×

পুরনো খবর

অনিয়ম ও হয়রানির শেষ নেই শাহবাগে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ মে ২০১৮, ১২:৩৮ পিএম

অনিয়ম ও হয়রানির শেষ নেই শাহবাগে
অবস্থানগত কারণে রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ থানা শাহবাগ। সচিবালয়, হাইকোর্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় ও জাতীয় প্রেসক্লাবের মতো বেশকিছু ‘স্পর্শকাতর’ প্রতিষ্ঠান এ থানার আওতাভুক্ত হওয়ায় সবসময়ই ব্যতিব্যস্ত থাকতে হয় পুলিশ সদস্যদের। আর ব্যস্ততা যত বেশি, ‘ধান্ধার’ সুযোগও তত ব্যাপক। সাধারণ মানুষকে হয়রানির পাশাপাশি মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসোয়ারা নেয়া, আটক করে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া, আসামির কাছ থেকে জব্দকৃত আলামত ফেরত দিতে না চাওয়া, ফুলের দোকান থেকে চাঁদাবাজি, মামলায় জব্দকৃত গাড়ির সরঞ্জাম বিক্রি করাসহ এ থানার পুলিশের বিরুদ্ধে রয়েছে এন্তার অভিযোগ। ২৪ মে দুপুরে থানার সামনে অপেক্ষমাণ এক নারী এই প্রতিবেদককে জানান, তার স্বামীর নাম মিরাজ। খাজা বাবা পরিবহনের চালক। আগের রাতে পুলিশের একটি গাড়িতে ধাক্কা লাগায় বাসসহ তার স্বামীকে আটক করা হয়। এরপর থেকে স্বামীকে ছাড়াতে তদবির করছেন খাজা বাবা পরিবহনের রোড ইনচার্জ তানজিল ও তিনি। সকাল থেকেই পুলিশের সঙ্গে চলছে দেন-দরবার। ... এরপর সন্ধ্যার দিকে ২৩ হাজার ১০০ টাকা দিয়ে মিরাজকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নেন তারা। কিন্তু কোন পুলিশ সদস্য তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন, তার নাম জানাতে পারেননি দুজনের কেউ-ই। ওইদিন রাত ১০টার দিকে থানার গেটের পাশে বটতলায় দুই যুবককে বসে থাকতে দেখা যায়। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একজনের নাম কাউছার ও অন্যজন শাহিন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার দিন চান খাঁর পুল থেকে গ্রেপ্তার হন কাউছার। ৩ মাস জেল খাটেন। গ্রেপ্তারের সময় তার সঙ্গে ছিল ২২ হাজার ৫০০ টাকা দামের একটি মোবাইল ফোন। সেটি ফেরত নিতেই তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শাহরিয়ারের কাছে এসেছেন। কাউছার অভিযোগ করে বলেন, জেল থেকে বের হয়ে এসআই শাহরিয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে প্রথমে মোবাইল ফোনটি দিতে চাননি। পরে এলাকার এক প্রভাবশালীকে দিয়ে ফোন করালে রাজি হন। আজ (২৪ মে) সকালে আসতে বলেছিলেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে এসে সেই সকাল থেকে বসে রয়েছি। এখন রাত ১০টা, অথচ কোনো খোঁজ নেই। ফোন করছি ধরছে না। এভাবে হয়রানির কোনো মানে হয় না। ... পরে অবশ্য মোবাইল ফোনটি ফেরত পান কাউছার। রাত সাড়ে ১০টার দিকে থানার গেটে দুই মহিলাসহ ৭ জনের জটলা দেখা যায়। এসআই আকবরের সঙ্গে কাউকে ছাড়ানোর বিষয়ে শলাপরামর্শ করছিলেন তারা। সেখানকার একজন লোক বোরকা পড়া এক নারীকে বলেন, স্যারের কথা মতো টাকা দিয়ে দে। তা না হলে চালানও হবে না, মামলাও হবে না। কোনো ঝামেলাও নেই। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে কথা না বলে দ্রæত রিকশা নিয়ে চলে যান ওই নারী। এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সারাদেশে মাদকের বিরুদ্ধে একপ্রকার ‘যুদ্ধ’ চললেও শাহবাগ ও টিএসসি এলাকায় অবাধে মাদক বিক্রি করছেন চিহ্নিত ২ মাদক ব্যবসায়ী। নিয়মিত মাসোয়ারা দেয়ায় তাদের দেখেও দেখে না পুলিশ। এরমধ্যে, শাহবাগ মোড়ে প্রকাশ্যে গাঁজা বিক্রি করে লেংড়া বাচ্চু (১৬), আর টিএসসিতে আছে মালতি বুড়ি। এ ছাড়া শাহবাগ থানার পাশে গড়ে ওঠা বিভিন্ন ফুলের দোকানের মালিককে প্রতি মাসে থানা-পুলিশকে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা দিতে হয় বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ফুলের দোকানি বলেন, যাদের দয়ায় আমরা বেঁচে আছি, তাদের মাসে ২ হাজার টাকা দেইÑ এ আর তেমন কি। তবে, ২ হাজারের বেশি কেউ কখনো দাবি করেনি। আমরা এটা মেনেই ব্যবসা করি। অন্যদিকে, থানায় বিভিন্ন মামলায় আটক করা গাড়ির বেশির ভাগেরই গুরুত্বপূর্ণ পার্টস নেই। অভিযোগ রয়েছে, থানার কিছু অসৎ সদস্য নতুন গাড়ি আটকের কিছু দিন পর এগুলো সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিক্রি করে দেন। এসব বিষয়ে শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান ভোরের কাগজকে বলেন, আমার থানা থেকে টাকার বিনিময়ে কাউকে ছাড়ার কোনো নজির নেই। আমি শক্ত হাতে এগুলো প্রতিহত করি। তবে, সুযোগ বুঝে যদি কেউ এ ধরনের কাজ করে থাকে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে অবশ্যই বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোনো কাজে বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়? এ প্রশ্নের উত্তরে ওসি জানান, সারা বাংলাদেশের যত আন্দোলন তা শাহবাগ থানা এলাকায় হয়। এদিকে একটু বেশিই নজর রাখতে হয়। তবে, এর জন্য আমরা এক্সট্রা ফোর্স পাই। ওই দুই মাদক ব্যবসায়ীর বিষয়ে ওসি বলেন, ১৫ দিন আগেও মালতি বুড়িকে গ্রেপ্তার করে মাদক মামলায় চালান করা হয়েছিল। কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে আবার একই কাজ করছে কিনা সেটা তিনি জানেন না। আর লেংড়া বাচ্চুর বিষয়ে আগে জানতেন না। এ ব্যাপারে খোঁজ নেবেন। চাঁদাবাজির বিষয়ে বলেন, আগেই বলেছি শাহবাগ থানায় কোনো ধরনের অনিয়মই গ্রহণযোগ্য নয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App