×

পুরনো খবর

নিউমার্কেট থানা ও ফাঁড়ির ডাবল চাঁদায় নিঃস্ব হকার

Icon

ইমরান রহমান

প্রকাশ: ২৭ মে ২০১৮, ১১:৪২ এএম

নিউমার্কেট থানা ও ফাঁড়ির ডাবল চাঁদায় নিঃস্ব হকার
কেনাকাটার জন্য রাজধানীবাসীর অন্যতম পছন্দের এলাকা নিউমার্কেট ও গাউছিয়া। সব শ্রেণির মানুষ সারা বছরই ভিড় করেন এ এলাকার দোকানগুলোয়। এ ছাড়া ফুটপাতেও চলে সমানতালে বেচাকেনা। রয়েছে ভাসমান হকারও। অস্থায়ীভাবে বসা এসব হকার ও দোকানিকে নিয়মিত দিতে হয় পুলিশি চাঁদা। একদিন চাঁদা না দিলেই তাদের শরীরে হাত তোলা হয়। করা হয় উচ্ছে¡দ। এমনকি টাকার ভাগ নিয়ে দ্ব›দ্ব দেখা দেয়ায় আলাদাভাবে চাঁদা তোলেন নিউমার্কেট থানা ও নিউমার্কেট পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা। ফলে ‘ডাবল’ চাঁদা গুণতে গিয়ে এক প্রকার নিঃস্ব হতে হয় হকারদের। এ ছাড়া রাজধানীর অন্যতম বড় বইয়ের মার্কেট, নীলক্ষেতের জাল সার্টিফিকেট ও আইডি কার্ড বানানো চক্রের সঙ্গেও রয়েছে পুলিশের লেনদেন। টানা পার্টির সঙ্গেও তাদের গলায় গলায় ভাব। মার্কেট এলাকা হওয়ায় বড় ব্যবসায়ীদের অবৈধ মালামাল আটকানোর ভয় দেখিয়ে মাসিক মোটা অঙ্কের টাকা নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে। গতকাল ২৬ মে নিউমার্কেট ও গাউছিয়ার বেশ কয়েকজন হকার ও ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। নিউমার্কেট-১ নম্বর গেট সংলগ্ন ফুটপাতের এক সরবতের দোকানি বলেন, জলে থাইকা কুমিরের সঙ্গে লড়াই করতে নেই। তবুও বলি প্রতিদিন রাত ৮টার পরে সিভিল পোশাকে থানা পুলিশের লোক আসে। তারা দোকান বুঝে ৫০ অথবা ১০০ টাকা নেয়। তারা যাওয়ার পরেই আসে ফাঁড়ি পুলিশের লোক। এরাও একই অনুপাতে টাকা নেয়। সারাদিন বেচাকেনা করে যা লাভ হয় তার বেশিরভাগই চলে যায় পুলিশের পেটে। ফলে আমরা গরিব হকাররা দিন দিন আরো নিঃস্ব হচ্ছি। একাধিক সূত্র জানায়, নিউমার্কেট থানার ওসির স্টাফ মান্নানের নেতৃত্বে আগে চাঁদা উঠতো। মান্নান নিজেকে থানার ওসি পরিচয় দিয়ে হাতিয়ে নিতো মোটা অঙ্কের টাকা। এরপর বিষয়টি জানাজানি হলে সে নিশ্চুপ হয়ে যায়। এই সুযোগে চাঁদার বাজার দখলে নেন নিউমার্কেট থানার এসআই হুমায়ুন কবীর ও এএসআই গোলাম কিবরিয়া। এ ছাড়া থানার ৪টি গাড়ির ২টিই এই এলাকায় টহলে থাকে। রাতে যখন যিনি ডিউটিতে আসেন, তিনিই চাঁদা উঠাতে ব্যস্ত থাকেন। টাকা উঠানোর জন্য পুলিশের রয়েছে বেশ কয়েকজন লাইনম্যানও। অন্যদিকে, নিউমার্কেট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এহসান মোল্লার নেতৃত্বে অন্য একটি গ্রæপ চাঁদাবাজি করে। এই গ্রæপের মূল হোতা এএসআই উবায়দুর, কনস্টেবল আজাহার মুন্সি, ফাঁড়ি ইনচার্জের বডিগার্ড আশিকুর। এসব অভিযোগ বিষয়ে জানতে তাদের মোবাইল ফোনে কল দেয়া হলে শুধুমাত্র এসআই হুমায়ুন কবীর ফোন ধরেন। তিনি বলেন, আমাদের একটাই দোষ, আমরা এই এলাকায় ডিউটি করি। অবৈধভাবে বসা হকার উচ্ছেদ করায় আমাদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করে। যা ভিত্তিহীন। চাঁদাবাজির বিষয়ে জানতে চাইলে নিউমার্কেট থানার ওসি আতিকুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, আমার স্টাফ মান্নানের বিরুদ্ধে আগেও অভিযোগ উঠেছে। আমি তদন্ত করে দেখেছি, আসলে সে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত নয়। তবে, একটি গ্রæপ নিউমার্কেট এলাকায় চাঁদবাজি করে। আমি তাদের নাম বলতে চাই না। তবে, থানা পুলিশের কেউ চাঁদাবাজি করে না। যদি করে থাকে তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। থানার কর্মকর্তারা জানান, এ থানা এলাকায় তেমন মামলা না হলেও বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মার্কেট থাকায় মানুষের নিরাপত্তা দেয়াই বড় চ্যালেঞ্জ। এর বাইরে ছাত্র ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির কারণে প্রায়ই উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করাও একটি বড় কাজ। থানা সূত্র জানায়, রাজধানীর পিলখানা, রাইফেল স্কয়ার, সিটি কলেজ, ঢাকা কলেজ, নিউমার্কেট, গাউছিয়া, আজিমপুর গভমেন্ট কোয়ার্টার, সুকন্যা টাওয়ার, সায়েন্সল্যাব, হাতিরপুল বাজার, ইস্টার্ন প্লাজা, সেন্ট্রাল রোড, ফুলার রোড ও নীলক্ষেত এলাকা নিয়ে নিউমার্কেট থানা গঠিত। থানাটিতে ১ জন ইন্সপেক্টর ইনচার্জ (ওসি), ২ জন ইন্সপেক্টর, ২৪ জন এসআই, ২৯ জন এএসআই ও ৩৫ জন কন্সটেবল রয়েছেন। জনবল ঠিক থাকলেও থানায় মাত্র ৪টি গাড়ি। যার মধ্যে ২টি প্রায়ই নষ্ট থাকে। এ ছাড়া আবাসিক সমস্যা, অভ্যাগতদের বসার জায়গার সংকট, পার্কিংয়ের জায়গা না থাকাসহ বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে এ থানায়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App