×

জাতীয়

দুর্গে জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে জাপা, শক্তিশালী হচ্ছে আ.লীগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০১৮, ০৩:৩৯ পিএম

দুর্গে জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে জাপা, শক্তিশালী হচ্ছে আ.লীগ
পার্টি প্রধানের বহুমুখী বক্তব্য, যে কোনো বিষয়েই একক সিদ্ধান্ত এবং নেতাকর্মীদের সমন্বয়হীনতার কারণে দিন দিন শক্তিহীন হয়ে পড়ছে জাতীয় পার্টির (জাপা) সাংগঠনিক কাঠামো। নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন জেলা, উপজেলা ও তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মী। বিশেষ করে পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জন্মস্থান রংপুরেই হতাশ হয়ে পড়েছেন নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। জাপার দুর্গ হিসেবে পরিচিত উত্তরাঞ্চলের বিভাগীয় এই নগরী এখন দখলে নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। গেল কয়েক বছরের সংসদ থেকে স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনে জাপা প্রার্থীদের পিছু হটা ও শোচনীয় পরাজয়ের মধ্য দিয়ে পার্টির জনপ্রিয়তা তলানিতে নামছে বলে মনে করছেন রংপুরের সাধারণ মানুষ। সূত্রমতে, বিগত ১৯৯১ সালের ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর বিভাগের ৩৩ আসনের মধ্যে জাপার দখলে আসে ১৮টি। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে এর থেকে পাঁচটি আসন হাতছাড়া হয় তাদের। তবে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একটি বেড়ে তাদের আসন গিয়ে দাঁড়ায় ১৪টিতে। এ নির্বাচনে জাপার দুর্গ রংপুর জেলার ৬টি আসনের মধ্যে তিনটিরই দখল নেয় আওয়ামী লীগ। যদিও ১৯৯১ সালের নির্বাচনের উল্টো ফল দাঁড়ায় ২০১৪ সালের নির্বাচনে। ১৯৯১ সালে রংপুরের ৬টি আসনের মধ্যে জাপা পেয়েছিল ৪টি আর আওয়ামী লীগের দখলে ছিল ২টি আসন। অন্যদিকে ২০১৪ সালে জাপা পায় দুটি আসন, আর চারটিই চলে যায় আওয়ামী লীগের দখলে। এরপর ২০১৬ সালের পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নিজ দুর্গে জাপার প্রার্থীদের শোচনীয় পরাজয় ঘটে। রংপুর জেলার ৭৬টি ইউপির নির্বাচনে মাত্র সাতটিতে বিজয়ী হয় জাপা। এ ছাড়া দিনাজপুর ও পঞ্চগড়ে প্রার্থী দেয়া হলেও জয় তুলতে পারেনি কোথাও। পৌর নির্বাচনের ফলাফল আরো করুণ। একই বছরে রংপুরের তিন পৌরসভার দুটিতেই প্রার্থী দিতে ব্যর্থ হয় জাপা। আর বাকি একটিতে ভোটযুদ্ধে হারাতে হয় জামানত। তবে নিজ দুর্গের দখল হারানোর বিষয়ে রংপুর জেলা ও নগর জাপার শীর্ষ নেতাদের অভিযোগের তীর আওয়ামী লীগের দিকে। তাদের দাবিÑ ভোট ডাকাতি, কেন্দ্র আর বুথ দখল, আগেই ব্যালটবাক্স বোঝাই করে রাখার কারণেই ইউপি নির্বাচনে তাদের প্রার্থীদের পরাজিত হতে হয়েছে। তবে জাপা নেতাদের অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার শ্বশুরবাড়ি হিসেবে রংপুর এখন আওয়ামী লীগেরও দুর্গ। শুধু সংসদ নির্বাচনই নয়, রংপুরে জাপার জনপ্রিয়তায় ভাটা দেখা গেছে সব নির্বাচনেই। উপজেলা পরিষদ থেকে ইউপি নির্বাচন অবধি শতকরা ৯৫ ভাগই এখন আওয়ামী লীগের দখলে। জাতীয় পার্টির সেই সোনালি যুগ এখন আর নেই। রংপুরের শীর্ষ পর্যায়ের জাপা নেতারা বলছেন, মহাজোটে থাকার কারণেই সাধারণ মানুষ জাপা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। আর স্থানীয় নেতাদের অভিযোগ, পার্টি প্রধানের একেক সময় একেক রকমের বক্তব্যে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়। এ ছাড়া পার্টির যে কোনো সিদ্ধান্তই তিনি এককভাবে নেন। বহিষ্কারের ভয়ে এ বিষয়ে কেউ কোনো কথা বলেন না। তা ছাড়া চেইন অব কমান্ড না থাকায় নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনো সমন্বয়ও নেই। এসব কারণে নিজ দুর্গে জনপ্রিয়তা হারাতে হচ্ছে জাপাকে। জানতে চাইলে রংপুর মহানগর জাপার সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা ভোরের কাগজকে বলেন, জোট-মহাজোটে গিয়ে পার্টির স্বকীয়তা হারানোর কারণেই আমাদের পরাজিত হতে হচ্ছে। তবে রংপুরে জাপা দুর্গ আওয়ামী লীগের দখলে চলে যাচ্ছেÑ একথা মানতে নারাজ এই নেতা বললেন, জোট ত্যাগ করলেই পার্টির নেতারা স্বাধীনভাবে নিজেদের জনপ্রিয়তার প্রমাণ দিতে পারবেন। সেই সঙ্গে পার্টির একক শক্তিও প্রদর্শন করা যাবে। এদিকে জাপার সঙ্গে জোট করার কারণে রংপুরে আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেÑ এমন দাবি করে রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেন, রংপুরে জাতীয় পার্টিকে যেন আর ছাড় দেয়া না হয় সে জন্য মহানগর ও জেলা নেতারা এবার দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার কাছে আবেদন জানাবেন। প্রবীণ এই নেতার ভাষ্য, জাতীয় পার্টির সেই দুর্গ আর নেই। এখানে আওয়ামী লীগের গণজোয়ার তৈরি হয়েছে। জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াস সদস্য এবং পার্টির চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক সচিব সুনীল শুভ রায় রংপুর সিটি করপোরেশন ও সুন্দরগঞ্জের উপনির্বাচনে পার্টির জনপ্রিয়তার প্রসঙ্গ তুলে ভোরের কাগজকে বললেন, পার্টি জনপ্রিয়তা হারাচ্ছেÑ এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে প্রতিপক্ষরা। এর কোনো ভিত্তি নেই। স্থানীয় নির্বাচনে জাপা প্রার্থীদের শোচনীয় পরাজয় বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সুনীল শুভ রায় বলেন, আগে পরাজিত হয়েছে এখন বিজয়ী হবে। উল্লেখ্য, বিগত দশম জাতীয় নির্বাচনে জাপা ৩৪টি আসন দখল করে সংসদে বিরোধীদল হিসেবে যোগ দেয়। একই সঙ্গে জাপার তিন এমপি হয়ে যান মন্ত্রী। পার্টিপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নিয়োগ পান প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App