাসুর, লালমাটিয়া, আসাদ এভিনিউ, জেনেভা ক্যাম্প, রিং রোড, সাত মসজিদ রোড ও তাজমহল রোড এলাকা নিয়ে মোহাম্মদপুর থানা গঠিত। থানাটিতে ১ জন ইন্সপেক্টর ইনচার্জ (ওসি), ২ জন ইন্সপেক্টর, ২৯ জন এসআই, ৩৮ জন এএসআই ও অর্ধশত কনস্টেবল রয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, বিভিন্ন মামলায় আটককৃত গাড়ি থানার সামনে রাস্তার অর্ধেক জায়গা দখল করে রাখা হয়েছে। যার অধিকাংশই ভেঙেচুড়ে ভাঙ্গারিতে পরিণত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে দেখলে এটিকে মনে হবে কোনো ডাম্পিং গ্রাউন্ড। এ ছাড়াও থানাটিতে জনবল সংকটসহ বেশকিছু সমস্যা রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App