×

জাতীয়

অভিযানের তথ্য ফাঁস : সটকে পড়ছে টার্গেট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ মে ২০১৮, ১০:৫১ এএম

অভিযানের তথ্য ফাঁস : সটকে পড়ছে টার্গেট
মাদকবিরোধী টানা ২২ দিনের সাঁড়াশি অভিযানে তালিকাভুক্ত অনেকের নাগাল পাচ্ছে না পুলিশ, র‌্যাব ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। শতভাগ সফলতা মিলছে না অভিযানে। আবার অনেকেই সটকে পড়েছেন, এমন তথ্যে তার বাড়িতে অভিযান চালানো হচ্ছে না। মূলত বড় পরিসরে চালানো এই অভিযানে তালিকাভুক্তদের নাম ফাঁস হয়ে যাচ্ছে নানাভাবে। পুলিশ ও র‌্যাবের সোর্সরা মাদক ব্যবসায়ী ও ডিলারদের জানিয়ে দিয়েছে তালিকার খবর। মাদক ব্যবসায় জড়িত অনেক পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যও অভিযানের আগামবার্তা পৌঁছে দিয়েছে সংশ্লিষ্টদের কানে। এ ছাড়া গ্রেপ্তার ও ‘বন্দুকযুদ্ধ’ এড়াতে চিহ্নিতরা অভিযানের শুরুতেই গাঢাকা দিয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চলমান অভিযান ও সোর্সদের অপকীর্তি নিয়ে পদস্থ কর্মকর্তাদের সতর্কবার্তার বর্ণনা করেছেন। র‌্যাব-পুলিশের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ৪ মে শুরু হওয়া মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে গতকাল শনিবার পর্যন্ত ৭৮ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। অভিযানে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ট্যাবলেটের পাশাপাশি হেরোইন, ফেনসিডিল ও গাঁজা উদ্ধারের খবর রয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছে মাদক সংশ্লিষ্ট প্রায় সহস্রাধিক ব্যক্তি। সূত্র আরো জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৫ সংস্থার তালিকা থেকে চ‚ড়ান্ত তালিকা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিলেও নেই কোনো যৌথ অভিযান। র‌্যাব-পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর পৃথকভাবে অভিযান চালাচ্ছে। যৌথ অভিযানের কোনো পরিকল্পনা নেই উল্লেখ করে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, তালিকার নাম ধরে ধরে অভিযান চলছে। অনেকেই সটকে পড়েছে। এদিকে মন্ত্রণালয়ের তালিকায় রাজধানীসহ সারাদেশের ৬ শতাধিক মাদক ব্যবসায়ীর নাম রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে একাধিক সংস্থা। গত ২২ দিনের বিশেষ অভিযানে সারাদেশের মাদক সংশ্লিষ্ট সহস্রাধিক ব্যক্তিকে আটকের খবর পাওয়া গেছে। ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে আরো ৭৮ জন। গতকাল ঢাকার মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পে র‌্যাবের অভিযানে শতাধিক মাদক ব্যবসায়ী আটকের কথা জানানো হয়েছে। অভিযান সংশ্লিষ্ট একাধিক র‌্যাব সদস্য জানিয়েছেন, পুরো তালিকা ফাঁস হয়ে গেছে। গণমাধ্যমে চলে এসেছে তালিকাভুক্তদের নাম পরিচয়। আবার র‌্যাব-পুলিশের সোর্সরাও মাদক ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে জানিয়ে দিয়েছে তালিকা ধরে অভিযানের খবর। সটকে পড়েছে তারা। পুলিশ, ডিবি ও র‌্যাবের বিতর্কিত সদস্য হিসেবে যারা মাদক ব্যবসা ঘনিষ্ঠ, তারাও তালিকা এবং অভিযানের খবর ফাঁস করে দিয়েছে। পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অপরাধী ধরতে র‌্যাব-পুলিশ সোর্সের সহায়তা নিয়ে আসছে। সোর্সরা অপরাধীদেরও পরিচিত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অপরাধীদের মধ্য থেকে সোর্স বানানো হয়। এ অবস্থায় সোর্সরাও অপরাধীদের কাছ থেকে সুযোগ নিয়ে থাকে। আবার যেকোনো অভিযানের পর সোর্সরা সোর্সমানি দাবি করে। তা না পেলে তারা উদ্ধারকৃত মাদক থেকে কিছু (ইয়াবা কিংবা ফেনসিডিল) দাবি করে থাকে। পরে ওইসব ইয়াবা, ফেনসিডিল তারা বাইরে বিক্রি করে থাকে। পুলিশ-র‌্যাব কর্মকর্তাদের দেয়া সোর্সমানিতে তারা সন্তুষ্ট না হলে অপরাধীদের কাছে তথ্য দিয়ে সুযোগ নিয়ে থাকে। যদিও পুলিশের বরাদ্দকৃত সোর্সমানি মাঠ পুলিশ পায় না এমন গুঞ্জনও রয়েছে। সবমিলিয়ে পুলিশের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা চলমান অভিযানে সোর্সদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলেছেন মাঠ পুলিশের কর্মকর্তাদের। অবশ্য মাঠ পুলিশ দাবি করছে, সোর্স ছাড়া অভিযানে গিয়ে সাফল্য মিলছে না, খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে। এদিকে আটককৃতদের ব্যাপারে কোর্ট পুলিশ জানিয়েছে, এ পর্যন্ত বিশেষ অভিযানে আটক করে যাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে তাদের মধ্যে মদ, গাঁজা, ইয়াবা ও ফেনসিডিলের খুচরা বিক্রেতারা রয়েছে। রয়েছে মাদকসেবীও। র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দন্ডপ্রাপ্তদের মধ্যেও খুচরা বিক্রেতা ও মাদকসেবী রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App