×

পুরনো খবর

জিডি করতে টাকা লাগে ধানমন্ডি ‘মডেল’ থানায়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ মে ২০১৮, ০৩:৩৪ পিএম

জিডি করতে টাকা লাগে ধানমন্ডি ‘মডেল’ থানায়
বেশিরভাগ থানায় প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে বড় ব্যানারে লেখা ‘জিডি করতে কোনো টাকা লাগে না’। এক সময় ঢালাওভাবে জিডি করতে টাকা নিলেও ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশ ও জিডির বই পরিবর্তনের পর পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টেছে। শুধু ব্যতিক্রম রয়ে গেছে ধানমন্ডি মডেল থানা। নামে মডেল হলেও সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে একদমই বিপরীত চিত্র এখানে। কেউ কোনো কাজে এলে তার আর্থিক অবস্থা জিজ্ঞাসা করে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা। গত ২৬ মে সরেজমিন এমনই চিত্র দেখা গেছে। রাত সোয়া ৯টার দিকে থানায় জিডি করতে আসেন জহুরুল হক নামে এক ব্যক্তি। তিনি ডিউটি অফিসার এএসআই সৈকতের সামনে বসলে পাশে থাকা সার্ভিস অফিসার এসআই আলামিন ওই ব্যক্তিকে বলেন, আপনি কি করেন। ওই ব্যক্তির জবাব, ‘আমার ডাইং মিলস আছে’। এসআই আলামিন তাকে নিজের ডেস্কে ডেকে নিয়ে সমস্যা সম্পর্কে জানতে চান। জহুরুল জানান, তার বাসার কাজের মেয়ে একটি মোবাইল, স্বর্ণের অলংকার ও নগদ টাকা নিয়ে পালিয়েছে। পরে ওই এসআই যতœসহকারে জিডিটি লিখে দেন। জিডি লেখার ফাঁকে বলেন, ‘আপনি যেভাবে বলছেন, এতে জিডি হালকা হয়ে যায়। তাই আপনি ১ তারিখে দেশের বাইরে যান, ২০ তারিখে ফিরে এসে দেখেন ওই মালামালগুলো নেই। ধারণা করছেন, ‘এগুলো কাজের মেয়ে নিয়ে পালিয়েছে। এভাবে লিখে দিলাম। এতে অভিযোগ আরো স্ট্রং হয়েছে।’ এরপর জিডি করা শেষে ৫০০ টাকা চেয়ে নেন। এই জিডি করার ফাঁকে একটি পালসার (ঢাকা মেট্রো ল-৩৫৪২৫৪) মোটরসাইকেলে করে থানায় আসেন দুই যুবক। তারা এএসআই সৈকতের কাছে মোটরসাইকেলের কাগজ হারানোর বিষয়ে একটি জিডি করেন। জিডি শেষে লাল শার্ট পরা যুবককে জিজ্ঞাসা করা হয়, আপনি কি করেন? পরে ওই যুবক ব্যবসা করার কথা বললে ২০০ টাকা দাবি করেন। কিন্তু ওই যুবকের কাছে ২০০ টাকা ছিল না। পরে থানার বিপরীত পাশে একটি বিকাশের দোকান থেকে টাকা ক্যাশআউট করে ওই এএসআইকে দেয়া হয়। জিডি করে টাকা নেয়ার বিষয়ে কিছুই বলতে রাজি হননি এএসআই সৈকত ও এসআই আলামিন। পরে এ বিষয়ে ধানমন্ডি মডেল থানার ওসি আবদুল লতিফকে জিজ্ঞেস করা হলে ভোরের কাগজকে তিনি বলেন, জিডির বিনিময়ে টাকা নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। ঘটনা কি আপনার সামনে ঘটেছে? এই প্রতিবেদক বিস্তারিত জানালে ওসি বলেন, জিডির বিনিময়ে টাকা নেয়া কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না। আমি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেব। সন্ধ্যার দিকে থানার এক আনসার সদস্যের সঙ্গে কয়েক শিক্ষার্থীকে কথা বলতে দেখা যায়। ওই আনসার সদস্য শিক্ষার্থীদের বলেন, তোদের আল্লার দোহাই লাগে অন্তত এক মাস কিছু খাস না। বড় ঝামেলার মধ্যে আছি। শিক্ষার্থী বলে এবারের মতো মাফ করলাম। আর যেন না দেখি। এদিকে, উন্নতসেবা আর নানামুখী সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ‘আদর্শ’ বা মডেল হবে এ আশায় সারা দেশে স্থাপিত মডেল থানাগুলো ‘মডেল’ হতে পারেনি দীর্ঘদিনেও। মডেল থানাগুলোকে সাধারণ থানা থেকে কোনোভাবেই ব্যতিক্রম মনে হয় না বলে জানান সেবা নিতে আসা অনেকেই। উল্টো সাধারণ থানায় যে সুযোগ-সুবিধা আছে অনেক মডেল থানায় সেই সুবিধাগুলোই নেই, অভিযোগ তাদের। ধানমন্ডি মডেল থানাও তার ব্যতিক্রম নয়। মডেল থানার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী, সেবাপ্রত্যাশীদের জন্য সুন্দর কক্ষে বসার ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি সরবরাহ, টয়লেট ইত্যাদি থাকার কথা থাকলেও কোনোটাই নেই। উল্টো আবাসিক সমস্যা, পার্কিংয়ের জায়গা সংকট, মহিলা ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার না থাকাসহ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত থানাটি। থানার তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের পুরো এলাকাই ধানমন্ডি থানার আওতাধীন। এর মধ্যে সায়েন্সল্যাব, মিরপুর রোড, ধানমন্ডি-২৭, সাত মসজিদ রোড, ধানমন্ডি লেকসহ রোড নাম্বার ১-১৬ ও ২এ-১৫এ এলাকা রয়েছে। এমনকি ৩২ নম্বর সড়কের বঙ্গবন্ধু ভবনও ধানমন্ডি থানার আওতাভুক্ত। কিন্তু এ থানায় পুলিশি সেবা দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল নেই। মডেল থানাগুলোতে মহিলা পুলিশের সংখ্যা বাড়ানোর কথা থাকলেও ধানমন্ডি থানায় রয়েছে মাত্র একজন মহিলা এসআই। নেই কোনো অ্যাম্বুলেন্স ও পর্যাপ্তসংখ্যক সরকারি মোটরসাইকেল। এসব বিষয়ে ওসি বলেন, আমরা এখানে ভাড়া বাসায় থানার কাজ চালাচ্ছি। থানা ভবন নির্মাণাধীন। এ জন্য জায়গা সংকটের কারণে হালকা কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। তবে আমরা জনসাধারণকে উন্নত সেবা দিয়ে যাচ্ছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App