×

পুরনো খবর

হাজারীবাগে ছয় পুলিশ কর্মকর্তার মাদক বলয়

Icon

ইমরান রহমান

প্রকাশ: ০৪ জুন ২০১৮, ১২:৫৩ পিএম

হাজারীবাগে ছয় পুলিশ কর্মকর্তার মাদক বলয়
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার পর সারা দেশেই চলছে মাদকবিরোধী অভিযান। র‌্যাব ও পুলিশের অভিযানে ইতোমধ্যে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে শতাধিক। ছিঁচকে ব্যবসায়ী থেকে রাঘববোয়াল কাউকেই ছাড় দেয়া হচ্ছে না। এতে ভীত হয়ে অনেক মাদক ব্যবসায়ী আত্মগোপন করেছে, কেউবা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। ব্যতিক্রম হয়নি রাজধানীর হাজারীবাগেও। এই এলাকার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীরা ভয়ে পালিয়ে রয়েছেন। এই সুযোগে মাদকের বাজার দখল করে নিয়েছে হাজারীবাগ থানার কতিপয় অসৎ পুলিশ সদস্য। সোর্স ও মাঝারি পর্যায়ের কিছু মাদক ব্যবসায়ীকে কব্জায় এনে তারা চালিয়ে যাচ্ছেন মাদক ব্যবসা। সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসআই হারুন, এসআই আবদুর রউফ বাহাদুর, এসআই রেজাউল, এএসআই সাইফুল ও এএসআই শহীদুলের সমন্বয়ে মাদকের বলয় গড়ে তুলেছেন হাজারীবাগ থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন্স) মজিবর রহমান। আর এই চক্রকে মাদক সরবরাহ করে তাদের সোর্স ওয়াসিম, লম্বা নাসির, গিরিংগি সোহেল, প্রিন্স ও কেয়া। মাদকের অধিকাংশই আসে বিভিন্ন ঘটনায় জব্দকৃত অংশ থেকে। এখানেই শেষ নয়, চক্রটির সদস্যরা যাদের কাছে মাদক বিক্রি করে পুলিশ আবার তাদেরই আটক করে বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে হাতিয়ে নেয় মোটা অঙ্কের টাকা। প্রাপ্ত তথ্য মতে, হাজারীবাগের একজন কাউন্সিলর ও এক যুবলীগ নেতাও এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত। পুলিশ ও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় হাজারীবাগে এখনো চলছে মাদকের খুচরা বিক্রি। এরমধ্যে গণকটুলিতে মাক্কু সোহেল, হাজারীবাগ পার্ক এলাকায় পেট কাটা বাবু, বার্তানগরে মনোয়ার, সিটি কলোনিতে রবিন, বোরহানপুরে সজল, বাড্ডানগরে রুমানা ও বিজু, রায়েরবাজার ও মধুবাজারে মিজান এবং গজমহল এলাকায় আলাউদ্দিন মাদক বিক্রি করছে। আর এসব খুচরা মাদক ব্যবসায়ীর প্রধান হিসেবে কাজ করছে কেয়া। এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাজারীবাগ থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন্স) মজিবর রহমান গত ২ জুন রাতে ভোরের কাগজকে বলেন, হাজারীবাগে এখন মাদক ব্যবসায়ী নেই বললেই চলে। আগে গণকটুলি এলাকা মাদকের আখড়া ছিল। এসআই হারুন ও এসআই বাহাদুর বিট ইনচার্জ হিসেবে মাদক ব্যবসা গুঁড়িয়ে দিয়েছেন। এখন ওই এলাকার কিছু অসৎ লোক তাদের ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। তবে, আমরা ডিসি স্যার ও আমাদের ওসি স্যারের নির্দেশে মাদক নির্মূলে নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে কেউ আমাদের ফাঁসানোর চেষ্টা করতে পারে। ইতোমধ্যে আমরা শুনেছি, হাজারীবাগে কৌশল পরিবর্তন করে একদল ব্যবসায়ী মাদক ব্যবসা করছে। তাদের নাম পেলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। এর আধঘণ্টা পর তিনি এই প্রতিবেদককে ফোন দিয়ে বলেন, যেহেতু আবার নাম উঠে আসছে সেহেতু মনে হচ্ছে আমরা হাজারীবাগকে শতভাগ মাদক নির্মূল করতে পারিনি। আমি লিড দিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করাচ্ছি, তাই এখন তারা আমাকে ফাঁসাচ্ছে। আপনার কাছে যে তালিকা আছে সেটি আমাদের দেন। আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। থানার কর্মকর্তারা জানান, রাজধানীর শের-ই-বাংলা রোড, পশ্চিম ধানমন্ডি, মধুবাজার, জাফরাবাদ, এতিমখানা সড়ক, আরমান খান সড়ক, তিন মাজার এলাকা, জিগাতলা, ট্যানারি মোড়, মিতালি রোড, ধানমন্ডি ৩/এ থেকে ৮/এ-এর আংশিক, হাজারীবাগ ট্যানারির উত্তর ও দক্ষিণ ব্লক, বাঁশতলা, বাড্ডানগর, ভগলপুর, বৌবাজার, বেড়িবাঁধ এলাকা নিয়ে হাজারীবাগ থানা গঠিত। থানাটিতে ১ জন ইন্সপেক্টর ইনচার্জ (ওসি), ২ জন ইন্সপেক্টর, ২১ জন এসআই, ২৭ জন এএসআই ও অর্ধশত কনস্টেবল রয়েছেন। বর্তমানে একটি ভাড়া বাসায় কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় রয়েছে নানা রকম সমস্যা। তবে, নির্মাণাধীন নতুন ভবনে স্থানান্তরীত হলে আর এ ধরনের সমস্যা থাকবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App