×

জাতীয়

তিন সিটিতে ভোটের হাওয়া

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ জুন ২০১৮, ০৩:৪৩ পিএম

তিন সিটিতে ভোটের হাওয়া

রাজশাহীতে মাঠে আছেন লিটন ও বুলবুল

সাইদুর রহমান, রাজশাহী থেকে : রাজশাহীর তাপমাত্রা এমনিতেই চড়া। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভোটের উত্তাপ। নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ৩০ জুলাই রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচন। দিনক্ষণ ঘোষণার আগে থেকেই নগরীতে বইছে ভোটের হাওয়া। এখন তা আরো জোরালো হয়েছে। সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী কে হচ্ছেন, আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনো আসেনি। ধারণা করা হচ্ছে বর্তমান মেয়র ও নগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলই ফের প্রার্থী হচ্ছেন। অন্যদিকে প্রার্থিতা আগে থেকেই ঠিক হয়ে থাকায় প্রচারে এগিয়ে আছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। সর্বশেষ রাসিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালের ১৫ জুন। ওই নির্বাচনের আগে চার বছর আট মাস মেয়রের দায়িত্ব পালনকালে লিটন মহানগরীতে প্রায় সাড়ে ৮০০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করেন। তার সমালোচকরাও তার উন্নয়নের প্রশংসা করেন। তবুও তাকে বিপুল ভোটে হারতে হয় বিএনপির প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের কাছে। এত উন্নয়নের পরও তার এ পরাজয়ের পেছনে আওয়ামী লীগ কর্মীদের নিষ্ক্রিয়তা, হেফাজতে ইসলামের অপপ্রচার এবং জামায়াতে ইসলামীর টাকায় বিএনপি প্রার্থীর ভোট কেনাকে দায়ী করেছিলেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তবে এবার আর কোনো ভুল করতে চান না লিটন সমর্থকরা। তাই অনেক আগ থেকেই জোরোশোরে মাঠে নেমেছেন লিটন। আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বরে দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনকে দলের মেয়র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেন। এরপর থেকে রাজশাহী নগরীতে প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ, সদস্যপদ নবায়নসহ বিভিন্ন দলীয় কার্যক্রমের সঙ্গে সিটি নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আসছে ক্ষমতাসীন দলটি। নগরীতে ওয়ার্ড পর্যায়ে এমনকি মহল্লায় মহল্লায় গিয়ে উঠান বৈঠকের আয়োজন করে আওয়ামী লীগ। সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম এখন শেষ পর্যায়ে। চলছে মহল্লা কমিটি গঠনের কার্যক্রম। আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিটি এবং ভোটকেন্দ্র কমিটি আগামী ১৫ দিনের মধ্যে গঠন করা হবে। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পরপরই এরই মধ্যে লিটনের পক্ষে স্টিকার, পোস্টার বিতরণ ও লাগানো শুরু হয়েছে। নগরীর বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নৌকা মার্কায় ভোট প্রার্থনা করে ব্যানার ও বিলবোর্ডও লাগানো হয়েছে। সেই সঙ্গে দলীয় মেয়র প্রার্থীসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন গ্রæপে ভাগ হয়ে লিটনের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন। জানতে চাইলে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মেয়র প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে সবুজ সংকেত পাওয়ার পরপরই আমিসহ দলের নেতাকর্মীরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমেছি। বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ, সেমিনার থেকে শুরু করে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে পৌঁছাতে যা কিছু করা দরকার তা করছি। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণায় দলীয় নেতাকর্মীসহ ভোটারদের মাঝেও বেশ উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। আশা করছি নগরবাসী আমাকে মেয়র নির্বাচিত করবেন। অন্যদিকে মেয়র হিসেবে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন মহানগর বিএনপি সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর মামলা ও বরখাস্ত আদেশের কারণে অর্ধেকের বেশি সময় তিনি দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। দায়িত্ব ফিরে পেতেও দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ে নামতে হয় বুলবুলকে। এ সময়ে নগরবাসীর উন্নয়নে তেমন ভ‚মিকা রাখতে পারেননি বলে মনে করেন অনেকে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমান মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলই হতে যাচ্ছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী। কারণ তার প্রতিদ্ব›দ্বী আর কেউ নেই। যদিও অনেক নেতাকর্মী প্রার্থী হিসেবে সাবেক মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনুকে চাইছেন। তবে মিনু ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি এবার আর মেয়র প্রার্থী হবেন না। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য প্রার্থী হবেন। সেই হিসেবে বুলবুলই হচ্ছেন বিএনপির প্রার্থী। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হলেও এখন পর্যন্ত তেমন তৎপরতা দেখা যায়নি বিএনপি শিবিরে। তবে বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, বুলবুল কৌশলে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিনিয়ত জনগণের দোরগোড়ায় যাচ্ছেন, ভোটারদের আশ্বস্ত করছেন। কৌশলী প্রচারণায় তিনি অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। বিএনপির ভেতর থেকেও তার প্রতিদ্ব›দ্বী না থাকায় আসন্ন নির্বাচনে মূল লড়াই হবে পুরনো দুই প্রার্থী বিএনপির মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও আওয়ামী লীগের এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের মধ্যেই। মহানগর বিএনপি সভাপতি রাসিক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, উদার গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপি এই সরকারের অধীনে সবগুলো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। খুলনা সিটি নির্বাচনেও অংশ নেয়। কিন্তু খুলনা সিটি নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির মাধ্যমে ভোটকে কলঙ্কিত করা হয়েছে। এই অবস্থায় গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আগে থেকে অংশ নেয়ার কথা থাকায় সেখানে বিএনপি প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। ওই নির্বাচনের পর রাজশাহী সিটি নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা তা কেন্দ্র থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ছাড়াও জামায়াত এবং জাতীয় পার্টি প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় জামায়াত মহানগর সেক্রেটারি সিদ্দিক হোসাইন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়বেন। জাতীয় পার্টিও আনুষ্ঠানিকভাবে সিটি করপোরেশনে দলীয় প্রার্থী দিয়েছে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মহানগর কমিটির জরুরি সভায় রাসিক নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী হিসেবে সর্বসম্মতিক্রমে মহানগর জাতীয় পার্টির সহসভাপতি ও মহানগর যুবসংহতি সভাপতি ওয়াসিউর রহমান দোলনের নাম ঘোষণা করেছে। সিটিতে জাতীয় পার্টির বড় ভোট ব্যাংক না থাকলেও ভোট ফ্যাক্টরে জামায়াতের প্রার্থী শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকলে বিএনপির মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। অবশ্য গত ১২ মার্চ রাজশাহীতে এসে দলটির কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত আমির মুজিবুর রহমানের সঙ্গে জামায়াতের প্রার্থী সিদ্দিক হোসাইন গ্রেপ্তার হন। তবে সেটাকে সমস্যা হিসেবে দেখছে না দলটি। জামায়াত নেতারা বলছেন, সিটি করপোরেশনগুলোতে বারবার তারা বিএনপিকে ছাড় দিয়েছেন। কিন্তু তাদেরও কোনো একটিতে বিএনপির ছাড় দেয়া উচিত। পাঁচ নগরে ভোটের আনুপাতিক হারে রাজশাহীতেই জামায়াত সবচেয়ে শক্তিশালী। এই বিবেচনায় রাসিকে তাদের দাবি জোরালো।

সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু সিলেটে

ফারুক আহমেদ : সব জল্পনা-কল্পনা শেষ। সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনের দিনক্ষণ চ‚ড়ান্ত। সামনে মাঠের লড়াই। তার আগে অবশ্য মনোনয়নযুদ্ধ। প্রস্তুত সম্ভাব্য প্রার্থীরা। ইতোমধ্যে পুরোদমে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছেন তারা। তর সইছে না ভোটারদেরও। এবার নগর পিতা বেছে নেয়ার পালা। ভোট গ্রহণ ৩০ জুলাই, সময় মাত্র দুমাস। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই চাঙ্গা হয়ে উঠেছে নগরীর রাজনীতি। নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক করা হলেও সিসিক নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী চ‚ড়ান্ত করতে পারেনি বড় দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তবে গ্রিন সিগন্যালের কথা বলে ভোট চাইছেন উভয় দলের একাধিক নেতা। এ দিকে নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থিতা নিয়ে কৌত‚হলী নেতাকর্মী থেকে সাধারণ মানুষ। কে পাচ্ছেন ধানের শীষ প্রতীক? আর নৌকার কাÐারিইবা কে হবেন? কোন দল কাকে মনোনয়ন দেবেÑ এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। মেয়র প্রার্থীর চ‚ড়ান্ত ঘোষণা আসার অপেক্ষায় রয়েছেন নেতাকর্মীরাও। সিলেটে সবার মুখেই এখন সিটি নির্বাচনের আলাপ। নগরীর আম্বরখানা এলাকার ব্যবসায়ী সুমন মিয়া বলেন, বিভিন্ন কারণে আমাদের মধ্যে সংশয় ছিল, নির্বাচন আদৌ সময়মতো হবে কিনা। কিন্তু তফসিল ঘোষণার পর আমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছি। আমার খুব আনন্দ লাগছে দীর্ঘদিন পর নির্বাচন হবে, ভোট দেব। এ দিকে দুদলের হেভিওয়েট দুই প্রার্থী ছাড়াও আছেন ডজনখানেক মেয়র প্রার্থী। ভোটের দিনক্ষণ জানার পরই উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ-বিএনপির সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নির্বাচনের উত্তাপ ছড়িয়েছে। তফসিলের আগে মেয়র প্রার্থী চ‚ড়ান্ত করতে পারেনি কোনো দলই। প্রার্থী নির্ধারণ নিয়ে জটিলতা থাকলেও নেতাকর্মীদের নির্বাচন নিয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনার কমতি নেই। মনোনয়ন দৌড়ে শক্ত প্রতিদ্ব›িদ্বতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে সাবেক ও বর্তমান মেয়রকে। বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান নিজ নিজ দলীয় হাইকমান্ড থেকে গ্রিন সিগন্যাল পেয়েছেনÑ এমন দাবি অনেক আগেই করেছেন তারা। তবে এ দুই নেতার দাবির সঙ্গে একমত নন অন্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। তাদের মতে, এই দুজনই হারিয়েছেন তাদের জনপ্রিয়তা। তাই আগামী সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয় দলেই নতুন মুখ দেখা যাবে। ‘গ্রিন সিগন্যাল’র বিষয়টি প্রথম জানিয়েছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিপুল ভোটে হেরে সিলেট নগর ভবনের প্রায় ১৮ বছরের টানা কর্তৃত্ব হারান মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এই নেতা। গেল বছরের জুলাই মাসে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভা শেষে কামরান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বৈঠক শেষে নেত্রীর পক্ষ থেকে তাকে সিটি নির্বাচনের জন্য ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দেয়া হয়েছে বলে জানান কামরান। এ নিয়ে নগরীতে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়। তবে বিরূপ মন্তব্য আসে আওয়ামী লীগের অন্য সম্ভাব্য প্রার্থীদের কাছ থেকে। সর্বশেষ গত বছরের ২১ অক্টোবর সিলেটে সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচিতে এসে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দেয়ার বিষয়টি বাতিল করে বলেন, মনোনয়নের মাঠ উন্মুক্ত। সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতাকেই মেয়র পদে মনোনয়ন দেবে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে সাবেক এ মেয়রের পথ অনুসরণ করেন বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও। সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী হিসেবে দলীয় ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেয়েছেন বলে দীর্ঘদিন থেকে দাবি করে আসছেন বর্তমান মেয়র আরিফ। গত বছরের ১৪ নভেম্বর আরিফুল হক চৌধুরী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানেই নেত্রী তাকে এমন নির্দেশনা দেন বলে দাবি করেন আরিফ। তার এই দাবি মেনে নিতে পারেননি স্থানীয় বিএনপির নেতারাও। তাদের মতে, দলবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় আরিফুল হক বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। গ্রিন সিগন্যাল ফ্যাক্টর বাদ দিলে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে এবার সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা বেশ লম্বা। আওয়ামী লীগ থেকে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান ও সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ মনোনয়ন চাইছেন। আরো আছেন অর্থমন্ত্রীর প্রিয়ভাজন হিসেবে পরিচিত ক্রীড়া সংগঠক, বাফুফের সদস্য মাহিউদ্দিন আহমদ সেলিম। এই ব্যবসায়ী এবং ক্রীড়া সংগঠকও এবার আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র পদে মনোনয়ন চান। রয়েছে মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক সিটি কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদের নামও। দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপির মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এ পদের দাবিদার বিএনপির মহানগর কমিটির সভাপতি নাসিম হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিমও। তারাও দলীয় প্রতীকে মেয়র পদে নির্বাচন করতে তৎপর। এরই মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন সেলিম। এ ছাড়া বিএনপি থেকে বর্তমান প্যানেল মেয়র ও বিএনপি নেতা রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, যুবদল নেতা সালাহ উদ্দিন রিমনের নাম শোনা যাচ্ছে। জাতীয় পার্টির দলীয় প্রার্থী হিসেবে এককভাবে মাঠে রয়েছেন সাবেক পৌর কমিশনার আবদুস সামাদ নজরুল। খেলাফত মজলিসের অবদুল্লাহ আল মামুন প্রার্থী হিসেবে নিজের নাম জানান দিয়েছেন। এ ছাড়া গত নির্বাচনে মেয়র পদে জামায়াতের কোনো প্রার্থী না থাকলেও এবারের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন দলের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগর আমির এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্যদের নিয়ে সম্প্রতি তিনি নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন। সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) যাত্রা শুরু ২০০১ সালের ৩১ জুলাই। তবে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৩ সালে। আর সবশেষ সিসিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালের ১৫ জুন। এবার চতুর্থবারের মতো সিসিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সিটি মেয়র, ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নিয়ে ৩৭ সদস্যের সিটি পরিষদ। আসন্ন সিসিক নির্বাচন নিয়ে নগরবাসীর মনে উৎসাহের কমতি নেই। এখন শুধু দল থেকে কারা আসল ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পান তার অপেক্ষায় আছেন নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটাররা।

ভোটের আলোচনায় সরগরম বরিশাল মহানগর

এম মিরাজ হোসাইন, বরিশাল : অপেক্ষা ছিল, তবে এভাবে হঠাৎ করেই সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়ে যাবে তা হয়তো ভাবতে পারেননি কেউ। আর তাইতো গত সোমবার নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পরপরই বরিশালে আলোচনার প্রধান বিষয়ে পরিণত হয় সিটি করপোরেশন নির্বাচন। ৫৬ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে গঠিত বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বসিক) ৩০টি ওয়ার্ডে ভোটার ২ লাখ ৪৪ হাজার ১০১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ২২ হাজার ৩২৩ এবং নারী ভোটার ১ লাখ ২১ হাজার ৭৭৮ জন। আগামী ৩০ জুলাই নির্বাচনের ভোটগ্রহণের তারিখ ঘোষণা হলেও বরিশালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি এবং সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা অনেক আগে থেকেই আছেন প্রচারণার মাঠে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ মাঠের প্রচারণায় এগিয়ে আছেন। বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগসহ মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকসহ দলের স্থানীয় পর্যায়ের অধিকাংশ নেতাকর্মীই রয়েছেন তার পক্ষে। তবে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন দৌড়ে সাবেক সেনা কর্মকর্তা জাহিদ ফারুক শামীম অনেকটা এগিয়ে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। এর বাইরে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচনে লড়তে চাইছেন বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে খোকন সেরনিয়াবাত, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আফজালুল করিম, মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদুল হক খান মামুন ও সাবেক মেয়র প্রয়াত শওকত হোসেন হিরনের সহধর্মিণী বর্তমান সংসদ সদস্য জেবুন্নেছা আফরোজ। সাদিক এখানে মনোনয়নের আশায় দল গোছানোর পাশাপাশি নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রায় ৫ বছর ধরে। এমনকি তার নেতৃত্বে ইউনিট কমিটির নামে এখানে কেন্দ্র কমিটি পর্যন্ত গঠন করা হয়েছে। বর্তমানে তার সমর্থনে এখানে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে চলছে নৌকার পক্ষে ভোট প্রার্থনা। এক কথায় নির্বাচনী মাঠে এখন পর্যন্ত প্রচারণা আর সাংগঠনিক শক্তিতে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে আছেন সাদিক। অন্যদিকে, বিএনপিতে চলছে মনোনয়ন কেন্দ্রিক কোন্দল। অতীতে ধানের শীষের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল বরিশাল। গত ৫ বছরে কীর্তনখোলায় জল গড়িয়েছে অনেক। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পাল্টেছে ভোটের হিসেবও। তবে বিএনপি নেতাকর্মীরা তা মানতে নারাজ। বর্তমান মেয়র আহসান হাবিব কামাল ছাড়াও মেয়র পদে বিএনপির মনোনয়ন চাইছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, বরিশাল জেলা (দক্ষিণ) বিএনপির সভাপতি এবায়েদুল হক চাঁন, একই কমিটির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আবুল কালাম শাহিন, মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউদ্দিন সিকদার ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আফরোজা নাসরিন। নেতাকর্মীদের মতে, বিএনপির টিকেট পেলেই জিতে আসা যাবেÑ এমন ভাবনা থেকেই দলটিতে মনোনয়ন প্রত্যাশী অনেক বেশি। তবে ভোটের মাঠে প্রচারণা কিংবা সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর দিকে নজর নেই কারো। সবাই ব্যস্ত কেন্দ্রে লবিং-তদবিরে। বরিশাল সিটি নির্বাচনে বিএনপির সবচেয়ে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে সাবেক মেয়র ও দলের যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ারকে। যদিও মেয়র পদপ্রার্থী হওয়া নিয়ে তিনি স্পষ্ট করে বলছেন না কিছুই। জানতে চাইলে সরোয়ার বলেন, আমি সংসদ নির্বাচন করব। মেয়র নির্বাচন করার কোনো ইচ্ছে আমার নেই। তারপরও দল যদি মেয়র নির্বাচন করতে বলে সে ক্ষেত্রে সংসদ নির্বাচনে আমার অবস্থান কি হবে তার সমাধান করে নিতে হবে। দল যদি কোনো উপায় খুঁজে বের করতে পারে কেবল তাহলেই আমি সিটি নির্বাচন নিয়ে ভাবব, নয়তো নয়। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাশাপাশি এখানে মেয়র পদে লড়তে মাঠে আছেন জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন তাপস। দলীয় মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত হওয়ায় ইতোমধ্যেই কোমড় বেঁধে নেমে পড়েছেন তিনি। তাপস বলেন, দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত আমার কাছে। জোটবদ্ধ নির্বাচন না হলে আমি বিজয়ের জন্য চূড়ান্ত লড়াই করব। বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট গোলাম আব্বাস চৌধুরী বলেন, নির্বাচনের জন্য আমরা প্রস্তুত। প্রার্থী হিসেবে সাদিক আব্দুল্লাহর প্রস্তুতিও চূড়ান্ত। কেন্দ্রের সবুজ সংকেত পেলেই মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়ব সবাই। মনোনয়ন প্রার্থী সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, বরিশাল এখন আর বিএনপির ঘাঁটি নয়। ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনেই তা প্রমাণ হয়ে গেছে। বিজয়ের লক্ষ্যে মাঠে নামব আমরা। ইনশাল্লাহ বরিশালের মানুষ আমাদের ফিরিয়ে দেবে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App