×

পুরনো খবর

রামপুরায় টাকা ছাড়া কথা শোনে না পুলিশ

Icon

ইমরান রহমান

প্রকাশ: ২৫ মে ২০১৮, ০২:৪৪ পিএম

রামপুরায় টাকা ছাড়া কথা শোনে না পুলিশ
২২ মে, বেলা সাড়ে ১১টা। রাজধানীর রামপুরা থানার সামনে মধ্যবয়স্ক এক নারীর সঙ্গে দাঁড়িয়ে রয়েছেন এক তরুণী। তারা উপস্থিত ২ পুলিশ সদস্যকে কিছু একটা বোঝানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু পুলিশ সদস্যরা তা বুঝতে চাচ্ছেন না। কিছুক্ষণ পর থানার বিপরীত দিকের একটি চায়ের দোকানে গিয়ে বসেন ওই দুই নারী। সেখানেই কথা হয় তাদের সঙ্গে। সাকিলা নামের তরুণীটি জানান, তাদের বাসা বনশ্রী এলাকাতেই। তার ভাই দ্বীন ইসলাম সেহরি খেতে এলাকার মানুষকে জাগিয়ে তোলে। প্রতিদিনের মতো ২১ মে গভীর রাতে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে একই কাজ করছিল। এ সময় তাদের সামনে এসে দাঁড়ায় পুলিশের একটি গাড়ি। পুলিশ দেখে ভয়ে দৌড় দেয় দ্বীন ইসলামের এক বন্ধু। আর এতেই সন্দেহভাজন হিসেবে ধরে আনা হয় দ্বীন ইসলামকে। ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করেছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আটক করার পর আমাদের দেখা করতে দেয়া হচ্ছিল না। এরপর এখানকার সেন্ট্রি জামান ও তরিকুলকে ২০০ টাকা দিলে দেখা করার সুযোগ মেলে। দ্বীন ইসলামের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি সন্দেহভাজন হিসেবে তাকে আটক করেছেন এসআই সিদ্দিকুর রহমান। এরপর তার (এসআই) ফোন নাম্বার নিতেও টাকা দিতে হয় সেন্ট্রিদের। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। পরে থানা থেকে জানানো হয়, যে আটক করেছে ছাড়তে হলে সেই ছাড়বে। এরপর থেকে অপেক্ষা করছি। দেখা করার পর দ্বীন ইসলাম জানায়, তাকে কিছু খেতে দেয়া হয়নি। পরে বাইরে থেকে কেক, মাম পানি, বিস্কুট কিনে দিতে গেলে আবারো ১০০ টাকা নেয়া হয়। অবস্থা এমন যে, টাকা ছাড়া কথাই শোনে না পুলিশ। ভাইকে ছাড়াতে ‘বাজেট’ কত? এ প্রশ্নের উত্তরে সাকিলা বলেন, এসআই সিদ্দিকের সঙ্গে যে কনস্টেবল (নাম জানাতে পারেননি) ছিলেন, তিনি আমাদের জানিয়েছেনÑ আমার ভাইয়ের কোনো দোষ নেই। তারপরও স্যার টাকা চাইতে পারেন, কিন্তু আপনারা রাজি হবেন না। এরপর দুপুর আড়াইটার দিকে এসআই সিদ্দিকুর রহমান থানায় এসে তাদের কাছে চা-খরচা বাবদ কিছু টাকা দাবি করেন। কিন্তু নিজ অবস্থানে অনড় থাকায় টাকা ছাড়াই দ্বীন ইসলামকে ছেড়ে দেয়া হয়। এ বিষয়ে এসআই সিদ্দিকুর রহমানের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব না হলেও রামপুরা থানার ওসি প্রলয় কুমার সাহা ভোরের কাগজকে বলেন, বিষয়টি আমার নলেজে আছে। আমি তো সকাল ১১টার দিকে থানা থেকে যাওয়ার আগেই ওই লোককে ছেড়ে দিতে বলেছি। থানায় পদে পদে টাকা নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো সব কিছু পুরোপুরি ঠিক করতে পারিনি। সুযোগ পেলেই কিছু সদস্য এসব করে। তবে, কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমি বিষয়টি দেখছি। সন্ধ্যার পরে থানায় জিডি করতে আসেন ৪ যুবক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক যুবক বলেন, থানায় জিডি করলে চা খাওয়ার জন্য টাকা নেবে, এ আর এমন কি। আমাদের কাছ থেকেও ২০০ টাকা নিয়েছে। এ বিষয়ে ওসি বলেন, থানায় আগের মতো পরিবেশ এখন আর নেই। আগেই বলেছি, সুযোগ পেলে দুয়েকজন হয়তো নিতে পারে। কিন্তু এর পরিমাণ খুবই কম। যেহেতু অভিযোগ পেলাম এখন আমরা আরো সতর্ক হয়ে যাব। এদিকে, বিভিন্ন সমস্যায় খুঁড়িয়ে চলছে রামপুরা থানা। নেই নিজস্ব ভবন। পার্কিয়ের জায়গার অভাবে মহল্লার ৩টি গলির রাস্তা দখল করে বিভিন্ন মামলায় আটককৃত গাড়ি পার্ক করা হয়েছে। নেই মহিলা ও শিশু ডেস্ক। রয়েছে আবাসিক সমস্যা। অভ্যাগতদেরও বসার তেমন সুব্যবস্থা নেই। থানার ডিউটি অফিসার এসআই শরীফ জানান, আমাদের সমস্যা তুলে ধরার কেউ নেই। এখানে বৃষ্টি হলেই টিনের ছিদ্র দিয়ে পানি পড়ে। গরমের দিনে সূর্যের তাপে টেকাই যায় না। ডিউটি শেষে ব্যারাকে গিয়ে ঘুমানোর ছিট পেতে সমস্যা হয়। অনেক থানা নতুন ভবন পাচ্ছে, এখানেও নতুন ভবন হলে এই সমস্যা থাকবে না। থানা সূত্র জানায়, রাজধানীর পূর্ব রামপুরা, বনশ্রী, মালিবাগ চৌধুরীপাড়া, উলন এলাকা ও মহানগর প্রজেক্ট এলাকা নিয়ে রামপুরা থানা গঠিত। থানাটিতে ১ জন ইন্সপেক্টর ইনচার্জ (ওসি), ২ জন ইন্সপেক্টর, ২২ জন এসআই, ২৮ জন এএসআই ও অর্ধশত কন্সটেবল রয়েছে। থানাটিতে মাদক মামলা বেশি হলেও অফিসার সংকটের কারণে মামলার তদন্ত করতে সমস্যা হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App