×

জাতীয়

তিন পথ খোলা রেখে ছক কষছে বিএনপি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ জুন ২০১৮, ০১:১১ পিএম

তিন পথ খোলা রেখে ছক কষছে বিএনপি
নাজুক সময় পার করছে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। সামনে একাদশ জাতীয় নির্বাচন। দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও দণ্ড মাথায় নিয়ে লন্ডনে পলাতক। পরিস্থিতি মোকাবেলায় একেক নেতার একেক মত। সৃষ্টি হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন বলয়। এসব ভিন্নমত ও বলয় সমন্বয় করেই নির্বাচনী ছক কষছেন দলটির নীতি-নির্ধারকরা। বিদ্যমান বাস্তবতায় সম্ভাব্য তিনটি পথ খোলা রেখেই এগিয়ে যেতে চান তারা। নির্বাচনের সময় যতই এগিয়ে আসবে ছক অনুযায়ী দলের অবস্থান আরো স্পষ্ট হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। তবে বিএনপি কখন কোন কার্ড খেলবে তা নির্ভর করছে ক্ষমতাসীনরা কোন পথে হাঁটে তার ওপর। নির্বাচন ঘিরে সরকারের প্রতিটি পদক্ষেপের দিকে গভীর নজর রাখছে বিএনপি। আওয়ামী লীগের কর্মকৌশল দেখেই নিজেদের পথ বেছে নেবেন নেতারা। বিএনপি নেতাদের মতে, আগামী নির্বাচন সরকার পক্ষ এক তরফাভাবে করতে পারবে না। সরকার যে ধরনের কৌশল নেবে, তার পাল্টা কৌশল থাকবে বিএনপির তরফ থেকেও। পরিস্থিতি ও বাস্তবতার আলোকে নির্বাচনী রুট ঠিক করবেন নেতারা। কোনো অবস্থাতেই সরকারকে ওয়াকওভার নিতে দেবে না। আগামী নির্বাচন ঘিরে বিএনপির ভাবনা কি-তা জানতে দলটির একাধিক সিনিয়র নেতার সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তাদের মূল্যায়ন হচ্ছে, আবারো ক্ষমতায় আসতে মরিয়া আওয়ামী লীগ। কিন্তু খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ পেলে সেটা কঠিন হবে। এ কারণে মাইনাস-খালেদা নির্বাচনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সচেষ্ট ক্ষমতাসীনরা। তবে নির্বাচনের সামগ্রিক গ্রহণযোগ্যতার জন্য বিএনপিকে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় রাখতেও প্রয়াসী তারা। কিন্তু বিএনপির কট্টরপন্থি ধারাটি খালেদাকে ছাড়া নির্বাচনে যেতে আগ্রহী নয়। তারা প্রয়োজনে নির্বাচন বর্জন করে আন্দোলনের পথে যেতে চায়। এই ধারার নেতাদের দৃঢ় বিশ্বাস, সরকার যে কৌশল নিয়ে এগুচ্ছে তাতে খালেদা জিয়ার সহসা মুক্তি মিলবে না। যদি মুক্তি মেলেও তিনি নির্বাচনে অযোগ্য থেকে যাবেন। খালেদা জিয়ার আপিল নিষ্পত্তির জন্য আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এ থেকেই তারা খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে ইঙ্গিত পেয়ে গেছেন। এই নেতারা মনে করেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জন করলেও সে নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি বিএনপি। একাদশ নির্বাচন যদি বর্জন করার সিদ্ধান্ত হয়, সে ক্ষেত্রে যে কোনো মূল্যে নির্বাচন ঠেকাতে হবে। তাতে আন্দোলনের ব্যারোমিটার যতটুকু ওপরে ওঠানোর প্রয়োজন হয়, তা করা হবে। আগামীতে আন্দোলনের প্রয়োজন হলে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে পেশাজীবী ও সাধারণ জনগণ মাঠে নামবে এবং আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন থাকবে বলে প্রত্যাশা তাদের। অন্যদিকে, দলের জনসমর্থন থাকলেও ছন্নছাড়া সংগঠন ও হতোদ্যম নেতাকর্মীদের নিয়ে তেমন আন্দোলনের বাস্তবতা নেই বলে মনে করেন নীতি-নির্ধারকদের একটি অংশ। তাদের মতে, দাবি মানতে সরকারকে বাধ্য করার মতো আন্দোলন গড়ে তোলার সামর্থ্য আপাতত বিএনপির নেই। আবার নির্বাচন বর্জন করলে দলের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়বে। নেতাকর্মীদের ওপর সরকারের দমন-পীড়ন আরো বাড়বে। বিদ্যমান বাস্তবতায় নির্বাচন বর্জনের মতো হঠকারিতা করার সময় এখন নয়। এই মতের নেতাদের আশঙ্কা, বিএনপি নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিলে দল ভেঙে যাবে। এরই মধ্যে বিএনপির কোনো কোনো নেতা সরকারের সঙ্গে গোপন যোগাযোগ রেখে চলছেন। সরকারের ছক সফল করতে প্রয়োজনে দল ভেঙে নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতিও রয়েছে তাদের। ওই নেতারা জানান, বিএনপির সামনে এখন তিনটি পথ রয়েছে - এক, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে নির্বাচনে অংশ নেয়া, দুই, খালেদাকে ছাড়াই নির্বাচন এবং তিন, নির্বাচন বর্জন ও প্রতিহত করা। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত দলের নেতাকর্মীরাও এই তিন ধারায় বিভক্ত। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই করণীয় নির্ধারণ করছেন শীর্ষ নেতারা। সম্ভাব্য তিনটি পথই খোলা রাখতে চান তারা। সময় ও পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে। তবে আপাতত খালেদাকে নিয়ে নির্বাচন, অন্যতায় বর্জন- এই ধারার নেতারাই বিএনপিতে সোচ্চার। মনে যা-ই থাকুক প্রকাশ্য বক্তৃতা-বিবৃতিতে দলের এই অবস্থানই তুলে ধরছেন তারা। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, খালেদা জিয়াকে বন্দি রেখে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি মার্কা একতরফা নির্বাচনের খায়েশ কখনো পূরণ হবে না। জনগণ প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে সরকারের সব ষড়যন্ত্রের জবাব দিতে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। খালেদা জিয়া ছাড়া জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি যাবে না। তার নেতৃত্বেই বিএনপি দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App