×

পুরনো খবর

চকবাজারের হাজতখানা বাস্তবে অস্ত্রাগার

Icon

ইমরান রহমান

প্রকাশ: ২৯ মে ২০১৮, ০৩:২৩ পিএম

চকবাজারের হাজতখানা বাস্তবে অস্ত্রাগার
চকবাজারের হাজতখানা বাস্তবে অস্ত্রাগার
২০০৭ সালে মডেল থানা হিসেবে যাত্রা শুরু হওয়ার পর বেশ কয়েক বছর কেটে গেলেও বাস্তবচিত্রে কোনো পরিবর্তন হয়নি চকবাজার মডেল থানার। শুধু নামে মডেল সাইনবোর্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে জরাজীর্ণ স্থাপনাটি। থানার ভেতরে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য নেই আলাদা হাজতখানা। পুরুষদের জন্য একটি নোংরা হাজতখানা রাখা হলেও মহিলা হাজতখানাকে ব্যবহার করা হচ্ছে অস্ত্রাগার হিসেবে। মহিলা আসামি এলে কী করা হয় এমন প্রশ্নের জবাবে দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের থানায় জায়গার সংকট রয়েছে। তাই যদি কখনো মহিলা আসামি আসে তাহলে তাকে ডিউটি অফিসারের রুমে বসিয়ে রাখা হয়। যদি রাত হয় তাহলে রাতভর এখানেই পাহারায় রাখা হয়। সকাল হলেই তাকে কোর্টে চালান করে দেই। এখানেই শেষ নয়। অভ্যাগতদের জন্য নেই পর্যাপ্ত বসার ব্যবস্থা। জায়গা সংকটে থানার পিছনের বারান্দায় ব্যানার দিয়ে ঘিরে নারী ও শিশু ডেস্ক বানানো হয়েছে। তবে সেখানে কোনো মহিলা সদস্য দেখা যায়নি। পুলিশ সদস্যদের থাকার জায়গাতেও চরম সমস্যা। বাধ্য হয়ে কয়েক জন পুলিশ সদস্য থানার বারান্দায় চকি পেতে তাবু দিয়ে ঘিরে রাত্রিযাপন করেন। জনবল সংকটের কারণে মামলার তদন্ত সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে না বলে জানা গেছে। মডেল থানার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী, সেবাপ্রত্যাশীদের জন্য সুন্দর কক্ষে বসার ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ, টয়লেট ইত্যাদি থাকার কথা। কিন্তু গত ২৭ মে সরেজমিন দেখা গেছে, একটি ছোট রুমে ডিউটি অফিসার বসেন। নেই কোনো সার্ভিস ডেলেভারি অফিসার। থানার বাইরে বা ভেতরে অভ্যাগতদের জন্য বসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। ডিউটি অফিসারের রুমে বড়জোর ৩ জন বসতে পারবেন। ফলে দুজনের বেশি ভিকটিম এলেই বাকিদের থানার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। অনেক সময় মহিলা ভিকটিম এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও লজ্জার ভয়ে নিজের সমস্যার কথা বলতে পারেন না। থানাটি সিসি ক্যামেরার আওতাভুক্ত হলেও থানার প্রতিটি কোণায় ময়লার স্ত‚প সবার আগে নজরে আসবে। এমনকি থানার গেটের উত্তর পাশে ময়লার খোলা ডাস্টবিন থাকায় থানার সামনে দিয়ে সাধারণ মানুষজন হাঁটতেই পারেন না। থানার ভবনটি পুরনো হওয়ায় এবং ক্লিনার না থাকায় চারদিকে ময়লার স্ত‍‍ূপ পড়ে আছে। টয়লেটের অবস্থা মোটামুটি হলেও ভেতরে পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। টয়লেটের সামনে গেলেই এক কনস্টেবল বলে ওঠেন, বাইরে থেকে পাত্রে করে পানি নিয়ে যান। মডেল থানায় বিশুদ্ধ খাবার পানির সরবরাহ থাকার কথা থাকলেও চকবাজার থানার সামনে পানির যে ট্যাঙ্ক রয়েছে তাতে বেশির ভাগ সময় পানি থাকে না। পুলিশ কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর ২৭, ২৮, ২৯, ৩০, ৩১নং ওয়ার্ডগুলোর বেশ কিছু এলাকা নিয়ে চকবাজার থানার আওতাধীন। এর মধ্যে বকশীবাজার মোড়, খাজা দেওয়ান ১ম ও ২য় লেন, হরনাথ ঘোষ রোড, নাজিমউদ্দিন রোড, হোসনি দালান, ইসলামবাগ, ওয়াটার ওয়ার্কস রোড, চক সার্কুলার রোড, বেড়িবাঁধ, মিডফোর্ট রোড ও লালবাগ চৌরাস্তা এলাকা রয়েছে কিন্তু এ থানায় পুলিশি সেবা দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল ও যানবাহন নেই। বর্তমানে ওসিসহ দুই পরিদর্শক, ১৮ জন এসআই, ৩১ জন এএসআই এবং ৪৫ জন কনস্টেবল রয়েছেন। তবে নেই কোনো মহিলা তদন্ত কর্মকর্তা। মাত্র দুজন মহিলা কনস্টেবল রয়েছে। তাও থানায় রাতের থাকার জায়গার ব্যবস্থা না থাকায় তারা সব সময় থাকতে পারেন না। নেই কোনো অ্যাম্বুলেন্স। যে ৪টি গাড়ি রয়েছে তার মধ্যে ২টি বেশ পুরনো। জানা গেছে, গাড়ি সংকটের কারণে সব স্থানে সময়মতো পৌঁছতে সমস্যা হচ্ছে পুলিশ সদস্যদের। থানা সূত্র জানায়, চলতি বছরে ২০৩টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫০টিরও বেশি মাদক মামলা। তবে জনবল সংকটের কারণে প্রায় অর্ধেক মামলার চার্জশিট দেয়া সম্ভব হয়নি। চকবাজার মডেল থানার ওসি শামীম অর রশীদ তালুকদার ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের থানায় প্রায় সব কিছুতেই সমস্যা রয়েছে। মডেল থানা হলেও বাস্তবে এর কোনো কার্যক্রম নেই। তবে সীমাবদ্ধতার মধ্যেই আমরা সব সময় ভালো সেবা দেয়ার চেষ্টা করি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই থানা এলাকায় বুয়েট ও ঢাকা মেডিকেলের হল, শিয়া মসজিদ, ঢাকেশ্বরী মন্দির রয়েছে। এ ছাড়া ৮ ফেব্রুয়ারির পর থেকে খালেদা জিয়া পুরনো কারাগারে রয়েছেন। সব কিছু মিলিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাই আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা শুনেছি পুরনো কারাগারে যখন কমপ্লেক্স তৈরির কাজ শুরু হবে তখন থানার জায়গা সম্প্রসারণ করে নতুন ভবন করা হবে। নতুন ভবন হলে এসব সমস্যা থাকবে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App