×

জাতীয়

ইয়াবার প্রবেশ পথ খোলা রেখেই সাঁড়াশি অভিযান!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ মে ২০১৮, ১১:৫৪ এএম

ইয়াবার প্রবেশ পথ খোলা রেখেই সাঁড়াশি অভিযান!
সারা দেশে সাঁড়াশি অভিযান চললেও ভয়ঙ্কর মাদক ইয়াবার উৎস পথ এখনো সুরক্ষিত। বিশেষ করে কক্সবাজার, টেকনাফ ও উখিয়া পয়েন্টে নেই কোনো বিশেষ অভিযান। ৪ মে শুরু হওয়া র‌্যাব ও পুলিশের অভিযানে এ পর্যন্ত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ৩৬ জন নিহত এবং শতাধিক আটক হয়েছে। নিহত ও আটককৃতরা মাদক ব্যবসায়ী বলে পুলিশ ও র‌্যাব দাবি করছে। জল ও স্থলপথে সীমান্ত পেরিয়ে দেশে ইয়াবা আসে মিয়ানমার থেকে। এই প্রবেশপথগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজিবি ও কোস্ট গার্ডের এখনো নেই কোনো বিশেষ অভিযান। সারা দেশের অভিযানের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্কও নেই। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ইয়াবার উৎস পথ বন্ধ না করা গেলে অভিযানে চ‚ড়ান্ত সাফল্য মিলবে না। এ ছাড়া ইয়াবাচক্রে জড়িত নারী সিন্ডিকেটের সদস্যরা অধরা থাকায় সীমান্ত থেকে ছড়িয়ে পড়ছে এর চালান। কক্সবাজার জেলা সদর থেকে টেকনাফ উপজেলার দূরত্ব প্রায় ৮২ কিলোমিটার। এর উত্তরে উখিয়া উপজেলা, পূর্বে মিয়ানমারের আরাকান প্রদেশ এবং দক্ষিণ ও পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত। মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত পথ ২৭১ কিলোমিটার। যার মধ্যে স্থল সীমান্ত ২০৮ কিলোমিটার এবং নৌ-সীমান্ত ৬৯ কিলোমিটার। নাফ নদীর দৈর্ঘ্য ৬৩ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ১৩৬৪ মিটার। ইয়াবা চোরাকারবারিরা এই নদী ব্যবহার করে আসছে। এ ছাড়া শাহপরীর দ্বীপ, সেন্ট মার্টিন, কক্সবাজারের মহেশখালী পয়েন্ট দিয়েও ইয়াবা আসার খবর রয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল মঙ্গলবার বলেছেন, সরকার যে কোনো ধরনের মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। আক্রান্ত হয়েই প্রতিরোধ করছে পুলিশ ও র‌্যাব। এতে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটছে। প্রতিটি ঘটনায় একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে তদন্ত হয়ে থাকে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, মাদক ব্যবসায়ীদের কোনো দল নেই। নেই রাজনৈতিক পরিচয়। তারা অপরাধী, দেশ ও জাতির শক্র। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কক্সবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির বিরুদ্ধে ইয়াবার নেপথ্যে থাকার অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ব্যাটালিয়ান-২ (টেকনাফ) অধিনায়ক লে. কর্নেল আসাদুজ্জামান চৌধুরী ভোরের কাগজকে জানান, তারা মাদক বা ইয়াবাবিরোধী বিশেষ কোনো অভিযান পরিচালনা করছেন না। এখনো চলছে রুটিনওয়ার্ক। কোস্ট গার্ডের টেকনাফের স্টেশন কমান্ডার লে. কমান্ডার ফয়জুল ইসলাম মন্ডল জানিয়েছেন, মাদক ব্যবসা ও ব্যবসায়ী নিয়ে তারা র‌্যাবের সঙ্গে সমন্বয় সভা করেছেন। করা হয়েছে অভিযানের পরিকল্পনা। সহসাই তারা বিশেষ অভিযান চালাবেন বলে জানান তিনি। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, সারা দেশে যতই অভিযান চালানো হোক না কেন, উৎস পথ বন্ধ করা না গেলে প্রতিকার মিলবে না। বিশেষ করে মিয়ানমার-বাংলাদেশের যেটুকু সীমান্ত পথ রয়েছে তাতে বিজিবি ও কোস্ট গার্ডের মাধ্যমে ইয়াবা প্রবেশ বন্ধ করাতে হবে। এজন্য প্রয়োজন সঠিক নির্দেশনা ও আন্তরিক তদারকি। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, উখিয়ার পালংখালী সীমান্তের রহমতের বিল, ধামনখালী, বালুখালী, ঘুমধুম, তুমরু, জলপাইতলী, বড়ইতলী, করইবনিয়া, হাতিমোড়া, ডেইলপাড়া পয়েন্ট দিয়ে আসছে ইয়াবার চালান। প্রবেশ পয়েন্ট থেকেই হচ্ছে হাতবদল। ১১৫১ জন ডিলারের কাছ থেকে তা চলে যাচ্ছে বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের হাতে। মোটরবাইক ছাড়াও অনেক বিলাসবহুল গাড়িতে করে পাচার হচ্ছে ইয়াবা। কোনো কোনো গাড়ির সামনে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের স্টিকার সাঁটানো থাকে। কুতুপালং, বালুখালী, হাকিম পাড়া, তাজনিমারখোলা, জামতলী শরণার্থী ক্যাম্পে খুচরা ইয়াবা বিক্রির খবর রয়েছে। পুলিশ ও একাধিক সূত্র মতে, কক্সবাজারে ৮টি থানার মধ্যে টেকনাফে ৯১২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী আছেন। এ ছাড়া কক্সবাজার সদর থানায় ৪৩ জন, রামুতে ৩৪ জন, কুতুবদিয়ায় ৪৮ জন, উখিয়ায় ৭ জন, মহেশখালীতে ৩০ জন এবং পেকুয়ায় ২২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী রয়েছেন। টেকনাফে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িতরা হলো চিকুইন্না, আনোয়ার, মুজিব, থাইংখালীর হামিদুল হকের পুত্র হুমায়ুন কবি, রহমতেরবিল গ্রামের ছলুর পুত্র আনোয়ার, জামতলী এলাকার দর্জি ইউনুছ, রহমতেরবিল গ্রামের মৃত কাদের বদ্ধুর পুত্র জয়নাল আবেদীন ভুট্টো, মৃত ফরিদ আলমের পুত্র ইয়াবা সোহেল, রহমতেরবিল এলাকার আহম্মইদ্যার পুত্র শাহজান, ধামনখালী এলাকার ছৈয়দ আলমের পুত্র কালা মনু, আয়াছ মিস্ত্রির পুত্র কামাল উদ্দিন ও বেলাল উদ্দিন, কলিমুল্লা বলির পুত্র কামাল উদ্দিন, ধামনখালী এলাকার আব্দুর রহিমের পুত্র আব্বুইয়া, কালা হাবির ছেলে নজির আহম্মদ, রহমতেরবিল গ্রামের মৃত আশরাফ মিয়ার পুত্র মোস্তাফিজুর রহমান, ধামনখালীর সোলতান আহম্মদের পুত্র আব্দুর রহিম ওরফে কালা ভাই, রহমতেরবিল গ্রামের আনার আলীর পুত্র আবুল মঞ্জুর, ধামনখালী আব্দুল গফুরের পুত্র রফিক উদ্দিন, জামতলী এলাকার মৃত নুর আহম্মদের পুত্র গফুর আলম, ধামনখালী এলাকার মৃত মৌলভী আব্দুস শুক্কুরের পুত্র হেলাল উদ্দিন, রহমতেরবিল এলাকার সোলতান আহম্মদের পুত্র দাড়ি জামাল, বালুখালী এলাকার হাজী আব্দুল মজিদের পুত্র জাহাঙ্গীর আলম, মরিচ্যা বড়বিল এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম, মরিচ্যা পাগলীরবিল সড়কের আলমগীর, টাইপালং গ্রামের দরবেশ আলী সিকদারের পুত্র গিয়াস সিকদার, হিজোলীয়া এলাকার ঠান্ডা মিয়ার পুত্র বাবুল, হিজোলীয়া তেলীপাড়া গ্রামের মোহাম্মদের পুত্র বাবুল মিয়া ও আবছার, রুহুল্লার ডেবা এলাকার বাছা মিয়ার পুত্র জাহাঙ্গীর আলম, একই এলাকার জানে আলমের পুত্র ইফতেখার, মামুনের পুত্র ফোরকান, মরিচ্যার ইয়াবা মোস্তাক। উখিয়ার ইয়াবা ব্যবসায়ীদের মধ্যে রয়েছে রাজাপালং হারেশিয়া খালকাছা পাড়া গ্রামের মো. হোছনের পুত্র কবির আহম্মদ, উখিয়ার টিএনডি লম্বাঘোনা এলাকার মৃত ফকির আহাম্মদের পুত্র মাহমুদুল করিম খোকা, টেকনাফের ওলিয়াবাদ এলাকার আব্দুল শুকুর, আব্দুল আলিম, মারুফ বিন খলিল ওরফে বাবু, বাজারপাড়ার সাবেক পুলিশ ইন্সপেক্টর আবদুর রহামনের ছেলে সায়েদুর রহমান নিপু, নিপুর মা শামছুন্নার, চৌধুরীপাড়ায় পৌর কাউন্সিলর মৌলভী মজিবুর রহমান, মো. শফিক, মো. ফয়সাল, আলির ডেলের আক্তার কামাল ও তার সহোদর শাহেদ কামাল, খানকারপাড়ার কামরুল হাসান রাসেল, শিলবনিয়াপাড়ার হাজী সাইফুল করিম, সাইফুল ইসলাম, আচারবনিয়ার আবুল কালাম, পশ্চিম লেদার ইউপি সদস্য নুরুল হুদা। টেকনাফ শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ীদের মধ্যে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাফর আহমেদ, তার ছেলে মোস্তাক মিয়া, দিদার মিয়া, সদর ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান, ডেলপাড়ার মো. আমিন, তার ভাই নুরুল আমিন, নাজিরপাড়ার ইউপি সদস্য এনামুল হক, মৌলভীপাড়ার একরাম হোসেন, আব্দুর রহমান, নাজিরপাড়ার সৈয়দ মেম্বার, নয়াপাড়ার শামসুল আলম মারকিন, বাহারচরার ইউপি চেয়ারম্যান মৌলভী আজিজ উদ্দিন, শ্যামলাপুরের হাবিবুল্লাহ, কচুবনিয়ার মৌলভী বসির উদ্দিন ওরফে ডাইলা, খানকারপাড়ার মৌলভী বোরহান, পুরান ফোরলান পাড়ার শাহ আলম, নাজির পাড়ার জিয়াউর রহমান, তার ভাই আব্দুর রহমান, মধ্যম জালিয়াপাড়ার মোজাম্মেল হক, দক্ষিণ জালিয়া পাড়ার জোবায়ের হোসেন, কাউন্সিলর কুলালপাড়ার নুরুল বশত ওরফে নুসরাত, পুরান ফোরলান পাড়ার আব্দুল হাকিম ওরফে ডাকাত আব্দুল হাকিম, হাতিয়ারগোনার মো. আব্দুল্লাহ, জালিয়ারপাড়ার জাফর আলম ওরফে টিটি জাফর, গোদারবিলের আলী আহমেদ চেয়ারম্যানের ছেলে আব্দুর রহমান, তার পুত্র জিয়াউর রহমান, গোলারবিলের চেয়ারম্যান নুরুল আলম, সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীর দুই ছেলে মো. রাশেদ, মাহবুব মোর্শেদ, বাজার পাড়ার মো. শাহ মালু, নির্মল ধর, পশ্চিম লেদার নুরুল কবির, বড় হাবিবপাড়ার ইউসুফ জালাল বাহাদুর, নাইটেংপাড়ার ইউনুস, উলুমচামুরীর আব্দুল হামিদ, পশ্চিম শিকদার পাড়ার সৈয়দ আহমদ ছৈয়তু, রঙ্গিখালীর হেলাল আহমেদ, জাদিমুরার হাসান আব্দুল্লাহ, উত্তর জালিয়া পাড়ার মোস্তাক আহমেদ ওরফে মুছু, কুলালপাড়ার মৃত রশিদ চেয়ারম্যানে তিন পুত্র মোশাররফ হোসেন চৌধুরী, দেলোয়ার হোসেন টিটু, আলমগীর হোসেন, শাবরং ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হামিদুর রহমান, নয়াপাড়ার রোহিঙ্গা শিবিরের নেতা মো. আলম ওরফে মাত আলম, মঠপাড়ার আব্দুল জব্বার ও তার ভাই মো. আফসার, টিএনডি এলাকার বেবীসহ অনেকে। অভিযানের মধ্যেও এরা অধরা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App